শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অভ্যন্তরীণ

ফরিদপুরে কাঁচাবাজারে আগুন শৈত্য প্রবাহের দোহাই

আনোয়ার জাহিদ, ফরিদপুর থেকে | প্রকাশের সময় : ২৭ ডিসেম্বর, ২০২১, ১২:০২ এএম

ফরিদপুর জেলা সদরের ৭/৮টি কাঁচাবাজারের তরিতরকারিসহ নিত্যপন্যের সব কিছুই চড়া মূল্য। কেউ কেউ বলছেন কাঁচাবাজারের আগুন। কুয়াশা ও শৈত্য প্রবাহের দোহাই দিয়ে সব কিছুতেই হাঁকা হচ্ছে চড়া দাম।
কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ নেই, নেই পরিবহন সমস্যা। তারপরও কাঁচাবাজারের দামে আগুন। সরবারাহের অপ্রতুলতাও নেই। তারপরও চারদিকে একটাই নাই। তারপরও বাজারে হঠাৎ করেই বেড়ে গেছে সবজির মূল্য। ভরা মৌসুমে হঠাৎ করে দাম বেড়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন ক্রেতারা। প্রায় দুইগুণ বেশি দামে কিনতে হচ্ছে সব ধরনের সবজি। সেই সঙ্গে বেড়েছে প্রায় সব ধরনের চালের দাম। যা মরার ওপর খাড়ার ঘাঁয়ের মতোই হয়ে উঠেছে।
সবজি আর চালের বাজারে যখন চড়া দামের হাঁকডাক, তখন একটু হলেও স্বস্তির বাতাস বইছে ভোজ্য তেলের বাজারে। সরবরাহ ঠিক থাকায় মাছের দাম স্থিতিশীল রয়েছে।
শীতের শুরু থেকেই ফরিদপুরের সবজি বাজারে একটু একটু করেই দাম কমে আসছিলো সব ধরনের সবজির। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের কারণে থমকে যায় দাম কমার গতি। সাথে যোগ হয়েছে ঘনকুয়াশা ও শৈত্য প্রবাহ। প্রায় দুই সপ্তাহ একই দাম স্থির থাকে বাজারে। কিন্তু কোনো কারণ ছাড়াই গত ৪-৫ দিনে সব সবজির দাম কেজি প্রতি ১৫ থেকে ২০ টাকা বেড়ে গেছে। সবচেয়ে দাম বেড়েছে লাউয়ের। ৩০ টাকার একটি লাউ এখন কিনতে হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকায়।
সরেজমিনে হাজী শরীয়তুল্লা বাজার, টেপাখোলাবাজার, লেকপাড়বাজার, সিএন্ডবিঘাট বাজার, বড়বাজার, হেলিপোর্টবাজার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বর্তমানে এক কেজি ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা, বিটকপি ৩৫ থেকে ৪০ টাকা, বাঁধাকপি ৩০ টাকা, মূলা ২০ টাকা, সীম ৪০ টাকা, টমেটো ৫০ থেকে ৭০ টাকা, পেঁয়াজের কোলি ২০ টাকা, লালশাক ৩০ টাকা ও লাউশাক ৫০ টাকা। এসব সবজি গত দুই সপ্তাহ আগেও প্রতি কেজি ১০ থেকে ২০ টাকা কমে পাওয়া গেছে। চরআদমপুর বাজারের সবজি বিক্রেতা মামুন, শামীম, মোহমদ, লায়লা জানান, বাজারে সবজির সরবরাহে কোনো ঘাটতি নেই। কিন্তু কেন যে দাম বেড়েছে তা বলতে পারছে না কেউ।
এই বাজারে প্রতিদিন বাজার করতে আসা ক্রেতারা বলছেন, হঠাৎ করেই সবজির দাম বেড়েছে। কিন্তু কেন বেড়েছে তা জানতে চাইলে বিক্রেতারা কোনো উত্তর দিতে পারছে না।
এদিকে ফরিদপুর, সদরপুর, নগরকান্দা, সালথা, ভাঙ্গা, চরভদ্রাসন, মধুখালী উপজেলার ১০/১২টি চালের পাইকারি বাজার খবর নিয়ে জানা গেছে, মিনিকেট সরু ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। একইভাবে মাঝারি মিনিকেট চাল ৫৫ টাকা, লোকাল ২৮ ইরি সেদ্ধ ৪৭ টাকা, বাঁশমতি ৬০ টাকা ও নাজিরশাল ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা গত এক সপ্তাহ আগে ২-৩ টাকা কম ছিল।
ফরিদপুর শহরের কাঁচাবাজারের চাল ব্যবসায়ী করম মিয়া ইনকিলাবকে জানান, গত দেড় মাস ধরে ভারতীয় চালের আমদানি বন্ধ রয়েছে। বাজারে যা আছে তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। গত এক সপ্তাহ ধরে চালের বাজার গরম। চালের বাজার দর কমার কোনো লক্ষণ নেই।
ভাঙ্গা বাজারের ব্যবসায়ী কামরুল ইসলাম জানান, হঠাৎ করে চালের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। চিকন চালের মৌসুম শেষ। বাজারে চালের ঘাটতি রয়েছে। ভারতীয় চালের আমদানি হলে বাজারে দর পড়তে পারে। তাছাড়া আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই নতুন ধানের আগমন ঘটলে বাজার একটু নরম হতে পারে।
ফরিদপুর বড় বাজারের চাল ব্যবসায়ী মোসলেম মিয়া, সুশান্ত পাল ইনকিলাবকে জানান, কিছু কিছু চালের দর বেড়েছে। মিল মালিকরা চালের দাম বাড়িয়েছে। অনেক কৃষক এখনও ধান কাটতে পারেনি। কয়েকদিন আগের বৃষ্টির কারণে ক্ষেতে পানি জমে বহু ফসল নষ্ট হয়েছে এখন আবার শৈত্য প্রবাহ। মিল মালিকরা এখনও চাল তেমন উৎপাদনে যেতে পারেনি। দর আরও বাড়তে পারে। দাম কমাতে ভারতীয় চাল আমদানির ওপর গুরুত্ব দেন তিনি।
ফরিদপুর জেলা চালকল মিল মালিক সমিতির সাবেক সভাপতি ব্যবসায়ী মোসলেম বিশ্বাস ইনকিলাবকে জানান, গেল দু’বছরের তুলনায় এবার ধানের দাম বেশি। ব্যাপারি থেকে মিলের সংখ্যাও বেশি। যা পাওয়া যায় মিলাররা অধিক দরে ক্রয় করছেন। এ জন্যই অনেকটা সমস্যা পড়তে হয়েছে ক্রেতাদের।
তবে এই সমস্যা বেশী দিন থাকবে না মর্মে ইনকিলাবকে জানান, বর্তমান চাল কল মালিক সমিতির সভাপতি বিল্পব কুমার।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন