শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

সরকার জনগণের ভোটের অধিকার লুট করে নিয়েছে- রংপুরে বিএনপির সমাবেশে মির্জা আব্বাস

রংপুর থেকে স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১২ জানুয়ারি, ২০২২, ৭:৩৩ পিএম

বিএনপি জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেছেন, ভোট ডাকাতি করে ক্ষমতায় এসে এই সরকার জনগণের ভোটের অধিকার লুট করে নিয়েছে। দিনের ভোট রাতে করছে। জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়েছে। এই সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয়। জনগণের প্রতি তাদের কোনো দায় নেই। সরকার এবং তাদের পেটোয়া বাহিনী জনগণকে নির্যাতন-নিপীড়ন করছে। তাদের নির্যাতনে দেশের মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। আইনের দোহাই দিয়ে তারা জনগণকে বিভ্রান্ত করছে। নির্লজ্জ-বেহায়ার মত মন্ত্রীরা কথা-বার্তা বলছে। এখন রাষ্ট্রপতিও লোক দেখানো সংলাপ করছেন। রাষ্ট্রপতির হাতে কোনো ক্ষমতা নেই।

তিনি আজ বুধবার বিকেলে রংপুরের বুড়িরহাট মাঠে বিএনপির চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি ও বিদেশে সুচিকিৎসার দাবীতে রংপুর জেলা বিএনপির আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতাকালে এসব কথা বলেন।

মির্জা আব্বাস বলেন, বর্তমান সরকার গণতন্ত্রকে হত্যা করছে। এখন দেশে কোন গণতন্ত্র নেই, আইনের শাসন নেই, মানবাধিকার নেই। এসব আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছে। তাই বিদেশ থেকে একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আসছে। দলীয়করণের মাধ্যমে এই সরকার সর্বত্র নির্জ্জলতার পরিচয় দিয়েছে। এই সরকারের পেটোয়া বাহিনীর অত্যাচারে দেশের মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। প্রতি নিয়ত দ্রব্যমূল্য বেড়ে চলেছে। বাজার নিয়ন্ত্রণেও চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে যাচ্ছে। প্রত্যেকটা জিনিসের দাম সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে। সর্বক্ষেত্রেই এই সরকার ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে। তাই এই সরকারকে মানুষ আর চায় না। দেশের মানুষ চায় সরকারের পদত্যাগের মধ্যদিয়ে নির্দলীয় একটি তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন। আজকের এই সমাবেশে শুধু বিএনপির নেতাকর্মীরা নয়, সাধারণ মানুষও স্বত্ব:ফূর্তভাবে অংশ নিয়েছে। দেশে আরেকটি মুক্তিযুদ্ধের আন্দোলনের সূচনা ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে। আর সেটি হল এই অবৈধ, স্বৈরাচার সরকারের পতন ঘটিয়ে দেশের মানুষকে মুক্ত করার। তিনি দল-মত নির্বিশেষে সকল ভেদাভেদ ভুলে এই অবৈধ, স্বৈরাচার সরকারের পতনের আন্দোলনের প্রস্তুতি নেয়ার জন্য দলীয় নেতাকর্মীদের প্রতি আহবান জানান।

তিনি আরও বলেন, ৩ বারের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে অন্যায়ভাবে কারাগারে রাখা হয়েছে। তাকে চিকিৎসা নিতে দেয়া হচ্ছে। তিলে তিলে তাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে। তার চিকিৎসা নিয়ে ছলচাতুরী করা হচ্ছে। তিনি সরকারের উদ্দেশ্যে বলেন, আমরা অনুকম্পা চাই না। আমরা ন্যায় বিচার চাই। বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে উন্নত চিকিৎসা ও দেশ নায়ক তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য এই অবৈধ সরকারকে ক্ষমতা থেকে বিতাড়িত করতে হবে। আর এ জন্য আন্দোলনের বিকল্প নাই। সবাইকে দুর্বার আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত থাকার আহবান জানান।

সমাবেশে প্রধান বক্তা হিসেবে বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল বলেন, সব চোরের বড় চোর হচ্ছে আওয়ামীলীগ। এই চোরের দল দেশের সবকিছু চুরি করে খেয়ে ফেলছে। শেয়ার বাজার খেয়েছে, ব্যাংক খেয়েছে, দেশের সম্পদ খেয়েছে। কোন কিছুই বাকি রাখেনি। সন্ত্রাস, খুন, গুম ও চাঁদাবাজিতে বিশ্ব রেকর্ড করেছে এই সরকার ও তার মন্ত্রীরা।

জাতীয় পার্টির সমালোচনা করে সোহেল বলেন, জাতীয় পার্টি মুখে সরকারের বিরোধিতা করে কিন্তু ভেতরে ভেতরে তাদের সাথে প্রেম ঠিকই আছে। ভোটের সময় আসন ভাগাভাগি করে নেয়। তিনি আরও বলেন, অতীতে বিএনপির নেতৃত্বে যেমন ৯০’র গণঅভূ্ত্থানের মাধ্যমে ৯ বছরের স্বৈরশাসনের পতন ঘটেছিল। আগামীতেও তারেক জিয়ার নেতৃত্বে দুর্বার আন্দোলনের মাধ্যমে, আরেকটি অভ্যূত্থানের মাধ্যমে এই নব্য স্বৈরাচারিনী চোর সরকারের পতন ঘটিয়ে দেশবাসীকে মুক্ত করা হবে। আর সেটি বেশি দুরে নয়। দেশের মানুষ জেগেছে। পালাবার পথ পাবেন না। তারও নমুনা শুরু হয়ে গেছে। তাই এখনও সময় আছে, পদত্যাগ করে নির্দলীয়, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে ব্যবস্থা নিন।

তিনি সরকারের গুম, হত্যা ও বিচার বহিভূত বিভিন্ন হত্যাকান্ডের বর্ননা তুলে ধরে বলেন, এই সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য বিরোধী মতের নেতাকর্মীদের একে একে গুম, হত্যা করে চলেছে। যারাই তাদের বিপক্ষে কথা বলেছে, তারাই খুন হয়েছে অথবা গুম হয়েছে। তিনি বলেন, অনেক নির্যাতন, জুলুম-অত্যাচার সহ্য করেছি। আর নয়। এখন সরকার পতনের আন্দোলন শুরু হবে। এজন্য সবাইকে প্রস্তুত থাকতে হবে। আগামী দিনে বাংলাদেশ কোন পথে যাবে, সে ফয়সালা করবে বিএনপি রাজপথে। আর সেই রাজপথে থেকে আগামী দিনে বিএনপির সকল কর্মসূচিকে সফল করার জন্য দল-মত নির্বিশেষে সকলকে প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানান। এছাড়া তিনি নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আগামী দিনে নির্বাচন কমিশন গঠনেরও দাবি জানান। অন্যথায় জনগণের আন্দোলনের স্রোতে শেখ হাসিনার এই অবৈধ সরকারকে ভাসিয়ে দেয়া হবে।

তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে আরও বলেন, খুব শীঘ্রই সরকারের পতন হবে। এরা পালানোর জায়গা পাবে না। কেউ এদেরকে জায়গা দেবে না। দেশের জনগণ এদের পালানোর পথ বন্ধ করে দেবে।

কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলু বলেন, এই সরকারের সবচেয়ে বড় ভয় হচ্ছে খালেদা জিয়ার নেতৃত্ব। খালেদা জিয়া কখন কি করে বসেন সরকার সেই আশঙ্কা করছে। তারা চায় না খালেদা জিয়া সুস্থ্য হোক। সবাই চায় খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ দেয়া হোক। কিন্তু এই সরকার চায় না। একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে চিকিৎসার জন্য বিদেশ যেতে দিলে তাদের কি হয়? আশা করি সরকার দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বিদেশে সুচিকিৎসার সুযোগ দিবেন।

তিনি আরও বলেন, খালেদা জিয়া নিরাপদ মানে হচ্ছে দেশ ও দেশের গণতন্ত্র নিরাপদ। বেগম খালেদা জিয়া ৩ বার নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সুন্দর এবং দক্ষতার সাথে রাষ্ট্র পরিচালনা করেছেন। তিনি কখনো অন্যায়ের সঙ্গে আপোস করেননি, বরং দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছেন। বিশ্বের সকল রাষ্ট্রের সাথে বন্ধুত্ব সৃষ্টি করেছেন। দেশে গণতন্ত্র নষ্ট হোক এমনটা কখনো তিনি চাননি। তিনি অবিলম্বে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং বিদেশে সুচিকিৎসার সুযোগ দেয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানান।

তিনি আরও বলেন, জনগণের মুক্তির জন্য কঠোর আন্দোলন করতে হবে। আশা করি খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে এই অবৈধ সরকার শুভ বুদ্ধির পরিচয় দেবে।

রংপুর জেলা বিএনপিসাধারণ সম্পাদক রইচ আহম্মেদ এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন রংপুর জেলা বিএনপির সভাপতি সাইফুল ইসলাম। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- বিএনপি কেন্দ্রী কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল খালেক, সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলম, যুবদল কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি চৌধুরী মহেবুল্লাহ আবু নুর, অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ বকুল, কৃষক দল কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সম্পাদক মাহমুদা হাবিবা, ছাত্র দল কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি মামুন খাঁনসহ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ।

বেলা ২টায় সমাবেশ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও সমাবেশ শুরু হয় বেলা ৩টায়। এর আগে দুর থেকেই জেলার বিভিন্ন উপজেলা এবং পার্শ্ববর্তী জেলাগুলো থেকে দলীয় নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে সমবেত হতে থাকে। সমাবেশ শুরু হতে না হতেই সমাবেশস্থল কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। দলীয় নেতাকর্মী ছাড়াও হাজার হাজার সাধারণ মানুষ সমাবেশ উপস্থিত হয়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
Mn Rofikul ১২ জানুয়ারি, ২০২২, ৮:০৭ পিএম says : 0
ভাইয়েরা আমার খুব একটা চাকরি দরকার
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন