শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাচ্ছে ৭ নদী

খুলনায় দখলের উৎসব

ডিএম রেজা সোহাগ, খুলনা থেকে : | প্রকাশের সময় : ৯ জানুয়ারি, ২০২২, ১২:০৪ এএম

নদী দখলের বিরুদ্ধে সরকারি নানা পদক্ষেপের মধ্যেও খুলনার ডুমরিয়ায় চলছে নদী দখলের উৎসব। প্রভাবশালী ভূমিদস্যুরা ডুমুরিয়ার ভদ্রা, হরি, সুখ, হামকুড়া, ঘ্যাংরাইল, হাতিটানা ও তালতলা নদীর জায়গা দখল করে মৎস্য ঘের, অবৈধ স্থাপনা ইটভাটা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বাড়িঘর, হাঁস-মুরগীর খামার তৈরি করেছে। অবাধ দখলে এই ৭টি নদী ক্রমেই খুলনার মানচিত্র থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, ডুমুরিয়ার বরাতিয়া মৌজার ভদ্রা নদীর জায়গা দখল করে গড়ে উঠেছে এসবি ব্রিকস। একই স্থানে নদীর জায়গায় কেপিবি ব্রিকস, কুলবাড়িয়ায় খর্ণিয়া মৌজায় সেতু-১ ব্রিকস, নূর জাহাপন-১ ব্রিকস, কেবি-২ ব্রিকস, রানাই মৌজায় হরি নদীর জায়গা দখল করে কেবি-ব্রিকস, আল-মদিনা ব্রিকস, মেরি ব্রিকসসহ অসংখ্য ইটভাটা গড়ে উঠেছে।
সিএস ও আরএস খতিয়ানের রেকর্ড অনুসারে জরিপ করে গত অক্টোবরে ভদ্রা ও হরি নদীর জায়গা দখল করে গড়ে ওঠা ১৪টি অবৈধ ইটভাটা চিহ্নিত করেছে জেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড কমিটি। নদী সম্পর্কিত বিষয়ক সংগঠন পানি কমিটির সভাপতি অধ্যক্ষ এ বি এম শফিকুল ইসলাম বলেন, ডুমুরিয়ার হরি, হামকুড়া ও সুখ নদীতে দখল চরমে পৌছেছে। হরি নদীর দু’পাশের ইট ভাটাগুলো নদীর জায়গা ভরাট করে স্থাপনার আয়তন বাড়াচ্ছে। এ অবস্থায় নদী ক্রমশ ছোট হয়ে যাচ্ছে। এতে দু-এক বছরের মধ্যে নদীর অস্তিত্ব বিলীন হবার শঙ্কা রয়েছে। হামকুড়া নদীতে প্রবাহ কমে নদী ভরাট হয়ে যাওয়ায় সেখানে মৎস্য ঘের, ঘরবাড়ি, ইটভাটা, হাঁস-মুরগি খামার করে জায়গা অবৈধ দখল হয়েছে। এতে ডুমুরিয়ার এক অংশ পানিবদ্ধতায় ডুবে থাকছে। প্রভাবশালী মহল সুখ নদীতে পাটা দিয়ে মাছ চাষ করায় পানির প্রবাহ কমে গেছে। পানির অভাবে আশপাশে ধান চাষ ব্যাহত হচ্ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য মতে, খুলনায় রূপসা, ভৈরব, শিবসা, কাজিবাছাসহ ছোট-বড় মোট ৪১টি নদ-নদী রয়েছে। এদের মধ্যে ডুমুরিয়ার সাতটি নদী দখলের কারণে রয়েছে চরম অস্তিত্ব সষ্কটে।
বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সভাপতি শেখ আশরাফ-উজ্জামান বলেন, ইটভাটা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, দোকানপাট, বাড়িঘর তৈরি করে প্রকাশ্যে নদীর জায়গা দখল হচ্ছে। দূষণের ফলে ময়ূর নদীর পানি কালচে হয়ে গেছে। কচুরিপানা ও ময়লা-আবর্জনা পচে দুর্গন্ধ সৃষ্টি হয়েছে।
তিনি বলেন, দখলদারের তালিকায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রভাবশালীরা থাকায় মাঝে মধ্যে উচ্ছেদের উদ্যোগ নেয়া হলেও অভিযান থমকে যায়।
এদিকে গত ১৪ ডিসেম্বর হাইকোর্ট ডুমুরিয়ার হরি ও ভদ্রা নদীর জায়গা দখল করা ১৪টি অবৈধ ইটভাটা ৬০দিনের মধ্যে উচ্ছেদের নির্দেশ দিয়েছেন। এর আগে ২৫ ফেব্রুয়ারি মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস এন্ড পিস ফর বাংলাদেশ (এউচআর পিবি) নদীর জায়গা দখল করে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা এসব ইটভাটা উচ্ছেদে জনস্বার্থে রিট পিটিশন দায়ের করেন। তারপরও নদীর জমি দখল কোন ক্রমেই বন্ধ হচ্ছে না।
ডুমুরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, নদীর পাশে পানি উন্নয়ন বোর্ডের জায়গায় গড়ে ওঠা ১৪টি ইটভাটা ৬০দিনের মধ্যে উচ্ছেদের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। আমরা সেই মোতাবেক কাজ করছি। এছাড়া কয়েকটি ইট ভাটাসহ নদীর জমি দখলকারীদের বিরুদ্ধে আমরা অভিযান চালিয়ে জরিমানা ও উচ্ছেদের নির্দেশ দিয়েছি। আশা করি অল্প দিনের মধ্যে ডুমুরিয়া উপজেলা নদীগুলো দখল মুক্ত করতে পারব।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন