বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অভ্যন্তরীণ

পর্যটক আকর্ষণে এক নতুন দিগন্ত সোনারচর

মো. জাকির হোসেন, পটুয়াখালী থেকে | প্রকাশের সময় : ২৭ ডিসেম্বর, ২০২১, ১২:০৩ এএম

বাংলাদেশের সর্বদক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের বুকে জেগে ওঠা এক দ্বীপ সোনার চর। এ যেন সবুজের সমারোহে প্রকৃতির অপার সম্ভাবনায়ময় এক দ্বীপ। বনবিভাগের সংরক্ষিত এই বনাঞ্চলে আছে বিভিন্ন প্রজাতির গাছপালা সহ পশু পাখিদের অভয়াশ্রম। বনের পাশেই রয়েছে বালুকাময় সাগর সৈকত। পর্যটনের অপার এই সম্ভাবনাকে এবার কাজে লাগাতে চায় সরকার। সোনারচর ও এর আশপাশের চরগুলোকে নিয়ে বিশেষ পর্যটন এলাকা গড়ে তুলতে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আর এ ক্ষেত্রে ইকো ট্যুরিজমকে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।
দুই পাশে সারি সারি বিভিন্ন প্রজাতির গাছ গাছালি এর মধ্য দিয়ে বয়ে গেছে ছোট বড় খাল। সব মিলিয়ে প্রকৃতির এক অপরুপ সৃষ্টি। এক দেখাতেই সবাইকে মুগ্ধ করে এই বন। নামের সাথে যার বাস্তাবতা শতভাগ মিল খুঁজে পাওয়া যায়। সোনারচরে রয়েছে গোলপাতা, বাবলা, কেওড়া, সুন্দরী, ছৌলা, করমচা, হেতাল, নোনাঝাউসহ অসংখ্য প্রজাতির গাছপালা। রয়েছে চিত্রা হরিণ, মায়া হরিণ, শুকর, বনবিড়াল, গুইশাপ, চামচিকাসহ বিভিন্ন বিলুপ্ত প্রায় এবং বিরল সব প্রাণীর উপস্থিতি। আর সোনার চরেই রয়েছে দেশি বিদেশি জানা অজানা পাখিদের অভয়ারন্য। নব্বইয়ের দশকে বন বিভাগ সোনারচরে হরিন ছাড়া শুরু করে। বর্তমানে ২ শতাধিক হরিণ রয়েছে বলে জানান চরমোন্তাজের রেনজ অফিসার নয়ন মিস্ত্রী। তিনি অরোও জানান, সোনার চরকে ইকোটুরিজমের প্রকল্পের আওতায় এনে সরকারের একটি বড় ধরনের প্রকল্প বর্তমানে সম্ভ্যাবতা যাচাইপর্যায় রয়েছে। যার মধ্যে বিচ্ছিন্ন চর সোনারচরে পর্যটকদের আকর্ষণ করার লক্ষে থাকার জন্য রেস্ট হাউজ, ওয়াচটাওয়ার, গোলঘর ছাতাসহ বিভিন্ন দৃষ্টিনন্দন বিষয়গুলি অর্ন্তভুক্ত থাকবে।
৫০০৫.৪৩ একর আয়তনের এই সংরক্ষিত বনাঞ্চলের উত্তর এবং পশ্চিমে বুড়া গৌড়াঙ্গ নদী এবং দক্ষিন ও পূর্ব পাশে আছে বঙ্গোপসাগর। আর দক্ষিণ পূর্ব দিকের ৫ কিলোমিটারের দীর্ঘ সাগর সৈকতটি ক্রমাগত: ভাঙছে।
রাঙ্গাবালী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাশফাকুর রহমান জানান, সোনারচরের পাশেই রয়েছে চরকলাগাছিয়া, চরতুফানিয়া এবং জাহাজমারার চর এগুলোকে কিভাবে একটি সমৃদ্ধ পর্যটনের আওতায় নিয়ে আশা যায় সে বিষয়ে উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
তবে সাম্প্রতিক সময়ে সোনারচরের পূর্বদিকের সৈকত লাগোয়া এলাকার বেশ কিছু গাছ মারা গেছে, যার ফলে এখানে আগত পর্যটকরা হতাশা প্রকাশ করছেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে পটুয়াখালী উপক‚লীয় বন বিভাগ এর বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট, সৈকত লাগোয়া গাছের গোড়ায় অধিক পরিমান বালি জমায় গাছ গুলো মারা গেছে। তবে সোনার চরের পূর্বদিকে জেগে উঠা নতুন চরে ম্যনগ্রোভ ফরেস্ট সৃজন করার পাশাপাশি এখানে সমৃদ্ধ জীববৈচিত্র সম্পর্কে জানতে বিশেষ একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হচ্ছে।
পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন জানান, সোনারচরসহ এর আশ পাশের দ্বীপ চর নিয়ে বিশেষ পর্যটন এলাকা ঘোষনার জন্য বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয় উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। সোনারচরসহ এই এলাকার দ্বীপ চরগুলো পর্যটন স্পট হিসেবে পরিনত হলে কুয়াকাটাও অনকেটা সমৃদ্ধ হবে। এ জন্য রাঙ্গাবালী উপজেলার সাথে ফেরি সার্ভিস চালু করার কথাও জানান জেলা প্রশাসক।
২০১১ সালের ১৪ ডিসেম্বর সোনার চরকে একটি সংরক্ষিত বনাঞ্চল হিসেবে ঘোষণা করা হয়। বর্তমানে এই চরে কোন মানুষের বসতি না থকলেও বনের নিরাপত্তার জন্য বন বিভাগের একটি অফিস রয়েছে।
সোনারচরকে ঘিরে পর্যটন শিল্পে গড়ে উঠতে পারে এক নতুন দিগন্ত তবে এর জন্য প্রয়োজন সরকারের সঠিক পরিকল্পনা বলে পযর্টন শিল্পে জড়িত বিশেষজ্ঞগণ মনে করেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন