রতন বৈষ্ণব ত্রিপুরা, রামগড় (খাগড়াছড়ি) থেকে
খাগড়াছড়ির পার্বত্য জেলা সদর হতে ৫০ কি.মি. উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত ১৯২০ সালের প্রাচীন মহকুমা শহর রামগড় উপজেলা সদর। উপজেলা প্রশাসনকেন্দ্রিক ইংরেজি ডব্লিও বর্ণমালার আকৃতিতে ২৫০ মিটার লম্বা রামগড় পর্যটন লেক অযতœ-অবহেলায় দশ বছর পেরিয়ে এগারতে পদার্পণ করছে। ২০০৬ সালে প্রতিষ্ঠার পর রামগড় লেকটি এই উপজেলার প্রথম পর্যটন স্পট এবং ঝুলন্ত সেতুটি জেলার প্রথম ও দৃষ্টিনন্দন সেতু হিসেবে ব্যাপক পরিচিতি অর্জন করে। কিন্তু লেকটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে সংশ্লিষ্ট কৃর্তপক্ষের অযতœ-অবহেলায় স্পিড বোর্ড, লাইটিং, বাহারি ফুলের বাগান, বাউন্ডারি ফুল, ঝুলন্ত সেতুর রিং ও খসে পড়েছে রং, লেকের সেতু, সিঁড়ি ও বাউন্ডারি রিলিং স্টিক, লেকের ভেতরের রাস্তাসহ বহু স্থাপনা যেমন ধ্বংস হচ্ছে তেমনি চুরিও হচ্ছে বর্তমানে দিনে-রাতে হরিলুট চলছে লেকের মাছ চুরি। এমন অযতœ-অবহেলায় কমছে লেকের সৌন্দর্য পরিণত হয়েছে গোচারণ ভূমিতে আর বখাটে ও মাদক সেবীদের আড্ডাখানায়। এদিকে সংশ্লিষ্ট কৃর্তপক্ষের যথাযথ উদ্যোগের অভাবে অপার সম্ভাবনাময় রামগড়ের পর্যটন খাত চলে যাচ্ছে ধ্বংসের দিকে। এতে যেমন দর্শনার্থীদের আগমন কমে যাচ্ছে তেমনি স্থানীয় পর্যটনপ্রেমীদের ক্ষোভও দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে, হারাতে হচ্ছে রাজস্ব আয়। প্রাকৃতিক পরিবেশবান্ধব এই মনোরম লেকে প্রবেশ দ্বারে ১নং গেইটে ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতি বিজড়িত স্মৃতিভাস্কর্য এবং ডান পাশে রয়েছে ১৯৫২ ভাষা আন্দোলনের স্মৃতি বিজড়িত ভাষা শহীদদের স্মরণে পার্বত্যাঞ্চলে প্রথম শহীদ মিনার। রামগড় লেকটি অত্যন্ত আকর্ষনীয় ও দৃষ্টিনন্দন। চারপাশে রেলিং ঘেরা এবং বাহারি সাজে সজ্জিত। লেকের উভয় পাশে রয়েছে যানবাহন চলাচলের রাস্তা ও মাঝখানে একটি সুদৃশ্য ঝুলন্ত সেতু। লেকের দুই তীরে রয়েছে আগত দর্শকদের বিশ্রামের জন্য ১২টি শেড। লেকের মাঝখানে জুলন্ত সেতুটি কেবল জনসাধারণের চলাচলের জন্য সর্বদা উন্মুক্ত থাকে তবে যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ। পাশে রয়েছে একটি দ্বিতল ভবন পিকনিক স্পট, যা রেস্টহাউস হিসেবে ব্যবহৃত হয়। লেকের পাশে উপজেলা প্রশাসন ভবনের পেছনে রয়েছে ১৭৯৫ সালের ২৯শে জুন স্বল্প পরিসরে মাত্র ৪৪৮ জন সদস্য নিয়ে যাত্রা শুরু করা রামগড় লোকাল ব্যাটালিয়ন, যা বিভিন্ন নাম ও ধাপ অতিক্রম করে বর্তমানে বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিবি)র উৎপত্তিস্থল স্মৃতি বিজড়িত স্মৃতিস্তম্ভ। যা বিশ্ব দরবারে আজীবন রামগড়ের ইতিহাসকে স্মৃৃতি বিজড়িত করে রাখবে। এই স্মৃতিময় স্তম্ভটি ৬ই জুন ২০০৫ইং সালে স্থাপন করা হয়। রামগড় সদরে প্রবেশদ্বারে রামগড় সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সম্মুখে রয়েছে বিশালাকার স্বাধীনতা স্তম্ভ, যা রামগড় সদরে প্রবেশের পূর্বে স্বাধীনতার বার্তা বহন করে এবং আপনাকে স্বাধীনতার মোহনায় স্বাগত জানায়। জানা যায়, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের কয়েক দফা অর্থায়নে লেকটি সম্পন্ন করা হলে পরবর্তীতে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের তৎকালীন চেয়ারম্যান ও সাবেক খাগড়াছড়ি সংসদ সদস্য ওয়াদুদ ভূঁইয়া ২০০৬ সালের ২২ অক্টোবর এটি উদ্বোধন করেন। প্রতিষ্ঠার পর থেকে লেকটি কখনো উপজেলা ভূমি আবার কখনো পৌরসভা অধীনস্থ হতে থাকে বর্তমানে এটি উপজেলা ভূমির অধীনস্থ রয়েছে। পর্যটক ও স্থানীয় পর্যটনপ্রেমীদের অভিযোগ এমন দোটানায় লেকটি চরমভাবে উন্নয়নবঞ্চিত হচ্ছে। এদিকে বর্তমান সরকারের আমলে লেকটির কিছু অংশ সংস্কার ও নতুন স্থাপনাযুক্ত হলেও নতুন পুরনো স্থাপনা রক্ষণাবেক্ষণে যথাযথ উদ্যোগ বা নজর নেই সংশ্লিষ্টদের। তাছাড়া রামগড় উপজেলায় প্রবেশের পূর্বে রয়েছে মনোরম পরিবেশে গড়া রামগড় চা বাগান, পাহাড়াঞ্চল কৃষি গবেষণা কেন্দ্র (সহেল বাগান), পাইলট বাগান, কলসীর মুখ (লাচারীপাড়া) ও ১৯২০ সালের মহকুমা শহরের এসডিও ডাকবাংলো, কাজ শুরু করার অপেক্ষায় বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সেতু-১। সব মিলিয়ে উপজেলাটি হতে পারে পার্বত্যাঞ্চলের একটি আকর্ষণীয় পর্যটনময় উপজেলা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন