হেলেনা জাহাঙ্গীর
চাল নিয়ে চক্রান্ত চলছে। একটি সিন্ডিকেট চাল মজুদ করছে। পরিকল্পিতভাবে কৃত্রিম সংকট তৈরি করা হচ্ছে। এর প্রভাব পড়ছে চালের বাজারে। মিলার, পাইকার ও খুচরা ব্যবসায়ী নিজ অবস্থান থেকে অতিমাত্রায় মুনাফার চেষ্টা করছেন। ফলে দুই মাসের ব্যবধানে মণপ্রতি মোটা চালের দাম বেড়েছে প্রায় পাঁচশ টাকা। সরু চালের দাম বেড়েছে তিনশ টাকা।
রাজধানীর খুচরা ও পাইকারি বাজারে চালের দাম বাড়ছে। বিশেষ করে গত এক মাসে অন্য চালের তুলনায় মোটা চালের দাম আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় অসুবিধায় পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষজন। রাজধানীর কয়েকটি পাইকারি ও খুচরা বাজার ঘুরে দেখা যায়, গুটি স্বর্ণা, পাড়ি, বিআর আঠাশ, হাচকি নাজিরসহ মোটা চালের ৫০ কেজির বস্তা কিনতে ভোক্তাদের ২ হাজার থেকে ২ হাজার ২০০ টাকা পর্যন্ত গুনতে হচ্ছে। মাস দুয়েক আগেও যা ১২শ থেকে ১৫শ টাকায় পাওয়া যেত।
বাজারে রোজার ঈদের পর থেকে মোটা চালের দাম কেজিতে ১০ টাকা থেকে ১৫ টাকা করে বেড়েছে। এই পরিস্থিতিতে বাজারে মোটা চাল ও চিকন চালের দামের ব্যবধান বর্তমানে খুবই সামান্য। বাজারে চিকন চালের মধ্যে মিনিকেট চালের ৫০ কেজির বস্তা পাইকারি ২২শ থেকে ২৪শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। নাজিরশাইল (ভালো) ২৩শ টাকা এবং জিরা নাজির ৫০ কেজির বস্তা ২২শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
আমাদের প্রধান খাবার ভাত। আর দাম কম হওয়ার কারণে তারা মূলত মোটা চালই কিনে থাকেন। কিন্তু মোটা চালের দাম অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেয়ে এখন প্রায় চিকন চালের কাছাকাছি। মোটা চালের দাম অবিলম্বে সহনীয় মাত্রায় নামিয়ে আনতে সরকারের প্রতি জোর দাবি জানান তারা। চালের দাম বৃদ্ধির ব্যাপারে চাল ব্যবসায়ীদের দাবি, সরকারের কিছু নীতির সুযোগ গ্রহণ করে চাতাল ও মিল মালিকদের স্বেচ্ছাচারিতার কারণে চালের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে করে লাভ কম হওয়ায় তাদের ব্যবসাতেও ক্ষতি হচ্ছে। অচিরেই চালের দাম বৃদ্ধির প্রবণতা বন্ধ করতে সরকারের প্রতি পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানান তারা।
এবার মোটা চালের দাম সবচেয়ে বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। ২২ টাকার চাল ৪০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। কেজিপ্রতি এক টাকাও লাভ হচ্ছে না। যারা মোটা চাল কিনত তারা অধিকাংশই চিকন চালের সঙ্গে ব্যবধান কম হওয়ায় বাধ্য হয়ে চিকন চাল কিনছেন। রাজধানীতে মোটা চালের সরবরাহ কম, আর বন্যার সময় সরকার মোটা চাল সংগ্রহ করায় এখন বাজারে চালের সংকট দেখা দিয়েছে। মিল মালিকরা চাল মজুদ করার কারণেও মোটা চালের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে সরকার কার্যকরী পদক্ষেপ নিলে চালের দাম কমতে পারে। তা না হলে আমন ধান ওঠার আগে চালের দাম আর কমবে না। সরকারের উচিত এ বিষয়গুলো মাথায় রেখে কাজ করা।
পাইকারি ব্যবসায়ীদের মতে, মাত্র ১২ থেকে ১৫ মিল মালিকের কাছে চালের বাজার জিম্মি হয়ে পড়েছে। পর্যাপ্ত মজুদ থাকার পরও তারা চাল নিয়ে কারসাজি করছেন। ইচ্ছেমতো চালের সরবরাহ দিচ্ছেন। তারা মজুদ থেকে বাজারজাত করছেন কম। দাম নিয়ন্ত্রণ করছেন। এর ফলে বাজার স্থির থাকছে না। অজুহাত হিসেবে ব্যবসায়ীরা দোষ চাপাচ্ছেন চলতি মৌসুমে সরকারের অভ্যন্তরীণ ধান-চাল সংগ্রহের নীতিকে। সরকার বেশি দামে বাজার থেকে ধান কিনছে বলে মিল মালিকরা অভিযোগ করছেন। তাদের মতে, সরকারের সংগ্রহ মূল্যের কারণে বাজারে ধানের দাম বেশি।
আমরা চাল নিয়ে অসাধু সিন্ডিকেটের কারসাজির তীব্র নিন্দা জানাই। খাদ্য মন্ত্রণালয়কে তৎপর হতে হবে অতি দ্রুত। যারা কৃত্রিম সংকট তৈরি করছে, তাদের চিহ্নিত করে নিতে হবে ব্যবস্থা। অন্যদিকে দুস্থ পরিবারগুলোর জন্য ১০ টাকা কেজিতে চাল বিক্রির প্রকল্পটিকে দুর্নীতিমুক্ত করার সর্বাত্মক চেষ্টা নিতে হবে। যারা এই দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে দলীয় ও আইনগত উভয় ব্যবস্থা নিতে হবে।
ষ লেখক : চেয়ারম্যান, জয়যাত্রা ফাউন্ডেশন
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন