বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

সৈয়দপুরে শতাধিক পরিবার বাড়ি ছাড়া, জনজীবন বিপর্যস্ত

সৈয়দপুর (নীলফামারী) উপজেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২৪ জানুয়ারি, ২০২২, ১২:০৩ এএম

নীলফামারীর সৈয়দপুরে গণপিটুনিতে আব্দুর রহমান (৪০) নামে এক ব্যক্তি নিহতের ঘটনায় গ্রেফতার আতংকে পুরুষশুন্য হয়ে পড়েছে গোটা গ্রাম। সেই সাথে জনজীবনে দেখা দিয়েছে বিপর্যস্ত। এ গ্রামের ৫০টি ঘর, পরিবারের সদস্য প্রায় দেড় শতাধিক সবাই গ্রেফতার আতংকে বাড়িছাড়া। গ্রামটি সবজিচাষ ও দিনমজুরের ওপর নির্ভরশীল হওয়ায় পুরুষ মানুষ অভাবে শীতের ক্ষেতের সবজিসহ অন্যান্য ফসল তুলতে না পাড়ায় ক্ষেতেই নষ্ট হওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে ও বাজারজাত করতে না পাড়ায় অর্থ অভাবে মানবেতর দিনাতিপার করছে। এমন পরিস্থিতিতে গত ২২ জানুয়ারি শনিবার সৈয়দপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও স্থানীয় নেতারা গ্রামটি পরিদর্শন করেন। তাঁরা গ্রামের মহিলাদের আশ্বাস্ত করে বলেন, আপনারা বাড়িতেই থাকেন, যাতে নিরিহ মানুষ হয়রানির শিকার না হয় সে ব্যাপারে আমরা দিনাজপুরের চিরিরবন্দর থানায় কথা বলবো।

মৃত্যুর ঘটনাটি ঘটেছে সৈয়দপুর উপজেলার বোতলাগাড়ী ইউপির পশ্চিম বালাপাড়া গ্রামে। এতে ১৫ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ১০/১৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। গত ১০ দিন ধরে ওই গ্রামে হাতেগোনা কয়েকজন বয়স্ক নারী, শিশু, স্কুল শিক্ষার্থী ও গবাদিপশু ছাড়া বসতভিটায় কেউ নেই। এ অবস্থায় নারী-পুরুষ, যুবক গ্রেফতারের ভয়ে আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে অবস্থান করছেন।
সরেজমিনে পশ্চিম বালাপাড়ায় দেখা যায়, গ্রামজুড়ে বিরাজ করছে সুনসান নিরবতা। খোঁজাখুজির পর এলাকায় দেখা মিলল কয়েকজন বয়স্ক নারী, শিশু ও স্কুল পড়ুয়া তরুণের। তাদের সকলের চোখে মুখে রয়েছে আতংকের ছাপ। কথা হলে তারা জানান, গ্রামের পুরুষ ও যুবকরা ঘটনার পর থেকে বাড়ি ঘর ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। প্রতি রাতে পুলিশ এসে লোকজনের খোঁজ-খবর করছে। আমরা সবাই ভয়ের মধ্যে বাড়িতে অবস্থান করছি।
গ্রামের বয়স্ক বাসিন্দা রশিদা বেগম ও পারুল বেগম নামের দুই গৃহবধূ জানান, এই গ্রামের মানুষ সবজি চাষ, অটোরিক্সা ও ভ্যান চালানোর পেশায় জড়িত। ঘটনার পর থেকে আমাদের এখন কঠিন সমস্যা ক্ষেতে ফলানো ফুল কপি, বেগুন, আলু, সীম, শাক বিক্রি করতে পারছি না। শীতের শাক সবজি ক্ষেতে নষ্ট হওয়ার মত হয়েছে। এতে লাখ লাখ টাকা লোকসান গুণতে হবে। দশম শ্রেণির স্কুল ছাত্র জাকির হোসেন, ছাত্রী রূপালী, সুমী ও লাবনী বলেন, প্রতিদিনই টহল পুলিশ গ্রামে আসছে। ভয়ে রাতের বেলা অন্যের বাড়িতে গিয়ে থাকতে হচ্ছে। স্কুলের লেখাপড়া ঠিকমত করতে পারছি না।
সেদিনের ঘটনা জানতে চাইলে তারা বলেন, বাড়িতে চোর ঢোকার হৈইচৈই শুনেছি, এর বেশি কিছু জানি না। এ ব্যাপারে বোতলাগাড়ীর নবনির্বাচিত ইউপি সদস্য মহির উদ্দিন বলেন, মামলার আসামি হিসাবে অজ্ঞাতনামা উল্লেখ থাকায় নির্দোষী মানুষ বেকায়দায় পড়েছেন। ফলে গ্রেফতার আতংকে নারী-পুরুষ শূন্য হয়ে পড়েছে গোটা গ্রাম। গ্রামের বেশীর ভাগ মানুষ সবজি চাষ করে সংসার চালান।
এ প্রসঙ্গে সৈয়দপুর থানার ওসি আবুল হাসনাত খান জানান, হত্যাকান্ডের ঘটনা যদিও সৈয়দপুর, কিন্তু লাশ উদ্ধার হয়েছে পার্শ্ববর্তী চিরিরবন্দর থানা এলাকায়। তাই মামলাটি ওই থানা তদন্ত করছে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও চিরিরবন্দর থানার এসআই তাজুল ইসলাম জানান, গ্রেফতার ৩ জন আসামিকে দিনাজপুর কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তারা আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। মামলার বাকি আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। গ্রাম পুরুষশূন্য প্রশ্নে বলেন, কেউ গ্রাম ছাড়া হলে ধরে নিতে হবে সে অপরাধে জড়িত থাকতে পারে। তবে নির্দোষ নিরীহ মানুষের ভয়ের কিছু নেই।
উল্লেখ্য, গত ১৪ জানুয়ারি গভীর রাতে ওই এলাকার পশ্চিম বালাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা ভ্যানচালক হোসেন আলীর বাড়িতে তিন চোর প্রবেশ করে। এ সময় গ্রামবাসীর গণপিটুনিতে চোর সন্দেহে আটক একজনের মৃত্যু হয়। পরদিন সকালে সৈয়দপুর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। এ সময় পুলিশ লাশের সন্ধানে গ্রামজুড়ে তদন্তে নামে। একপর্যায়ে চিরিরবন্দর উপজেলার ঠাকুরেরহাট জোতরঘু এলাকায় ডালিয়া ক্যানেলে লাশের সন্ধান পায়। পরে চিরিরবন্দর পুলিশ লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। নিহত আব্দুর রহমান পঞ্চগড় জেলা শহরের চানপাড়া এলাকার মফিজ উদ্দিনের ছেলে। এ ওই উপজেলার ফতেজংপুর ইউপির গ্রাম পুলিশ আব্দুর রহিম বাদী হয়ে থানায় হত্যা মামলা করেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন