শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অভ্যন্তরীণ

বিলুপ্তির পথে দৃষ্টিনন্দন ঢোলকলমি গাছ

মো. শওকত হোসেন, লৌহজং (মুন্সীগঞ্জ) থেকে | প্রকাশের সময় : ২৬ জানুয়ারি, ২০২২, ১২:০৪ এএম

ঢোল কলমি, বেড়ালতা বা বেড়াগাছ নামেও পরিচিত। দেশের সব এলাকার রাস্তার ধারে, বাড়ির পাশে, মাঠে-ঘাটে, জলাশয়ের ধারে, খাল-বিলের ধারে সর্বত্রই চোখে পড়ে। গ্রামে অবহেলায় বেড়ে ওঠা আগাছা হিসেবে পরিচিত বেড়ালতা বা ঢোল কলমি। ঢোল কলমি গুল্ম প্রজাতির উদ্ভিদ। এর কান্ড দিয়ে কাগজ তৈরি করা যায়। সবুজ পাতার গাছটি ছয় থেকে দশ ইঞ্চি লম্বা হয়ে থাকে।
অযত্নে অবহেলায় জন্ম নেয়া ঢোলকলমি গাছের ফুল যেকোন বয়েসি মানুষের নজর কাড়বে। পাঁচটি হালকা বেগুনি পাপড়ির ফুল দেখতে বেশ আকর্ষণীয়। সারা বছরই ঢোল কলমির ফুল ফোটে। তবে বর্ষার শেষে শরৎ থেকে শীতে ঢোলকলমি ফুল বেশি দেখা যায়। একটি মঞ্জরিতে চার থেকে আটটি ফুল থাকে। ফুলে মধুর জন্য কালো ভোমরা আসে।
এ গাছ অল্পদিনের মধ্যেই ঘন ঝাড়ে পরিণত হয়। এ গাছ জমির ক্ষয়রোধ করে ও সুন্দর ফুল দেয়। দেশের গ্রামাঞ্চলে এই গাছ জমির বেড়া হিসেবে ব্যবহার করা হয়। অনেকে আবার জ্বালানি হিসেবেও ব্যবহার করে। নদীর তীরে কিংবা বিশাল ফসলের মাঠে ঢোল কলমি জন্মে পাখির বসার জায়গা করে দেয়। এ গাছে বসে পাখি পোকামাকড় খায়। ফুলের মধু সংগ্রহ করতে কালো ভোমরার আনাগোনা দেখা যায়। গ্রামের শিশুরা ঢোলকলমির ফুল দিয়ে খেলা করে।
এক সময় মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ে গ্রাম অঞ্চলে অধিকংশ পরিবার ফসলের ক্ষেত, পুকুর ও বসতবাড়ির চারপাশে বেড়ার প্রধান উপকরণ হিসেবে এই ঢোল কলমি ব্যবহার করছে। কেউ কেউ কলমি গাছের সাথে নেট ও বাঁশের চটা ব্যবহার করে বেড়াকে শক্তিশালী করছে। অনেকেই অতিরিক্ত অংশ রান্নার কাজে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করছে। ঢোল কলমির বীজ ও পাতায় বিষাক্ত উপাদান থাকে। এবং তেতো স্বাদের সাদা কষ থাকায় এর পাতা গরু ছাগল খায় না। তাই বেড়া হিসেবে এটা ব্যবহারের চাহিদা বেশি। ঢোল কলমি খরা ও বন্যায় সহনীয় বলে প্রতিকুল পরিবেশেও টিকে থাকতে পারে। সহজেই মারা যায় না, খাল বিল ডোবা এবং খোলামেলা পরিবেশে বংশবৃদ্ধি করে। কীটপতঙ্গভুক পাখি ঢোলকলমির ডালে বসে পোকা ধরে খায়। গত ৯০ দশকে পোকার ভয়ে এ গাছ ধ্বংস করার একটা হিড়িক পড়ে গিয়েছিল। দেশজুড়ে ভয়ংকর আতঙ্ক ছড়িয়েছিল ঢোলকলমি গাছে থাকা একধরনের পোকা। গুজব রটে যায়, এই পোকা এতটাই ভয়ংকর যে, কামড় দিলে মৃত্যু অবধারিত, এমন কি স্পর্শ লাগলেও জীবন বিপন্ন হতে পারে।
এইসব খবর রেডিও, টিভি, পত্রিকায় মহামারীর মৃত্যুর খবরের মত কবে কজন মরল কজন হাসপাতালে গেল সেরকম ভাবে প্রচারিত হয়েছিল মাসজুড়ে। সারাদেশে সাধারণ মানুষ গণহারে, এমন কি স্থানীয় প্রশাসনও ঢোলকলমি গাছ কেটে সাবার করেছিল। এই বিদঘুটে নামের পোকাটি যে ত্রাস সৃষ্টি করেছিলো আমাদের এই দেশে, তার জুড়ি মেলা ভার! শুধু গ্রামে না, ঢোল কলমি পোকার আতঙ্ক ছড়িয়ে গেছিলো খোদ ঢাকা শহরেও। এটা না কি খুব বিষাক্ত এক পোকা, যার সংস্পর্শে আসলেই নির্ঘাৎ মৃত্যু। আতঙ্ক এই পর্যায়ে পৌঁছেছিলো, যে ছোট বড় সবাই তটস্ত থাকতো কখন যেনো কি হয়। আতংক যখন চরম পর্যায়ে তখন টিভিতে একজন বিশেষজ্ঞ পোকাটি ধরে এনে নিজের হাতের উপর ছেড়ে দিয়ে হাটিয়ে, তারপর হাত দিয়ে পিষে মেরে দেখিয়ে প্রমাণ করেছিলেন যে এটি আসলে খুবই নিরীহ একটি কীট, মোটেও প্রাণ সংহারী নয়। এরপর থেকেই আতঙ্ক কেটে যায়।
ঢোলকলমি আতঙ্ক, গুজব এবং মিডিয়ার ভূমিকা এখন শিক্ষার বিষয়। এই ঢোল কলমি অথচ নদীতীর, খালপাড়ের মাটিকে শক্ত করে ধরে রাখা, ভূমিক্ষয় রোধ, ভাঙনরোধে ঢোলকলমি গাছের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। ঢোলকলমি ফুল সারা বছরই ফোটে। তবে বর্ষার শেষ ভাগ থেকে শরৎ-শীতে প্রস্ফুটনের জোয়ার থাকে বেশি। একটি মঞ্জরিতে ৪-৮টি ফুল থাকে। ফানেলাকার আকৃতির ফুল। পাঁচটি হালকা বেগুনি বা হালকা গোলাপি পাপড়ি। ফুলে মধুর জন্য কালো ভোমরা আসে।
লৌহজং উপজেলার হাড়িদিয়া গ্রামের গৃহস্থ হাসেম শেখ বলেন, এটা খুবই উপকারী গাছ। এই ঢোল কলমির সবচেয়ে বড় সুবিধা হল গরু ছাগলে না খাওয়ায় এটা বেড়া হিসেবে ব্যবহার করা যায়। নদীতীর ভাঙন রক্ষা করে। অনেক সময় রান্নার কাজেও ব্যবহার করা হয়।
বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে প্রাকৃতিক বেড়া হিসেবে পরিচিত এই ঢোল কলমির। প্রাণ ও প্রকৃতি সুরক্ষায় মূল্যবান উদ্ভিদকে সংরক্ষণের ও সম্প্রসারণের জন্য সকলের উদ্যোগ গ্রহণ করা উচিত।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (11)
সোহাগ তানভীর ২৬ জানুয়ারি, ২০২২, ১২:৫৩ পিএম says : 0
ছোটবেলায় ঢোলকলমির গাছ ও ফুল দিয়ে খেলা করেছি অনেক।
Total Reply(0)
Rohul Amin ২৬ জানুয়ারি, ২০২২, ১২:৫৪ পিএম says : 0
ফুল দিয়ে মাইক বানিয়ে গাছে উপর বেঁধে দিয়ে কত খেলা করেছি।
Total Reply(0)
Akhter Jahid ২৬ জানুয়ারি, ২০২২, ১২:৫৪ পিএম says : 0
ধন্যবাদ ইনকিলাব! ফরিদপুরে প্রায় সব গ্রামেই ছিলো, আসলে সেই গুজবের পর থেকে কমতে থাকে এই উপকারী গাছ। বাস্তবেই সেই পোকাগুলো ছিলো নিরীহ, আমাদের এলাকায় কেউ আক্রান্ত হয়নি।
Total Reply(0)
Zahid Islam ২৬ জানুয়ারি, ২০২২, ১২:৫৫ পিএম says : 0
বেড়ীবাঁধ আছে এমন এলাকার জন্য এই গাছ চমৎকার বেড়ার কাজ করে। এক কথায়' প্রাকৃতিক পর্দা'। এই ঢোল কলমি নদীতীর ও খালপাড়ের মাটিকে শক্ত করে ধরে রাখে, ভূমিক্ষয় রোধ এবং ভাঙনরোধে ঢোলকলমি গাছের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। এছাড়াও এই ঢোল কলমির সবচেয়ে বড় সুবিধা হল গরু ছাগলে না খাওয়ায় এটা বেড়া হিসেবে দারুণ কাজ করে এবং রান্নার কাজে জ্বালানি হিসেবেও এই গাছ ব্যবহার করা হয়।
Total Reply(0)
আতিকুর রহমান ২৬ জানুয়ারি, ২০২২, ১২:৫৫ পিএম says : 0
এই ঢোলকলমির সাথে শৈশবের অনেক স্মৃতি জড়িত।
Total Reply(0)
GM Masum ২৬ জানুয়ারি, ২০২২, ১২:৫৭ পিএম says : 0
মিলিটারি গাছ হিসাবে পরিচিত আমার এলাকায়। শৈশবের অনেক স্মৃতি বিজরিত এই গাছ।
Total Reply(0)
Arobi Aorthi ২৬ জানুয়ারি, ২০২২, ১:০১ পিএম says : 0
সত্যি আগে আমাদের বাড়ির আশেপাশে অনেক ছিলো এখন দেখি না
Total Reply(0)
Moyazzem ২৬ জানুয়ারি, ২০২২, ১:০৮ পিএম says : 0
Good
Total Reply(0)
Jahidul Islam ২৬ জানুয়ারি, ২০২২, ৫:১৯ পিএম says : 0
সুন্দর প্রতিবেদন। আসলেই হারিয়ে যাচ্ছে ঢোল কলমি।পোকাটার কথা কিছুটা মনে আছে।কালো আর লম্বাটে কিছুটা।
Total Reply(0)
আHMED আFAJ ২৬ জানুয়ারি, ২০২২, ৬:১৭ পিএম says : 0
রিপোর্টের ভিতরে একটা ভুল নজরে পড়লো,ডোল কলমিকে ৬-১০ ইঞ্চি বলা হয়েছে যেটা আসলে হবে ৬-১০ ফিট,আর আমাদের নোয়াখালীর স্থানীয় ভাষায় এটাকে বলা হতো ওদ্রা গাছ বা ইন্ডিয়ার ঢাল, তবে এখন এই মায়াবী গাছটি ঔষধের জন্য হলেও পাওয়া দুষ্কর!
Total Reply(0)
md asif eqbal shipon SK ২৯ জানুয়ারি, ২০২২, ১:২০ পিএম says : 0
Sotty vi ai gas onak dhakese But akhon dhakenah????????
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন