দেশের বৃহত্তম আলু উৎপাদনকারী জেলা হিসেবে পরিচিত মুন্সীগঞ্জ। এই জেলার প্রধান অর্থকরী ফসল আলু। বর্তমানে আলুর বাজার মূল্য বেশি হওয়ায় কৃষক আলুচাষে আবার আগ্রহী হয়ে উঠেছে। লৌহজং উপজেলায় চলতি মৌসুমে ৪ হাজার ৫শ’ হেক্টর জমিতে আলু আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিকটন। এদিকে প্রান্তিক চাষিরা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে খুব চিন্তিত, আবাদ শুরু হলেও বর্ষার পানি না নামায় সময়মত আলু চাষ করতে পারছেনা। উঁচু জমিতে আগাম আলুচাষ স্বল্প পরিসরে শুরু হলেও জমিতে বর্ষার পানি থাকায় স্বাভাবিক চাষ বিলম্বিত হচ্ছে।
লৌহজং উপজেলায় হাজার হাজার হেক্টর জমিতে বর্ষার পানি আটকে আছে। কোন ভাবেই জমির পানি যেন নিস্কাশন হচ্ছেই না। এতে করে আলু চাষে কৃষকরা বিলম্বনায় পড়েছেন। এতে ওইসব জমিতে ফসল উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। চাষিদের অভিযোগ জমির পাশের খালগুলো দখল আর বালু জমে খালগুলো সরু হয়ে গেছে। এতে পানি নিষ্কাশনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হওয়ায় ফসলি জমিতে জমে আছে বর্ষার পানি। তাই এ বছর আলু চাষের বিড়ম্বনা ও আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়বেন বলে আশঙ্কা তাদের।
প্রান্তিক কৃষকরা জানান, বর্ষার পানি জমি থেকে দেরিতে নামায় আলু চাষ দেরিতে শুরু হবে। এতে আলু ওঠানোর সময় বৃষ্টির মৌসুম চলে আসবে। তাতে বৃষ্টিতে আলু নষ্ট হবার শঙ্কা থাকবে। ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে আলু আবাদ করছেন তারা তাই এবছর আর্থিক ক্ষতির মুখে পরবেন বলে মনে করছেন প্রান্তিক কৃষকরা। ভুক্তভোগীরা অবিলম্বে এ ব্যাপারে প্রতিকার পেতে সংশ্লিষ্টদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
গাঁওদিয়া ইউনিয়নের হাড়িদিয়া গ্রামের আলু চাষি মো. সজিব হোসেন জানান, এই বিলে বর্ষার পানি নিস্কাশনের একটিমাত্র খাল তাও আবার মাটি ভরাট করে দখল হয়ে গেছে। খালটি পুনরায় খনন করলে পানি নিস্কাশনে সমস্যা আর থাকবে না।
আলুচাষি জাহিদ বেপারী জানান, বর্ষার পানি আটকে থাকার কারণে আলুচাষে এক মাস লামী হয়ে যাবে।
উপজেলা কৃষি অফিসার মো. শরীফুল ইসলাম জানান, চলতি আলু মৌসুমে ৪ হাজার ৫শ’ হেক্টর জমিতে আলু আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিকটন। এপর্যন্ত ৩০ হাজার হেক্টর জমিতে আলু রোপন করা হয়েছে, ১৫শ’ হেক্টর জমি আলু রোপনে বাকি আছে।
কয়দিন আগে ঘর্ণিঝড় জাওয়াদের প্রভাবের বৃষ্টি জমাট পানির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা এখন দিশেহারা হয়ে উঠেছেন। বৃষ্টির পানিতে বীজআলু রোপনকৃত ৮০০ হেক্টর জমি প্লাবিত হয়। শঙ্কা কাটিয়ে জমিতে পুনরায় বীজ বপনের চেষ্টা করছেন তারা। বিভিন্ন খাল-বিল, সেতু-কালভার্টের মুখ আটকিয়ে মাটি ভরাটের কারণেই এই অঞ্চলের ফসলী জমিগুলো দিনদিন হুমকির মুখে পড়ছে।
এ ব্যাপারে লৌহজং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আব্দুল আওয়াল জানান, মুন্সীগঞ্জের অন্যান্য উপজেলা থেকে লৌহজং নিচু এলাকা তাই অন্য উপজেলায় যখন আলুচাষ শুরু হয় তখন এই এলাকার পানি শুকায় না। প্রাকৃতিক কারণে পদ্মা নদী থেকে পানি এসে পলি পরে খাল ভরাট হওয়ার কারণে পানি নিস্কাশন হয় না। আরেকটি কারণ হিসেবে জানা যায়, কিছু কিছু স্থানে নিজেরা খাল ভরাট করে পানি নিস্কাশন প্রতিবন্ধকতায় সৃষ্টি করেছে। এই বিষয়ে আমরা তথ্য সংগ্রহ করেছি, আশাকরি আমরা আগামী বছরে এই খালগুলো কাটার ব্যাবস্থা করে সমাধান করতে পারবো। আর বৃষ্টিতে সেই রবি শস্যের ক্ষতি হয়ে ছিলো কৃষকদের ক্ষতিপুরণের জন্য আমরা সরকারের কাছে একটি চাহিদাপত্র পাঠিয়েছি। যাতে বৃষ্টির জন্য কৃষকদের ক্ষতি তা কাটিয়ে উঠতে পারে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন