ইসলামী আন্দোলনের স্মারকলিপি পেশ
পাঠ্যসূচির মাধ্যমে নাস্তিক্য ও হিন্দুত্ববাদ কায়েমের চক্রান্ত রুখে দিতে হবে এবং শিক্ষার সকলস্তরে ইসলামী শিক্ষা বাধ্যতামূলক করার দাবিতে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ গতকাল ২০ অক্টোবর বৃহস্পতিবার সারাদেশে জেলা প্রশাসক বরাবর গণস্বাক্ষর জমাদান ও স্মারকলিপি প্রদান কর্মসূচি পালন করেছে। জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি প্রদান পূর্ব জমায়েতগুলোতে জেলা নেতৃবৃন্দ বলেন, ভারতের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী সংবিধান থেকে আল্লাহর উপর আস্থা ও বিশ্বাস তুলে দিয়ে ধর্মনিরপেক্ষতা স্থাপন করার পর সরকারের মদদে কতিপয় হিন্দু ও নাস্তিক সিলেবাসে পরিবর্তন এনে হিন্দুত্ব ও নাস্তিক্যবাদ কায়েমে আদাজল খেয়ে মাঠে নেমেছে।
এসব কর্মসূচিতে জেলা নেতৃবৃন্দ নিন্মোক্ত বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করে আমাদের সন্তানদের মুসলমানিত্ব ধ্বংস করে হিন্দুত্ব ও নাস্তিক্যবাদে নিয়ে যাচ্ছে বলে তা বাতিলের দাবি জানান। অন্যথায় আমাদের ঈমান ও আমলের হেফাজতের স্বার্থে দেশবাসীকে সাথে নিয়ে সর্বাত্মক আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। ০১. পঞ্চম শ্রেণী-স্বঘোষিত নাস্তিক হুমায়ূন আজাদ লিখিত ‘বই’ নামক একটি কবিতা, যা মূলত মুসলমানদের ধর্মীয়গ্রন্থ পবিত্র কোরআনবিরোধী। ০২. ষষ্ঠ শ্রেণী- সংযুক্ত হয়েছে ‘লাল গরুটা’ নামক একটি ছোটগল্প। যা দিয়ে কোটি কোটি মুসলিম শিক্ষার্থীদের শেখানো হচ্ছে গরু হচ্ছে মায়ের মতো, তাই গরু জবাই ঠিক নয়। অর্থাৎ- হিন্দুত্ববাদ। ০৩. ষষ্ঠ শ্রেণী- অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে ভারতের হিন্দুদের তীর্থস্থান রাঁচি’র ভ্রমণ কাহিনী। ০৪. সপ্তম শ্রেণী- ‘লালু’ নামক গল্পে মুসলিম ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষা দেয়া হচ্ছে কালিপূজা, পাঁঠাবলির নিয়ম কানুন। ০৫. সপ্তম শ্রেণী- ‘বাংলাদেশের হৃদয়’ নামক একটি কবিতা। যেখানে রয়েছে হিন্দুদের ‘দেবী দূর্গা’র প্রশংসা। ০৬. অষ্টম শ্রেণী- পড়ানো হচ্ছে হিন্দুদের ধর্মগ্রন্থ ‘রামায়ণ’-এর সংক্ষিপ্তরূপ। ০৭. নবম-দশম শ্রেণী- প্রবেশে করেছে ‘আমার সন্তান’ নামক একটি কবিতা। কবিতাটি হিন্দুদের ধর্ম সম্পর্কিত ‘মঙ্গল কাব্যে’র অন্তর্ভুক্ত, যা দেবী অন্নপূর্ণার প্রশংসা ও তার কাছে প্রার্থনাসূচক কবিতা। ০৮. নবম-দশম শ্রেণী- অন্তর্ভুক্ত, করা হয়েছে ভারতের পর্যটন স্পট ‘পালামৌ’ এর ভ্রমণ কাহিনী। ০৯. নবম-দশম শ্রেণী- পড়ানো হচ্ছে ‘সময় গেলে সাধন হবে না’ শিরোনামে বাউলদের বিকৃত যৌনাচারের কাহিনী। ১০. নবম-দশম শ্রেণী- ‘সাকোটা দুলছে’ শিরোনামের কবিতা দিয়ে ৪৭-এর দেশভাগকে হেয় করা হয়েছে, যা দিয়ে কৌশলে ‘দুই বাংলা এক করে দেয়া’ অর্থাৎ বাংলাদেশকে ভারতের অন্তর্ভুক্ত, হতে শিক্ষা দেয়া হচ্ছে। ১১. নবম-দশম শ্রেণী- প্রবেশ করেছে ‘সুখের লাগিয়া’ নামক একটি কবিতা, যা হিন্দুদের রাধা-কৃঞ্চের লীলা-কীর্তন। অতএব এসকল লেখা মুসলমানের সন্তানদের প্রয়োজন নেই, তাই এগুলো অবিলম্বে সিলেবাস থেকে বাতিল করতে হবে।
শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত দেশের অধিকাংশ জেলা সদরেই শান্তিপূর্ণ জমায়েত ও ডিসির কাছে স্মারকলিপি পেশ কর্মসূচি পালিত হয়েছে। কোথাও কোথাও পুলিশী বাধা এবং সরকার দলীয় সন্ত্রাসীদের তোপের মুখে কর্মসূচি পালিত হয়েছে। যেসব জেলায় স্মারকলিপি পেশ হয়েছে সেগুলো হলো- নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, মাদারীপুর, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ, শরীয়তপুর, শেরপুর, গাজীপুর, ফরিদপুর, রাজবাড়ী, গোপালগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, টাঙ্গাইল, জামালপুর, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম মহানগর, কক্সবাজার, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান, নোয়াখালী, কুমিল্লা জেলা পূর্ব, চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, বি-বাড়ীয়া, সিলেট, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, খুলনা, ঝিনাইদহ, যশোর, নড়াইল, মাগুরা, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, কুষ্টিয়া, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, রাজশাহী, জয়পুরহাট, বগুড়া, পাবনা, নাটোর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ, নওগাঁ, রংপুর, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, ঠাকুরগাও, দিনাজপুর, গাইবান্ধা, পঞ্চগড়, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, ঝালকাঠী, বরগুনা জেলাসহ দেশের সকল জেলা সদরে পুলিশী বাধা উপেক্ষা করে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালিত হয়।
এদিকে হিন্দুত্ববাদ কায়েমের চক্রান্ত রুখে দিয়ে শিক্ষার সর্বস্তরে ইসলামী শিক্ষা বাধ্যতামূলক করার দাবিতে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ঘোষিত সারাদেশে জেলা প্রশাসক বরাবর গণস্বাক্ষর জমাদান ও স্মারকলিপি প্রদান কর্মসচি পালন সফল করায় ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর মুফতী সৈয়দ মোহাম্মদ রেজাউল করীম পীর সাহেব চরমোনাই দেশবাসীকে বিশেষ করে দেশের সকল জেলা নেতৃবৃন্দ, সদস্য-কর্মী ও মুহ্বিবীন সাংবাদিকসহ সর্বস্তরের জনতার প্রতি আন্তরিক অভিনন্দন ও মুবারকবাদ জানিয়ে বলেছেন, দেশে ইসলামের বিরুদ্ধে নতুনভাবে ষড়যন্ত্র চলছে। সংবিধানের মূলনীতি থেকে সর্বশক্তিমান আল্লাহর উপর আস্থা ও বিশ্বাস তুলে দেয়ার পর সিলেবাসের মাধ্যমে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে শেষ করে দিতে চাইছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন