শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অভ্যন্তরীণ

ফরিদপুর পাসপোর্ট অফিস যেন দালালের আখড়া

আনোয়ার জাহিদ, ফরিদপুর থেকে | প্রকাশের সময় : ১১ জানুয়ারি, ২০২২, ১২:০৪ এএম

অসাধু কর্মচারীদের সাথে হাত মিলিয়ে ফরিদপুরের আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে গড়ে উঠেছে একটি দালাল চক্র। ঘুষ দিলে কাজ হয়ে যায় বিদ্যুৎ গতিতে, আর না দিলে চরম ভোগান্তির শিকার হতে হয় পাসপোর্ট আবেদনকারীদের। তবে পাসপোর্টের কর্মকর্তাদের দাবি, অফিসে কোনো দালাল চক্র নেই। অবশ্য পুলিশের কর্মকর্তারা বলছেন, দালাল চক্রকে ধরতে তারা তৎপর। আর জেলা প্রশাসক বলছেন, লিখিত কোনও অভিযোগ পেলে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এদিকে, দালাল ও অসাধু কর্মচারীদের দৌরাত্ম্যে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন পাসপোর্ট করতে আসা সাধারণ মানুষ। বাড়তি টাকা ছাড়া মিলছেনা পাসপোর্ট। একদিকে দালাল চক্রের অর্থ বাণিজ্য ও অন্যদিকে পাসপোর্ট অফিসের কিছু কর্মকর্তা, কর্মচারীর অনিয়মের কারণে জিম্মি হয়ে পড়েছেন পাসপোর্ট প্রত্যাশীরা।
দালালরা বলছেন, তারা কিছু অশিক্ষিত মানুষের ফরম পূরণ করে দেয়া এবং বিনিময়ে কিছু অর্থ পায়। আর ভুক্তভোগীদের অভিযোগ দালালদের দৌরাত্ম্যে তাদের গুণতে হচ্ছে বাড়তি অর্থ।
একাধিক সেবা প্রত্যাশীদের অভিযোগ, দালালদের মাধ্যমে ফরম জমা দিলে সেই ফরম সহজে জমা দেয়া যায়। দালালদের আশ্রয় না নিলে পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তারা হয়রানি করেন। তারা পাসপোর্ট ফরমে সংকেত ব্যবহার করেন। এছাড়া সেখানে কর্মরত কিছু আনসার সদস্যরাও দুর্নীতির সাথে সম্পৃক্ত। তাদের মাধ্যমেই পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তারা-কর্মচারীরা বাড়তি টাকার ভাগ পান।
এ প্রসঙ্গে পাসপোর্ট করতে আসা জুয়েল হোসেন নামে একজন জানান, ‘আমি ব্যাংক ড্রাফটের জন্য ৫ হাজার ৭শ’ ৫০ টাকা দিছি এছাড়া তারা আমার কাছ থেকে আরও ১৫শ’ টাকা নিছে।’
ভুক্তভোগীদের দাবি ঘুষ না দিলে ফরম পূরণে সব তথ্য ভুলে ভরে যায়, আর ঘুষ দিলে ভুল সহজেই নির্ভুল হয়ে যায়।
এ প্রসঙ্গে সালমা নামে আরেকজন বলেন, ‘কোনো দালালের মাধ্যমে না গেলে ফরমে ভুল না থাকলেও হাজারো ভুল ধরে। আর ভুল থাকলে তো কোনো কথাই নেই।’
তবে এসব অনিয়ম অস্বীকার করে পাসপোর্ট অফিসের কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী বলেন, দালালদের কারও সাথে তাদের অফিসের কেউ জড়িত নয়।
এদিকে, পাসপোর্ট অফিসে দালালদের দৌরাত্মের কথা স্বীকার করে পুলিশ জানায়, পাসপোর্ট অফিসের দালালদের চিহ্নিত করা হয়েছে। গত ৬ জানুয়ারি সেবা প্রত্যাশীকে হয়রানির সময় হাতেনাতে গ্রেফতার করা হয়েছে ৫ জন দালালকে।
এ প্রসঙ্গে ফরিদপুর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের সহকারি পরিচালক শামীম আহম্মেদ বলেন, ‘দালালদের এই অফিসে ঢোকার কোনো সুযোগ নেই। পাসপোর্ট অফিসের নিয়ম হলো আবেদনকারী নিজে ফরম পূরণ করবে, জমা দিবে এবং নিজে পাসপোর্ট নিবে।’
তিনি সকল অভিযোগ মিথ্যা ভিওিহীন ও মনগড়া অসত্য বলে দাবি করে বলেন, আমার এ অফিসে এমআরপি পাসপোর্ট হয় না। এছাড়া, প্রতিদিন এক থেকে দেড়শ’ ফাইল জমা পড়ে। তবে, কেউ কোন হয়রানির শিকার হন না। দালালদের সাথে তার কোন পরিচয় নেই।
এদিকে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রাকিবুল ইসলাম জানান, পাসপোর্ট অফিসের দালাল চক্রকে ধরতে গোয়েন্দা পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে ৫ দালালকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।
ফরিদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অপরাধ) জামাল পাশা বলেন, পাসপোর্ট করতে আসা কেউ হয়রানির শিকার হলে অভিযোগ পাওয়া মাত্রই ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন