শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অভ্যন্তরীণ

সরকার দলীয় প্রার্থী ও তার সমর্থকদের মারপিটে মাদ্রাসা শিক্ষক আহত

সাতক্ষীরায় ইউপি নির্বাচন

প্রকাশের সময় : ২৯ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

আক্তারুজ্জামান বাচ্চু, সাতক্ষীরা থেকে
৩১ অক্টোবর সাতক্ষীরায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন। জেলায় বন্ধ হয়ে যাওয়া ১৫টি এবং মেম্বর প্রার্থীদের মধ্যে সমপরিমাণ ভোট পাওয়ায় বাশদহা ইউনিয়নের একটি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ হবে। কিন্তু এই ইউপি নির্বাচনকে ঘিরে ভোটারদের মাঝে বাড়ছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ছেন তারা। বিগত দিনগুলোর কথা ভেবে এবং সারা দেশের সেদিনকার দেখা চিত্র সাধারণ ভোটাররা কোনভাবেই ভুলতে পারছেন না, এমনটিই বলছেন ভোটাররা। সাতক্ষীরায় যেসব কেন্দ্রে ভোট হচ্ছে, সদর উপজেলার অলিপুর ইউনিয়নের আলিপুর সরকারি প্রাইমারি স্কুল, মাহমুদপুর সরকারি প্রাইমারি স্কুল, ভাড়ুখালি সরকারি প্রাইমারি স্কুল, গাংনিয়া সিনিয়র মাদ্রাসা, তালা উপজেলার কুমিরা ইউনিয়নের ভাগবহা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, অভয়তলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দাদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কলারোয়া উপজেলার  কুশোডাঙ্গা ইউনিয়নের কলাটুপি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, শাকদহা দাখিল মাদ্রাসা, কেরালকাতা ইউনিয়নের বলিয়ানপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দেবহাটা উপজেলার পারুলিয়া ইউনিয়নের খেজুরবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, শ্যামনগর উপজেলার কৈখালি ইউনিয়নের পূর্ব কৈখালি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কৈখালি মহাজেরিন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, শৈলখালি এমইউ দাখিল মাদ্রসা এবং সাতক্ষীরা সদর উপজেলার কুশখালি ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের একটি কেন্দ্র। কুশখালির এই ওয়ার্ডে দুজন মেম্বর  প্রার্থী সমপরিমাণ ভোট পেয়েছেন। জেলা নির্বাচন অফিস সূত্র মতে, কেন্দ্রগুলোতে ভোটার সংখ্যা রয়েছে ৩৬,৫৭২ জন। জানা যায়, ইউপি নির্বাচন নিয়ে ভোটারদের  মাঝে উদ্বেগ-উৎকন্ঠা বাড়ছে। একই সাথে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ছেন সরকারদলীয় প্রার্থীদের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা। ইতোমধ্যে সদর উপজেলার আলিপুর ইউনিয়নের বিএনপি চেয়ারম্যান প্রার্থী আলহাজ আব্দুর রউফের সমর্থক-কর্মীদের মারপিট শুরু করেছে সরকার দলীয় প্রার্থী মহিয়ূর রহমান ও তার লোকজনেরা। গত ২৭ অক্টোবর সকাল নয়টার দিকে একজন মাদ্রাসা শিক্ষককে প্রকাশ্যে রাস্তার উপর ফেলে পিটিয়ে গুরুতর আহত করেছে মহিয়ূর, শফিসহ একদল গু-াবাহিনী। ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে ওই শিক্ষকের মোটরসাইকেলটিও। গুরুতর আহত হয়ে শিক্ষক মুজিবর রহমান সদর হাসপাতালে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন। তিনি এ প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, নির্বাচনে মহিয়ূরের পক্ষে মাঠে কাজ না করায় তাকে এমনভাবে মারা হয়েছে। একজন বয়স্ক শিক্ষককে প্রকাশ্যে এমনভাবে সন্ত্রাসীরা মারপিট করায় আলিপুর ইউনিয়নের সর্বত্র আতংক বিরাজ করছে। ভোটারদের আশংকা তারা ভোট হয়তোবা কেন্দ্রে গিয়ে দিতে পারবেন না। অনেক ভোটার জানিয়েছেন, ইতোমধ্যে সরকারদলীয় প্রার্থী মহিয়ূর রহমান ওরফে ময়ূর ডাক্তার ও তার বাহিনী তাদের ভোট কেন্দ্রে ভোট দিতে না যাওয়ার জন্য হুমকি দিয়েছে। তারা (ভোটাররা) দাবী করেছেন প্রশাসনের কাছে, যাতে নির্বিঘেœ ভোটাররা কেন্দ্রে যেয়ে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারেন সে জন্য আগেভাগেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে। এদিকে মাদ্রাসা শিক্ষককে মারপিট করার পর নিজেদের অপরাধ ঢাকতে মাহমুদপুর গ্রামের বাপ্পী নামের একজনকে সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তারা উল্টো বিএনপি প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের নামে থানায় মামলা দায়েরের পাঁয়তারা করছে, এমনই অভিযোগ বিএনপি প্রার্থী ও তার সমর্থকদের। যদিও আ’লীগ প্রার্থীর লোকজন এ অভিযোগ মানতে নারাজ। আরো জানা যায়, চলতি বছরের ২২ মার্চ সাতক্ষীরার ৭৮টি ইউনিয়নে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। এরমধ্যে অধিকাংশ ইউনিয়নের সরকারদলীয় চেয়ারম্যান ও মেম্বর প্রার্থীরা প্রশাসনের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় ভোট কেন্দ্র দখল করে একজন ব্যক্তি দ্বারা একাধিক ব্যালটে সিল মারা এবং ভোটগ্রহণের আগের দিন রাতে কেন্দ্রে ঢুকে দলীয় প্রার্থীদের প্রতীকে সিল মারার ঘটনা ঘটেছে। সাধারণ বহু ভোটাররা ভোট কেন্দ্রে যেতে পারেননি। আর বাধাবিঘœ পার হয়ে যদিও কিছু ভোটার কেন্দ্রে প্রবেশ করলেও তাদেরকে সরকারদলীয় ক্যাডাররা বুথের ভিতরে নিজেদের পক্ষে সিল মেরে নিয়েছে। অনেক কেন্দ্রে এসব ঘটনা ঘটলেও ভোটগ্রহণ বন্ধ বা বাতিল করা হয়েছে মাত্র ১৫টি কেন্দ্রের। এসব কেন্দ্রে জোর করে সিল মারাসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ এনে সংশ্লিষ্ট প্রিজাইডিং অফিসাররা বাদী হয়ে সরকারদলীয় প্রার্থীদের নামে থানায় মামলা দায়ের করলেও পুলিশ কোন আসামীকে গ্রেফতার না করায় জনমনে ভয়ভীতি রয়েই গেছে। এছাড়া ২২ মার্চের ভোটের দিনের পর থেকে অনেক সাধারণ ভোটার গ্রাম ছেড়ে অন্যত্র চলে গিয়েছেন। চলতি ভোটেও তারা যেন ভোট না দিতে পারে সেজন্য তাদের নিকট আত্মীয়দের দ্বারা হুমকি দেওয়া হচ্ছে। অনেকেই বলছেন, মামলার চার্জশীটভুক্ত আসামী হওয়া সত্ত্বেও সরকারদলীয় প্রার্থী ও তার গু-াবাহিনী এলাকায় রীতিমতো মহড়া দিয়ে আতংক সৃষ্টি করছে, যাতে ভোটের দিন তারা ভোট কেন্দ্র দখল নিয়ে নিজেদের পক্ষে আগের মতো সিল মেরে নিতে পারে। ৩১ অক্টোবরের নির্বাচন সম্পর্কে জেলা নির্বাচন অফিসার এ এইচ এম কামরুল হাসান জানান, নির্বাচন স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ হবে। কোন ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকা- মেনে নেওয়া হবে না। এ বিষয়ে তিনি প্রশাসন, সাংবাদিকসহ সকলের সহযোগিতা কামনা করেছেন। তিনি আরো জানান, গত ২৭ অক্টোবর সকালে একজনকে মারপিট ও তার মোটরসাইকেল ভাঙচুরের ঘটনা জানতে পেরে তাৎক্ষণিক পুলিশ প্রশাসনকে জানানো হয়েছিল এবং ঘটনাস্থলে পুলিশ গিয়েছিল। তিনি বলেন, এ ব্যাপারে প্রার্থীদের সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে কোন ধরনের গ-গোল সৃষ্টি না করার জন্য।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন