শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ০৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৮ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

ঘুরে দাঁড়িয়েছে দুবলার চরের জেলেপল্লি

ডিএম রেজা, খুলনা থেকে | প্রকাশের সময় : ২৭ ডিসেম্বর, ২০২১, ১২:০২ এএম

বঙ্গোপসাগরের কোলে সুন্দরবন অঞ্চলের দুবলাসহ আশপাশের ১৩টি চরে শুঁটকি মৌসুম শুরু হয়েছিল এ বছরের ২৬ অক্টোবর। মৌসুম শুরু হওয়ার পর, ডিসেম্বরের শুরুতে ঘুর্ণিঝড় জাওয়াদের প্রভাবে প্রবল বর্ষণে তলিয়ে যায় সমগ্র শুঁটকিপল্লী। পানিতে ভেসে যায় প্রায় দুই কোটি টাকার মাছ। অন্যদিকে শুঁটকি করার প্রক্রিয়ায় থাকা আরো প্রায় অর্ধ কোটি টাকার মাছ নষ্ট হয়ে যায়। মাছ ধরাও বন্ধ ছিল ৪ থেকে ৫ দিন। সব মিলিয়ে শুরুতেই বড় একটি ধাক্কা খায় জেলে পল্লীর প্রায় ২০ হাজার মানুষ। জাওয়াদের প্রাথমিক ক্ষতি কাটিয়ে আবারও ঘুরে দাঁড়িয়েছে দুবলার চরের জেলে-বহদ্দারেরা। নতুন উদ্যমে রাতদিন চলছে সাগরে মাছ ধরা ও শুঁটকি তৈরির কাজ।
সূত্র জানায়, বঙ্গোপসাগরের কোলে দুবলার চরসহ আশপাশের চরগুলোতে ২৬ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া শুঁটকি মৌসুম আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত চলবে। এই পাঁচ মাস বঙ্গোপসাগরের দুবলা, মেহের আলীর, আলোরকোল, অফিসকিল্লা, মাঝেরকিল্লা, শেলারচর, নারকেল বাড়িয়া, ছোট আমবাড়িয়া, বড় আমবাড়িয়া, মানিকখালী, কবরখালী, চাপড়াখালী, কোকিলমনি ও হলদাখালীচরে জেলেরা মাছ ধরার পর শুঁটকি তৈরির কাজ করছেন। চরগুলোর অভ্যন্তরে ১৩টি মৎস্য আহরণ, প্রক্রিয়াকরণ ও বাজারজাতকরণ কেন্দ্র নিয়ে গঠিত দুবলার জেলেপল্লী। সমুদ্রের লোনাপানি থেকে লইট্টা, ছুরি, খলিসা, ভেদা, চিংড়ি, রুপচাঁদাসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ আহরণ করেন তারা। এরপর টানা তিন থেকে চারদিন সেই কাঁচা মাছ রোদে শুকিয়ে প্রায় একশ’ ধরণের শুটকি তৈরি করেন তারা। এখানকার শুঁটকি দেশের গন্ডি পেরিয়ে যায় বিদেশে।
এবার শুঁটকি মৌসুমে মোংলা, রামপাল, খুলনা, সাতক্ষীরা, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, চট্টগ্রামসহ সুন্দরবন উপক‚লের প্রায় ২০ হাজার জেলে সাগরপাড়ে অস্থায়ী বসতি গড়ে তুলেছে। ছোট ছোট গোলপাতার ঘর তোলা হয়েছে। রান্না, খাওয়াসহ সব কাজ তাদের চলে এসব ঘরে ও সাগরে নৌকার মধ্যে। এখানেই পাঁচ মাস তারা থাকবেন।
দুবলার চরের মাঝেরকিল্লা থেকে জাহিদ বহদ্দার ও শরণখোলার জেলে সরদার ইউনুস আলী ফকির জানান, জাওয়াদের প্রভাবে প্রচন্ড ঝড়ো হাওয়া ও বৃষ্টির কারণে প্রায় ৫ দিন সাগরে মাছ ধরা বন্ধ ছিল। পুরো চর প্রায় ৩ ফুট পানিতে তলিয়ে যায়। যেসব মাছ শুকানোর জন্য রাখা হয়েছিল, বৃষ্টিতে সব ভেসে যায়। যা অবশিষ্ট ছিল, তাও ভিজে নষ্ট হয়ে যায়। প্রায় আড়াই কোটি টাকার ক্ষতি হয় আমাদের।
দুবলা ফিসারম্যান গ্রুপের সভাপতি মো. কামাল উদ্দিন আহমেদ জানান, জাওয়াদের ক্ষয়ক্ষতি পুষিয়ে নিতে চরগুলোতে রাতদিন কাজ চলছে। ইনশাল্লাহ আগামী ৩ মাসের মধ্যে আমরা অনেকটাই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারব।
পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের দুবলা ফরেস্ট টহল ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা প্রহলাদ চন্দ্র রায় জানান, চরগুলোর জেলেদের নিরাপত্তা দিতে আমরা কাজ করছি। জেলেরা যাতে দিন-রাত সব সময় নির্বিঘেœ মাছ আহরণ করতে পারে, তার জন্য টহল জোরদার করা হয়েছে।
পূর্ব সুন্দরবনের বিভাগীয় বনকর্মকর্তা (ডিএফও) মুহাম্মদ বেলায়েত হোসেন বলেন, এবছর জেলেদের ৯৮৫টি ঘর এবং ৬৬টি ডিপো তৈরির অনুমোদন দেয়া হয়েছে। জাওয়াদের ক্ষতি কাটিয়ে এখন তারা আবার ঘুরে দাঁড়াচ্ছেন। শুটকি মাছ থেকে এবার তিন কোটি ২২ লাখ টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে। গত মৌসুমে শুঁটকি আহরিত হয়েছিল ৪৫ হাজার মেট্রিক টন এবং তা থেকে রাজস্ব আদায় হয়েছে তিন কোটি ২২ লাখ টাকা। যদিও সে বছর লক্ষ্যমাত্রা ছিল তিন কোটি ২০ লাখ টাকা। দুই লাখ টাকা বেশি রাজস্ব আদায় হওয়ায় এবছর তা লক্ষ্য আদায় ধরে তিন কোটি ২২ লাখ টাকা আদায় ঠিক করা হয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন