শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

উপ সম্পাদকীয়

প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্নাতীত নির্বাচনের অঙ্গীকার এবং বিদ্যমান বাস্তবতা

প্রকাশের সময় : ৩১ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

আবদুল আউয়াল ঠাকুর
এ বছরের মার্চে অনুষ্ঠিত হয়েছিল বিএনপির ষষ্ঠ কাউন্সিল। কাউন্সিলের উদ্বোধনী ভাষণে দলটির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া জাতীয় সমঝোতার ইতিবাচক ও ভবিষ্যৎমুখী রাজনীতির আহ্বান জানিয়েছিলেন। সমৃদ্ধ দেশ ও আলোকিত সমাজ গড়তে ভিশন ২০৩০ ঘোষণা করেছিলেন তিনি। তিনি প্রতিশোধের রাজনীতির বিপরীতে ভবিষ্যৎমুখী এক নতুন ধারার সরকার ও রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছিলেন। আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় সম্মেলনে দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমি কখনই চাইব না আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে নিয়ে কোনো প্রশ্ন উঠুক। সেই সাথে তিনি আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি এখন থেকেই নেয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এই নির্দেশনা থেকে বোঝা যায়, মেয়াদের মধ্যভাগ পার হওয়ার পর সরকার গণতন্ত্রের ঘাটতি পূরণের বিষয়টিকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিতে চাচ্ছে। এ থেকে প্রকৃত বিবেচনায় বিগত নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে যে গুরুতর প্রশ্ন উঠেছিল তারও একটা স্বীকৃতি অর্জিত হলো। বিগত নির্বাচনে অর্ধেকেরও বেশি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছিলেন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা। এই নির্বাচন নিয়ে উচ্চতর আদালতেরও পর্যবেক্ষণ রয়েছে। অন্যদিকে ৫ জানুয়ারি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার পর থেকেই বিএনপিসহ দেশের জাতীয়তাবাদী দেশপ্রেমিক গণতান্ত্রিক শক্তি এই নির্বাচন বাতিল দাবি করে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের আহ্বান জানিয়ে আসছে। ভারত ছাড়া গণতান্ত্রিক বিশ্বও বাংলাদেশে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের আহ্বান জানিয়ে আসছে। এখন যখন একটি নতুন নির্বাচনের খবর চাউর হয়ে উঠেছে ঠিক তখন প্রধানমন্ত্রীর এই আত্মোপলব্ধিজনিত ঘোষণা সামগ্রিকভাবেই আশার সঞ্চার করেছে। এখানে এ কথা বলে রাখা দরকার যে, বিএনপির সম্মেলন থেকে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে পূর্ণাঙ্গ মহাসচিব করে দলের ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা নির্ধারণের বিবেচনায় পরীক্ষিতদের সমন্বয়ে কমিটি করে দেয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগও বলছে নির্বাচনকে সামনে রেখে দলে পরিবর্তন আনা হয়েছে। বিশ্লেষকগণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদের পরিবর্তনকে যেভাবে দেখছেন তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে চীনের সাথে সরকারের চুক্তির বেলায় সৈয়দ আশরাফের ভূমিকা এবং সরকারের রাজনৈতিক মিত্র জাসদের সাথে সম্পর্কের তিক্ততা সৃষ্টিতে সৈয়দ আশরাফের ভূমিকা। অন্যদিকে মনে করা হয় দলীয় শৃঙ্খলা রক্ষার বিবেচনায় ওবায়দুল কাদেরকে সমর্থন করা হয়েছে। আগামী নির্বাচনে যাতে আওয়ামী লীগ থেকে একাধিক প্রার্থী না হতে পারে সেটি নিশ্চিত করাও নাকি পরিবর্তনের অন্যতম লক্ষ্য। এসব দিক বিবেচনায় বলা যায়, মূলত আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে।
এক যুগসন্ধিক্ষণে আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। বেশ আগে থেকেই বিশ্লেষকরা বলছিলেন, এ সম্মেলন থেকে দলটির আগামী নির্বাচনের ঘোষণা আসতে পারে। প্রধানমন্ত্রীর ভারষণকে অনেকেই যেমনি নির্বাচনী ইশতেহার হিসেবে উল্লেখ করেছেন তেমনি অনেকেই এসব ঘোষণায় আশার আলো দেখতে পেয়েছেন। তারা মনে করছেন, প্রধানমন্ত্রী সঙ্গত বিবেচনা থেকেই নাগরিক মর্যাদার বিষয়টি তুলে এনেছেন। তিনি প্রায় ৪০ মিনিটের বক্তৃতায় সরকারের বর্তমান উন্নয়নমূলক কর্মকা- তুলে ধরার পাশাপাশি আগামী ৪১ সাল পর্যন্ত দেশের উন্নয়নে আওয়ামী লীগ কী করতে চায় নির্বাচনী ইশতেহারের মতো তার বিস্তারিত বিবরণ তিনি তুলে ধরেছেন। এক্ষেত্রে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অর্থনীতি, কৃষি, যোগাযোগ, কূটনীতি, জলবায়ু বিদ্যুৎ, কর্মসংস্থান, তথ্যপ্রযুক্তি, সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ দমন, মাথাপিচু আয় বৃদ্ধিসহ সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্য নিয়ে সরকার কী করতে চায় সেসব পরিকল্পনাও তিনি তুলে ধরেছেন। নির্বাচনী ইশতেহার অথবা দায়িত্ব পালন যাই বলা হোক না কেন দেশ থেকে দারিদ্র্য ও সন্ত্রাস দূরীকরণের বিষয়কে হালকা করে দেখার কোনো সুযোগ নেই। ঐতিহাসিকভাবে বলা যায়, বাংলাদেশ দরিদ্র দেশ ছিল না। বিদেশিদের শোষণ-বঞ্চনা এবং শাসক শ্রেণির লুটপাটের কারণেই আজ দারিদ্র্য আসন গেড়ে বসেছে। এখনো পথেঘাটে, বাসাবড়িতে এক মুঠো ভাতের জন্য নিরন্ন মানুষের আর্তচিৎকার শোনা যায়। সে বিবেচনায় একটি দারিদ্র্যমুক্ত দেশ গঠনের অঙ্গীকার অভিনন্দনযোগ্য। অবশ্যই এক্ষেত্রে বিবেচনায় নিতে হবে, মানুষ কেন দরিদ্র হয়। সেই সাথে দারিদ্র্য দূরীকরণ তথা দারিদ্র্য প্রতিরোধের উপায় কী। সমাজের শোষণ, বঞ্চনা, দুর্নীতি, দুর্বৃত্তায়ন দূর না করে দারিদ্র্য ঠেকানো সম্ভব নয়। সম্পদের সুষম বণ্টন ও অর্থনৈতিক বৈষম্য দূরীকরণের বাস্তব কর্মপন্থা গ্রহণ দারিদ্র্য দূরীকরণে অত্যন্ত অপরিহার্য। প্রাসঙ্গিক আলোচনায় বলা যায়, হতদরিদ্রের জন্য ১০ টাকার চাল বিতরণ কর্মসূচি নিয়ে যেসব গুরুতর অভিযোগ রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে তালিকা প্রণয়নে অনিয়ম। নতুন যারা তালিকা তৈরি করবে তারা আকাশ থেকে কেউ আসবে না। এক্ষেত্রে দুর্নীতি-দুর্বৃত্তায়নের আশঙ্কা উড়িয়ে দেয়ার নয়। সমাজ থেকে সন্ত্রাস দূর করতে না পারলে কার্যত কোনো উন্নয়নই জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছায় না। সমাজে এখন যে মাত্রায় নাগরিক নিরাপত্তাহীনতা বিশেষ করে নারী ও মেয়ে শিক্ষার্থীদের অসহায়ত্ব লক্ষ্য করা যাচ্ছে তাতে করে যে কোনো উন্নয়ন কর্মসূচির সফলতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। এই বাস্তবতা বহাল রেখে সমৃদ্ধ বাংলাদেশের প্রত্যাশা আকাশ কুসুম ছাড়া কিছু নয়। একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণা এমন একসময়ে দিয়েছেন যখন কার্যত প্রশাসনে মারাত্মক সংকট বিরাজ করছে। বলা যায়, এক ধরনের ডেডলক সৃষ্টি হয়েছে। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে, যে বাহিনীর দাপটে সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকার দম্ভোক্তি করে আসছে এবং যাদের ওপর ভরসা করে আগামী নির্বাচন করার পরিকল্পনা করছে বলে মনে করা হচ্ছে সেই আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীতেই চলছে চরম বাস্তবতা। খোদ র‌্যাব থেকে লিখিতভাবে হুঁশিয়ার করে দিয়ে বলা হয়েছে, পরিস্থিতির উন্নতি না হলে যে কোনো সময়ে যা কিছু ঘটে যেতে পারে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, সরকার এখন বেশ সুবিধাজনক অবস্থায় রয়েছে বলে মনে করা হলেও দেখা যাচ্ছে ফোকলা হয়ে গেছে ভেতরটা। সরকারের বাহিনীগুলোর অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের সম্পর্কে বলা হয়েছে, পুলিশ বাহিনী এবং বিভিন্ন এজেন্সিতে পেশাগত প্রতিদ্বন্দ্বিতা, এক ধরনের ¯œায়ু যুদ্ধ এবং উত্তেজনা বিরাজ করার কারণে এক বিভাগের কাজ অন্য বিভাগের কাজকে আচ্ছাদিত করছে। এ নিয়ে বাহিনীতে কর্মরত ঊর্ধ্বতনদের অনেকেই এখন উদ্বিগ্ন। তারা মনে করছেন, এ ধরনের প্রবণতায় অনেক ক্ষেত্রেই চেইন অব কমান্ড ভেঙে পড়ছে। সমন্বয়ের অভাবে একই ঘটনার ব্যাপারে একেক বিভাগ একক রকম রিপোর্ট দিচ্ছে। পুলিশ সদর দফতর এবং র‌্যাপিট অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের মধ্যকার দ্বন্দ্ব পুনরায় উঠে আসায় পরিস্থিতি ভিন্ন আকার নিয়েছে। র‌্যাবের পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পুলিশের বিরুদ্ধে করা অভিযোগে বলা হয়েছে, অবস্থা এতটাই খারাপ, যে কোনো সময়ে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। বলা হয়েছে, কোনো কোনো ক্ষেত্রে পুলিশ সদস্যরা র‌্যাব সদস্যদের লাঠি এবং রাইফেল দিয়ে আঘাত করছে। র‌্যাব-পুলিশ দ্বন্দ্ব সংক্রান্ত সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, এগুলো পেশাগত প্রতিদ্বন্দ্বিতা। তিনি আরো বলেছেন, এটা তারাই মিটিয়ে নেবে। অন্যদিকে পুলিশের আইজিপি এ কে এম শহিদুল হক বলেছেন, র‌্যাব পুলিশ সদর দফতরকে বাইপাস করতে পারে না। মূলত বিষয়টি নতুন নয়। অনেক দিন থেকেই এ অবস্থা চলছে। তবে এখন অনেকটাই প্রকাশ্য রূপ নিয়েছে। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, বহুল আলোচিত ইতালীয় নাগরিক তাভেলার হত্যাকা-ের ব্যাপারে পুলিশ যখন বিএনপির সদস্যদের দায়ী করছে তখন র‌্যাব বলছে, এটা করেছে পুনঃগঠিত জমিয়াতুল মুজাহিদীনের সদস্যরা। ব্যাপারটি শুধু যে কেবল র‌্যাব-পুলিশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ তা কিন্তু নয়। দেখা যাচ্ছে, পুলিশের বিভিন্ন বাহিনী যেমন বিশেষ বাহিনী সিআইডি, এনএসআই, ডিটেকটিব ব্রাঞ্চের মধ্যেও সক্রিয় রয়েছে। গত কিছু দিনে এমন অসংখ্য ঘটনার উল্লেখ করা সম্ভব যেগুলো বিশ্লেষণ করলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সমন্বয়ের অভাবের দিকটিই বড় হয়ে ওঠে। এই বাস্তবতা দেশের বিনিয়োগ থেকে শুরু করে সর্বত্রই নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে যার ফলে সামগ্রিক বন্ধ্যত্ব সৃষ্টি হতে পারে। এ ছাড়াও নাগরিক নিরাপত্তার বিবেচনাতেও এটি মারাত্মক হুমকি। সামগ্রিক বিবেচনায় এটা অশনিসংকেতবাহী। এ থেকে যে বার্তা মূলত পৌঁছে যাচ্ছে বোধকরি তা সবার কাছেই জানা। যেভাবে বলা হয়, দেশে বালা এলে কাউকেই ছাড়ে না। সেভাবেই বলা চলে পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছে যে, এখন আর কেউ নিরাপদ নয়।
এখন বিবেচ্য বিষয় হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর বলার পর আর কতদিনের মধ্যে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এবং নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা কীভাবে নিশ্চিত করা যাবে। গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পক্ষে অনড় অবস্থানকারী বিএনপি ইতোমধ্যে সকলের মতামতের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন গঠনের প্রস্তাব দিয়েছে। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় সকল দলের অংশগ্রহণভিত্তিক নির্বাচনের উপায় খুঁজতে স্বাধীনতা ও মানবাধিকার বাস্তবায়ন ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় সাবেক প্রেসিডেন্ট বদরুদ্দোজা চৌধুরী প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা ও উপলব্ধিকে আশাব্যঞ্জক উল্লেখ করে বলেছেন, সকল দলের অংশগ্রহণভিত্তিক গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে হলে এখন থেকেই বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জনের পথে হাঁটতে হবে সরকারকে। এর জন্য যে সকল রাজনীতিক কারাগারে রয়েছেন, যারা হাজিরা দিচ্ছেন তাদের সকলের মামলা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য স্থগিত করতে হবে। নির্বাচনের মাঠে সকল রাজনৈতিক নেতা যাতে সমান সুযোগ পেতে পারে সেজন্য সকল ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা এবং ত্রুটিমুক্ত ভোটার তালিকা প্রণয়নের প্রতি তিনি গুরুত্বারোপ করেছেন। প্রাসঙ্গিক আলোচনায় তিনি হিংসা-বিদ্বেষপ্রসূত বক্তব্য থেকে দূরে থাকার জন্য সরকারের সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। অনুষ্ঠানে পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে আলোচকরা বলেছেন, একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের অন্তরায়গুলো এবং কীভাবে গত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে তার কারণ অনুসন্ধান দরকার। বিশেষ করে প্রতিবেশী যে দেশটির প্রত্যক্ষ সমর্থনে এ ধরনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পেরেছে তাদের নিবৃত্তকরণের উপায় খুঁজে বের করা জরুরি। দেশের যে সকল রাজনীতিবিদ একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পক্ষে তাদের এখন সময় এসেছে ওই দেশটির হস্তক্ষেপ বন্ধে কার্যকর ঐক্য গড়ে তোলা। লক্ষ্য অর্জনে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পক্ষের দলগুলো সম্মিলিতভাবে দেশটির এদেশের দূতাবাসে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দিতে পারে। প্রয়োজনে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থারও এ ব্যাপারে সহযোগিতা নেয়া যেতে পারে, যাতে তারা দেশটিকে বাধ্য করতে পারে। এ আলোচনাতেই উঠে আসে ২৮ অক্টোবরের প্রসঙ্গ। বিএনপি সরকার মেয়াদ পূর্ণ করে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে। নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য রাজনৈতিক দলগুলো নমিনেশনপত্রও দাখিল করে। এরপর সব কিছু উল্টে গেল। সবকিছুতে এক ধরনের মাস্তানি, লাঠিবাজি জায়গা দখল করে নিল। আর এর সূত্র ধরে একটি অনির্বাচিত সরকার ক্ষমতাসীন হয়ে গেল। ফলে গণতন্ত্রের পথচলার যে বাহন নির্বাচন তা রুদ্ধ হয়ে গেল। সকল দলের অংশগ্রহণের ভিত্তিতে যে গণতন্ত্র স্বৈরাচারের কারগার থেকে মুক্ত করা হয়েছিল তা আবার বন্দি হয়ে গেল। সে বন্দীদশা থেকে ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে পরিস্থিতি আরো গুরুতর আকার ধারণ করল। এখন সেই গণতন্ত্র মুক্তির আন্দোলনে যুক্ত হয়েছে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ইস্যু। চারদিকে তাই শোর উঠেছে, গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের। প্রধানমন্ত্রীর সর্বশেষ বক্তব্যেও তারই প্রতিধ্বনি শোনা গেছে।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এদেশের সবচেয়ে পুরনো একটি রাজনৈতিক দল। ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে জনমনে ব্যাপক আশার সঞ্চারে চেষ্টা করা হয়েছে জাতীয় সম্মেলনে। মুসলিম বিশ্বের কেউ না থাকলেও বিশ্বের অনেক দেশ ও রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেছেন। তারা সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাসও দিয়েছেন। গত কিছু দিনে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আলোচনার বিষয়বস্তুতেও পরিণত হয়েছে। বিশ্বব্যাংকসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মহল বাংলাদেশকে আর্থিক সাহায্য-সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে। বিএনপির সম্মেলনেও ভিশন ঘোষণা করা হয়েছে। কার্যত উন্নয়ন কোনো বিচ্ছিন্ন ব্যাপার নয়। এ হচ্ছে সম্মিলিত প্রচেষ্টার ধারাবাহিকতা। এর আগে বিএনপির সম্মেলনে দেয়া দলীয় চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার ভাষণকেও নির্বাচনী ইশতেহার হিসেবে পর্যবেক্ষক মহল উল্লেখ করেছিলেন। যাই হোক, এটাই সত্যি, যে কোনো উন্নয়নের জন্য স্থিতিশীলতা অত্যন্ত জরুরি। স্থিতিশীলতার সাথেই সম্পর্ক রয়েছে আস্থার। জাতীয় উন্নয়ন তথা বিনির্মাণে সকলের সম্পৃক্ততা নিশ্চিত করতেই একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অপরিহার্য। যে কোনো খেলার আগে মাঠ তৈরি করা হচ্ছে অপরিহার্য। খেলা শুরু হলে চোখ যায় রেফারির দিকে। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের যে অবস্থা তাতে সকল দলের অংশগ্রহণভিত্তিক নির্বাচনের ন্যূনতম বাস্তবতাও নেই। মানুষ ঘরের বের হতে পারছে না। সরকারের কথিত জঙ্গিবিরোধী অভিযানের নামে যেভাবে বিরোধী নেতা-কর্মীদের আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে রাখা হয়েছে তাতে নির্বাচনের মাঠে একক গোল করার এক ধরনের প্রবণতা সন্দেহের ঊর্র্ধ্বে নয়। প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন না চাওয়ার ভিন্ন ব্যাখ্যাও থাকতে পারে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের সবচেয়ে বড় দাবিদার বিএনপিকে তছনছ করে দিতে পেরেছে বলে মনে করছে সরকার। জামায়াতে ইসলামীও প্রায় নিষিদ্ধ রাজনৈতিক সংগঠনের মতো চলছে। বামদলগুলো অনৈক্য ও বিভ্রান্তির জালে ঘুরপাক খাচ্ছে। এই ফাঁকে গোল কবার চিন্তা হয়তো রয়েছে সরকারি দলের। যদি এভাবে সরকারি দল খেলতে চেয়ে থাকে তাহলে তার পরিণতি আগাম জানিয়ে দিয়েছে আন্তর্জাতিক মহল। আন্তর্জাতিক মহল সরকার নির্ধারিত বিরোধী দলকে পাত্তা দেয়া ছেড়ে দিয়েছে। প্রকাশ্যত তারা সরকার নির্ধারিত বিরোধীদের পাত্তা না দিয়ে যে বার্তা দিতে চেয়েছে তা সরকারের জন্য সুখকর নয়। এর আগে অগ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে যে দাগ পড়েছে তা যদি আরো বাড়ে তাহলে তা মূলত জাতীয় সংকটকেই আরও গভীর করবে। সে কারণেই সরকারি দলের মধ্যে যখন একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের তাকিদ অনুভূত হয়েছে তখন আর দেরি না করে দ্রুতই প্রধানমন্ত্রীর সদিচ্ছার সফল বাস্তবায়নে সকল বাস্তবসম্মত উদ্যোগ গ্রহণ করা উচিৎ।
awalthakur@gmail.com

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন