শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

ইরি-বোরো ধানের বীজতলায় পচন

সৈয়দপুরে ঘন কুয়াশা-শৈত্যপ্রবাহ

সৈয়দপুর (নীলফামারী) উপজেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১৯ জানুয়ারি, ২০২২, ১২:০৪ এএম

তীব্র শীত ও শৈত্যপ্রবাহে নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলায় ইরি-বোরো ধানের চারায় পচন দেখা দিয়েছে। নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে পুরো বীজতলা।
এতে আবাদ শুরুর প্রাক্কালেই কৃষকরা ধান চাষ নিয়ে ভোগান্তির শিকার হয়েছে। ছাই দিয়ে পচন রোধের চেষ্টা করেও শেষ রক্ষা হবে কি না তা নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন তারা। লাগাতার কয়েকদিন ধরে ব্যাপক কুয়াশা আর শৈত্যপ্রবাহের ফলে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে সরেজমিন দেখা যায় চলতি ইরি-বোরো মৌসুমের ধান চাষের জন্য তৈরি বীজতলার কিছু কিছু চারায় পচন ধরেছে। বেশিরভাগ চারা ক্ষেত হলুদ ও লাল বর্ণের হয়ে পড়েছে। এখনও যেগুলো সবুজ রয়েছে সেগুলোর গোড়াতেও কালো রং ধারণ করেছে। আরও কয়েকদিন আবহাওয়ার একই অবস্থা বিরাজ করলে ওই চারাগুলোও লাল বা হলুদ হয়ে পুরোপুরিভাবে পচনের মুখে পতিত হবে বলে মনে করছেন কৃষকরা। ফলে ইরি-বোরো ধান চাষ নিয়ে শুরুতেই হোচট খাওয়ার আতঙ্কে রয়েছেন তারা। এতে যথাসময়ে চারা রোপণ সম্ভব না হলে আগাম ফসল উৎপাদনের ক্ষেত্রে আশানুরূপ ফলন না পাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
উপজেলার কামারপুকুর ইউনিয়নের উত্তর অসুরখাই গ্রামের ডাক্তারপাড়ার মৃত আইয়ুব আলীর ছেলে কৃষক শরীফুল ইসলাম (৩৫) জানান, তার ২ বিঘা জমির ২৯ জাতের ধানের চারায় পচন ধরেছে। অধিকাংশই লালচে হয়ে গেছে। গত প্রায় এক সপ্তাহ ধরে ঘন কুয়াশা থাকায় শিশির জমে এ অবস্থা দেখা দিয়েছে।
তিনি বলেন, আমন মৌসুমে অতিবৃষ্টির ফলে ধানে পচন ও কারেন্ট পোকার আক্রমণে আশানুরূপ ফলন না হওয়ায় ক্ষতি পোষানোর জন্য আগাম ইরি-বোরো আবাদ করতে বীজতলা তৈরি করেছি। আবহাওয়া অনুকূল থাকায় অল্পদিনেই চারা বেশ হৃষ্টপুষ্ট ও সতেজ হয়ে উঠেছিল। আর কয়েকদিন পরেই জমি তৈরি হলেই রোপণের জন্য বীজতলা থেকে চারা তোলা হতো। অথচ এরই মাঝে নতুন বছরের প্রথম দিন থেকে শৈত্যপ্রবাহ শুরু হওয়ায় ব্যাপক কুয়াশার কবলে বিপাকে পড়েছি।
একইভাবে হতাশা ব্যক্ত করেন ওই এলাকার রোস্তম আলীর ছেলে কৃষক ইলিয়াস আলী (৪০)। তিনি বলেন, ১২০ শতক জমির চারা পুরোটাই নষ্ট হওয়ার পথে। ঘন কুয়াশা পড়া শুরু হওয়ার পরই প্রতিদিন খুব সকালে বীজতলায় গিয়ে চারা পাতায় জমে থাকা অতিরিক্ত শিশির ঝরাতে লাঠি চালিয়ে দিয়ে পরে ছাই ছিটাচ্ছি। কিন্তু দুপুর নাগাদ রোদের দেখা না মেলায় ভিজা ছাই না শুকানোর ফলে গোড়ায় কালো হয়ে যায়। এতে চারাগুলো হলুদ ও লাল হয়ে ক্রমেই পচনের দিকে যাচ্ছে। কিছু কিছুতো পচেই গেছে। ফলে চরম বিপাকে পড়ে আশঙ্কায় আছি। এভাবে আরও কয়েকদিন আবহাওয়া বিরুপ থাকলে সম্পূর্ণ বীজতলাই পচে যাবে। এতে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়বো এবং সময়মত আবাদ শুরু করা নিয়েও সমস্যায় পড়তে হবে। চারার সঙ্কট সৃষ্টি হলে যেমন রোপণ দেরি হবে তেমনি খরচও বেড়ে যাবে।
সৈয়দপুর উপজেলা কৃষি অফিসার শাহিনা বেগম জানান, বৈরী আবহাওয়ার কারণে কৃষকরা বীজতলা নিয়ে কিছুটা সমস্যায় পড়েছেন। তবে উপসহকারী কৃষি অফিসাররা নিজ নিজ এলাকায় কৃষকদের কুয়াশা থেকে বীজতলা রক্ষায় করণীয় বিষয়ে পরামর্শ ও প্রয়োজনে মাঠে গিয়ে প্রাকটিক্যালি সঠিক পদ্ধতি প্রশিক্ষণ প্রদান করছেন।
তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, দুই একদিনের মধ্যেই শৈত্যপ্রবাহ কেটে যাবে এবং আবারও সূর্যালোক ও তাপ পেয়ে হলুদ ও লাল হয়ে যাওয়া চারায় প্রয়োজনীয় সেচ দিলে তা পুনরায় সবুজ ও সতেজ হয়ে রোপণ উপযোগী হয়ে উঠবে। আর পচে যাওয়ার ক্ষেত্রে চাহিদা অনুযায়ী বিকল্প চারার সংস্থান করে দেবে কৃষি অফিস। তাই চারা সঙ্কটে আবাদ বাধাগ্রস্ত হওয়া নিয়ে শঙ্কিত না হতে তিনি কৃষকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন