শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ০৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৮ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

বাহুবলের শিকার কাজিপুরের চরাঞ্চলের নিরীহ মানুষ

প্রকাশের সময় : ৩১ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

কাজিপুর (সিরাজগঞ্জ) উপজেলা সংবাদদাতা

নদীর সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হয় সিরাজগঞ্জের কাজিপুরের চর এলাকার দেড় লাখ অধিবাসীর। কারণ, প্রতি বছর নদী তার কূল ভেঙে বর্ষাশেষে আবার জাগিয়ে তোলে নতুন চর। নতুন চরে নতুন আশায় দুর্ভাগা মানুষ আবার যাত্রা শুরু করে। কাজিপুর উপজেলার খাসরাজবাড়ী, নাটুয়ারপাড়া, তেকানী, নিশ্চিন্তপুর, চরগিরিশ, মনসুর নগর, মাইজবাড়ী, কাজিপুর সদর ও শুভগাছা ইউনিয়নে দেড় লাখ অধিবাসী যমুনার ভাঙনের শিকার হয়ে ভাঙাগড়ার সাথে তাল মিলিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করে আসছে। প্রতিবছর এসব এলাকার অনেক ঘর-বাড়ি ক্ষেত-খামার নদী ভাঙনে বিলীন হয়ে যায়। বর্ষাশেষে নতুনভাবে চর জাগলে গৃহহীন মানুষ নতুন নতুন আশা নিয়ে আবার ঐ চরে ঘর বাঁধে। এসব চর এলাকায় আইন বলে তেমন কিছুই নেই। জোর যার মুল্লুক তার এই নীতিতে চলে চর এলাকা। অর্থলোভীদের জোরপূর্বক ভূমিদখল ও ফসল কাটার প্রতিযোগিতার বাহুবলের শিকার হয় নিরীহ সাধারণ মানুষ। অসহায় কৃষক নিজ শ্রমে ফসল ফলায় আর লাঠিয়ালরা জোরপূর্বক ফসল কেটে নিয়ে যায় এবং তা নিয়ে দাঙ্গা-হাঙ্গামা, মামলা-পাল্টা মামলা নিয়মিত নিয়মে পরিণত হয়েছে। চর এলাকায় যাতায়াত ব্যবস্থার সংকটের কারণে দাঙ্গা-ফ্যাসাদের খবর পাওয়া সত্ত্বেও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরাও সময়মত ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে পারে না। ফলে কার্যকরি কোনো পদক্ষেপ নেয়াও তাদের পক্ষে সম্ভব হয় না। প্রশাসনিক ঊর্ধŸতন কর্মকর্তারা এসব চর এলাকার অসহায় মানুষদের খোঁজ-খবর নিতে যান। রাস্তাঘাটের অভাব ও যোগাযোগে অব্যবস্থার কারণে এসব চরের বাসিন্দারা জেলা ও উপজেলা সদর হতে বিচ্ছিন্ন জীবন কাটাচ্ছে। চর এলাকাগুলোতে শিক্ষক ও প্রয়োজনীয় শিক্ষা উপকরণের অভাবে এসব শিশুর বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা ব্যাহত হচ্ছে। চর এলাকায় প্রয়োজনীয় নলকূপ বা অন্য কোনো ব্যবস্থা না থাকায় বিশুদ্ধ পানির সংকট সারা বছর লেগেই থাকে। স্বাস্থ্যসেবার অবস্থা আরো করুণ। চিকিৎসক বা চিকিৎসাসেবার কেন্দ্র না থাকায় প্রতিবছর বহু লোক অসুস্থ হওয়ার পরে এ রকম বিনা চিকিৎসায় অকালে মারা যায়। কাজিপুর উপজেলার দুর্গম চরাঞ্চলের খাসরাজবাড়ী, নাটুয়ারপাড়া, তেকানী, নিশ্চিন্তপুর, চরগিরিশ ও মনসুর নগর ইউনিয়নে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্রে ডাক্তার ও কর্মীর সংখ্যা অপ্রতুল। নাটুয়ারপাড়া, ঘোড়াগাছা, ফুলড়োর, পানাগাড়ী, যুক্তিগাছা, পীরগাছা, বাংলাবাজার, জর্জিরা, ডিগ্রীদরতা, মাইজবাড়ী প্রভৃতি গ্রামগুলো অনেক আগেই যমুনা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে এসব দুর্দশাগ্রস্ত শত শত পরিবার দীর্ঘদিন যাবৎ মানবেতর জীবনযাপন করলেও তাদের পুনর্বাসনের সরকারি কোনো উদ্যোগ নেই। চর এলাকায় দিন-দুপুরে ডাকাতি হয়। মাঝে-মধ্যে পুলিশ এলেও তারা ফিরে আসার পরই পুনরায় নৌদস্যুদের দ্বারা পুরো এলাকা আক্রান্ত হয়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন