সোমবার ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সারা বাংলার খবর

লক্ষ্মীপুর-৪ আসনে আওয়ামীলীগে আভ্যন্তরীণ কোন্দল, বিএনপিতে নির্জীব নীরবতা

কমলনগর (লক্ষ্মীপুর) উপজেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ৫ জানুয়ারি, ২০২২, ৮:২৬ পিএম

লক্ষ্মীপুর-৪ (রামগতি-কমলনগর )আসনে বিএনপির ও আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক কার্যক্রম অনেকটা নেই বললেই চলে। জাতীয় দিবসগুলোতে আ'লীগ নিরুত্তাপ কিছু কর্মসূচির আয়োজন করলেও নিষ্ক্রিয়তার কারণে বিএনপি তাও করতে পারেনা। বড় দুটি রাজনৈতিক দলের সাংগঠনিক কাজের এমন গতি দেখে উভয় শিবিরের তৃণমূলে নেমে এসেছে চরম হতাশা। বিশেষ করে ক্ষমতাসীন দলের এমন দুরাবস্থায় উদ্বিগ্ন নেতাকর্মীরা। বিএনপি নেতারা বলছেন, ক্ষমতাসীন দল ও প্রশাসনের রোষানলে পড়ে মামলা হামলায় জর্জরিত হয়ে রাজপথ থেকে অনেকটা দূরে সরে যান তারা । তবে ক্ষমতাশীন দলের মধ্যে ক্ষমতা-পদপদবী ও ভাগবাটোয়ারা নিয়ে নানা গ্রুপিং,কোন্দলে জড়িয়ে পড়েন। মূলদল আওয়ামীলীগ থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন যুবলীগ, ছাত্রলীগ শ্রমিকলীগ ও কৃষকলীগ সহ অন্যান্য সহযোগী সংগঠনগুলো।অপরদিকে উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি সম্পাদক নিরাপদ দূরত্ব বজায় চলেছেন।

সামনের জাতীয় নির্বাচন নিয়েও বিএনপি, আওয়ামীলীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে চোখে পড়ার মত তৎপরতা নেই। নেতারা নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত। কর্মী সমর্থক ও তৃনমূলের নেতাকর্মীদের খোঁজ খবর নেয়া'তো দুরের কথা দলের বিভেদ গ্রুপিং ও কোন্দল নিরসনের কোনো চেষ্টা নেই তাদের। ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের মধ্যে নানা 'ভাইলীগ' সৃষ্টি করে নিজের আখের গুছিয়ে নিতে ব্যস্ত। দল নিয়ে তাদের কোন মাথা ব্যথা নেই এমন অভিযোগ তৃনমূলের নেতাকর্মীদের।

লক্ষ্মীপুর-৪ রামগতি ও কমলনগর উপজেলা নিয়ে গঠিত। দুই উপজেলায় ১৭টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা রয়েছে। বিএনপির এ ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত এ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ১০ হাজার ৮৪৭ জন। এরমধ্যে ১ লাখ ৫৩ হাজার ২৮১ নারী ও ১ লাখ ৫৭ হাজার ৫৬৬ জন পুরুষ।

আওয়ামী লীগর বিভিন্ন সূত্র বলছে,বর্তমান সাংসদ ও বিকল্পধারা বাংলাদেশের মহাসচিব মেজর (অবঃ)আবদুল মান্নানের প্রতিনিধি হিসেবে কমলনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি স্থানীয় চর লরেঞ্চ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মাস্টার নুরুল আমিন -ও কমলনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক পাটারির হাট ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এডভোকেট নুরুল আমিন রাজু ও রামগতি উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আব্দুল ওয়াহিদ মিলে বিভিন্ন প্রকল্প বন্টন সহ সরকারি সুযোগ সুবিধা নিজদের পছন্দের লোকদের দিয়ে ভাগবাটোয়ারা করা নিয়েও চলছে স্নায়ু যুদ্ধ। অন্যদিকে উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মাস্টার নুরুল আমিনের সাথে স্বতন্ত্র প্রার্থী কমলনগর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগের আহবায়ক মেজবাহ উদ্দিন বাপ্পী ও সাবেক চেয়ারম্যান ফয়সল আহমেদ রতন গ্রুপের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলে আসছে দীর্ঘদিন থেকে।উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মাষ্টার নুরুল আমিনের নৌকা প্রতিকের বিরুদ্ধে ভোট করে মেজবাহ উদ্দিন বাপ্পী নির্বাচিত হন। উপজেলার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ইউনিয়ন তোরাবগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সাবেক দলীয় প্রার্থী হয়ে নির্বাচিত চেয়ারম্যান ফয়সল আহমেদ রতনের পাহাড়সম জনপ্রিয়তাকে ধূলিসাৎ করে গেল ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে তাকে দলীয় প্রার্থী হিসেবে কেন্দ্রে তার নামটা না পাঠানো ও নির্বাচন অবাধ ও উন্মুক্ত না করানোর কারণে হতাশা ও অভিমানে রয়েছেন সাবেক এ নন্দিত চেয়ারম্যান।
এসব বহুমুখী কারণে বিভেদ বিভাজন চলমান।

দলীয় নিস্তেজতা ও আসন্ন ত্রি- বার্ষিক কাউন্সিল নিয়ে বর্তমান সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের অনুসারীরা একে অপরকে দোষারোপ করে যাচ্ছেন। তৃণমূল কর্মীদের দাবি, সভাপতি নুরুল আমিন মাষ্টার দীর্ঘদিন সভাপতি পদে থেকে নিজের ব্যক্তিগতভাবে সৎ ন্যায়পরায়ন থাকলেও তাঁর কতিপয় অনুসারী সাংগঠনিক কার্যকলাপ ও উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডে অযাচিত হস্তক্ষেপ করে আসছেন।যা 'অতিসৎ ও নম্র মানসিকতার' কারণে তিনি (সভাপতি)নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হচ্ছেন। অন্যদিকে জন্মসূত্র ও ত্যাগী দুর্দিনে আওয়ামী লীগের একনিষ্ঠজনদের দাবি,দলের উপজেলা সাধারণ সম্পাদক বাসদ থেকে অনুপ্রবেশ করে দলীয় পদ লাভ করায় তৃণমূলের সাথে সম্পাদকের সাংগঠনিক সম্পর্ক সুদৃঢ় নয়। ইতোমধ্যে এমন সরব আলোচনা গুঞ্জন ও গ্রুপিং প্রকাশ্য রুপ নিয়েছে।

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে আবদুল্লাহ আল মামুন এমপি হওয়ার পর উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মাস্টার নুরুল আমিনের সাথে মূলত বিরোধের শুরু হয়।প্রান্তিক নেতা কর্মীদের অভিমত, পুরোদস্তুর প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী আবদুল্লাহ আল মামুন ২০১৪ সালে অনেকটা 'কৌশলে' দলীয় মনোনয়ন নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে দুটি উপজেলায় সাংগঠনিক কাঠামোয় ফাটল সৃষ্টি করে প্রায় ৭ বছর যাবত এ বিভেদ অন্তর্দ্বন্ধ গ্রুপিং জিয়য়ে রেখেছেন। তার আগে এই আসনে গ্রুপিংয়ের রাজনীতির প্রচলন ছিলনা।তিনি মূলত এ আসনের সাবেক সংরক্ষিত নারী সংসদ সদস্য কেন্দ্রীয় নেতা ফরিদুননাহার লাইলির 'একচ্ছত্র বলয়' হিসেবে পরিচিত আসনটিকে নিজের নিয়ন্ত্রণে এনে লাইলিকে বিচ্ছিন্ন করতে চেয়েছিলেন বলে অনেক নেতাকর্মীর মন্তব্য।এখনো পেছন থেকে কলকাঠি নাড়ছেন বলেও জানা যায়।

এ নিয়ে আবদুল্লাহ ও লাইলি অনুসারীরা প্রায়ই প্রকাশ্য গ্রুপিংয়ে জড়িয়ে পড়ে। আওয়ামীলীগের সাবেক এ সংসদ সদস্য আব্দুল্লাহ আল মামুন ও কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের নেত্রী বেগম ফরিদুন্নাহার লাইলীর অনুসারীদের মধ্যে শুরু হয় নানা দল উপদলে বিভক্ত। তাঁদের বিরোধের বহিঃপ্রকাশ ঘটে ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে। প্রায় সবকটি ইউপি নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর বিপক্ষে অনুগত ব্যক্তিদের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করানোর অভিযোগ রয়েছে আব্দুল্লাহ আল মামুনের বিরুদ্ধে।

তবে দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন দিতে মোটা অংকের মনোনয়ন বাণিজ্য করা সহ জনবিচ্ছিন্ন লোকদের মনোনয়ন দেয়া নিয়ে চলে সমালোচনার ঝড়। সাবেক এমপি আব্দুল্লাহ আল মামুন অভিযোগ করেন - কমলনগর উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মাস্টার নুরুল আমিন ও সাধারণ সম্পাদক নুরুল আমিন রাজু, রামগতি উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওয়াহেদ বিএনপি-জামায়াতের লোকজনকে দলে এনে পদপদবী দিয়ে পুনর্বাসন করেন।

আবার রামগতি ও কমলনগর উপজেলার দীর্ঘদিনের ত্যাগী নেতাকর্মীর দাবি- সাবেক এমপি আবদুল্লাহর রাজনৈতিক কোন পরিচয় নাই। যখন যে দল ক্ষমতায় আসে তখন সে দলের সাথে লিঁয়াজো করে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। সুযোগ বুঝে মনোনয়ন লবিস্ট নিয়োগ করে মনোনয়ন হাসিল করে 'উড়ে এসে জুড়ে বসার মত' তিনি ২০১৪ সালে এমপি নির্বাচিত হন।কখনো যদি আওয়ামী লীগের দূর্দিন নেমে বিরোধী জোটের সুদিন আসে তাহলে আবদুল্লাহ আবার ইউটার্ণ করে সেদিকে ধাবিত হতে পারে।

এ আসনে আগামী সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী জোট থেকে মেজর অবঃ আবদুল মান্নান,সাবেক এমপি আব্দুল্লাহ আল মামুন, বেগম ফরিদুন্নাহার লাইলী,যুবলীগ নেতা তাসবীরুল হক ও আব্দুজজাহের সাজুর নাম আলোচনায় রয়েছে।

এর মধ্যে ফরিদুন্নাহার লাইলী,তাসবীরুল হক অনু ও আব্দুজজাহের সাজুকে রামগতি-কমলনগরে মানুষের মধ্যে বিভিন্ন সময়ে নানা দান অনুদান বিতরণ করতে দেখা গেলেও আব্দুল্লাহ আল মামুন কে জনগনের পাশে দেখা যায়নি।তিনি মাঝে মধ্যে এলাকায় আসলেও গোপনে আবার ঢাকায় চলে যান। নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের সাথে তার তেমন দেখা সাক্ষাৎ নেই। বর্তমানে আবদুল্লাহ আল মামুন জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন।তৃণমূল কর্মীদের শঙ্কা রাতের অন্ধকারে তিনি অর্থের বিনিময়ে আবারো দলীয় মনোনয়ন লাভের চোরাগলি খুঁজছেন হয়তো!

 

নীরব নির্জীব বিএনপি-

বিএনপির নেতা-কর্মীদের মধ্যে তেমন তৎপরতা নেই। দলীয় নেতা-কর্মীরা বলছেন,চেয়ারপারসন কারাগারে। ঘরোয়াভাবেও কোনো কর্মসূচি পালনের সুযোগ নেই। এ অবস্থায় সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করাটা খুবই কষ্ট হবে।আর রাজপথে কোন কর্মসূচি দিতে দিচ্ছেনা আওয়ামীলীগ ও প্রশাসন। মামলা-হামলায় জর্জরিত হয়ে পড়ে বিএনপির নেতা কর্মীরা।এরই মধ্যে দুএকটি ইউনিয়নে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে গেল নির্বাচনে নির্বাচন করা নিয়ে দলের মধ্যে দেখা দিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। একে অপরকে সমর্থন না দিয়ে অনেকটা নিরবতা পালন করেন তৃনমূলের কর্মীরা। সাংগঠনিক কার্যক্রম ঝিমিয়ে পড়ায় দেশের বৃহৎ এই দলের মধ্যে নেমে এসেছে চরম হতাশা।

কমলনগর উপজেলা বিএনপিসাধারণ সম্পাদক নুরুল হুদা চৌধুরী বলেন, এতো মামলা হামলা ও নির্যাতনের পরেও রামগতি-কমলনগরে বিএনপি ঐক্যবদ্ধ। প্রশাসন ও ক্ষমতাসীনরা তাদেরকে নানা ভাবে কোনঠাসা করে রেখেছেন বলে মন্তব্য করেন তিনি। এ আসনে বিএনপির সাবেক দুই বারের সাংসদ এবিএম আশ্রাফ উদ্দীন নিজানের সাথে রামগতি-কমলনগরের জনগন ও দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে রয়েছে গভীর সম্পর্ক। করোনা মহামারী সহ বিভিন্ন সময়ে আশ্রাফ উদ্দীন নিজান দলীয় নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের মাঝে নানা দান অনুদান ও নগদ টাকা বিতরণ সহ সুখে দুঃখে এগিয়ে আসেন আশ্রাফ উদ্দীন নিজান। এতে তার গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে।

তবে বিএনপির অঙ্গ সংগঠন ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলে রয়েছে বিভক্তি গ্রুপিং।এতে দলীয় কর্মসূচী পালনে মাঝে মধ্যে হিমশিম খেতে হয় দলটিকে।

তবে দলীয় সূত্র জানায়, এ আসনে আগামী নির্বাচনে বিএনপি জোট থেকে সাবেক সাংসদ এবিএম আশ্রাফ উদ্দীন নিজান, জেএসডির সভাপতি আসম আব্দুর রবের নাম আলোচনায় আছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন