শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

ইভিএমে ধীরগতিতে ভোটাররা ক্ষুব্ধ

ষষ্ঠ ধাপে ২১৮ ইউপি নির্বাচনের ভোটগ্রহণ সম্পন্ন ইভিএমএ কম ভোট পড়ার কারণ খতিয়ে দেখছে ইসি : এ ধাপেও বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় ১৪৪ জন নির্বাচিত

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ১২:০২ এএম

কয়েকটি স্থানে সংঘর্ষের মধ্য দিয়ে ষষ্ঠ ধাপে ২২ জেলার ৪২ উপজেলার ২১৮টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন শেষ হয়েছে। গতকাল সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত চলে ভোটগ্রহণ। এর মধ্যে ২১৬ ইউপিতে ইভিএমে এবং মাত্র দুটি ইউনিয়নে ব্যালটের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ হয়। তবে ইভিএম-এ ভোট দিতে গিয়ে ভোটারদের ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। অনেকে ভোট না দিয়েই বাড়ি ফিরে গেছেন। ইভিএমএ ভোটগ্রহণে ধীরগতি থাকায় ভোটার ও প্রার্থীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
এদিকে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণে ধীরগতি এবং ভোট কম পড়ার কারণ এক সপ্তাহের মধ্যে খতিয়ে দেখতে নির্বাচন কমিশন (ইসি) টেকনিক্যাল কমিটি গঠন করেছে। নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিব মো. হুমায়ুন কবীর খোন্দকার নির্বাচন ভবনে গতকাল এসব কথা বলেন। ষষ্ঠ ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শেষে তিনি বলেন, ভোটগ্রহণ সুষ্ঠু এবং সুন্দর পরিবেশে সম্পন্ন হয়েছে। তবে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণে ধীরগতি ছিল। এতে ভোট কম পড়েছে। ৫৫ শতাংশের মতো ভোট পড়েছে। মাঠ পর্যায়ের যে তথ্য পেয়েছি, তাতে সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে কোনো অপ্রীতিকর খবর পাওয়া যায়নি। কোনো কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়নি।
নির্বাচনের এ ধাপে সারা দেশে বিভিন্ন পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ১১ হাজার ৬০৪ জন প্রার্থী। এর মধ্যে চেয়ারম্যান পদে ১ হাজার ১৯৯ জন। সংরক্ষিত নারী সদস্য পদে ২ হাজার ৫৫৯ এবং সাধারণ সদস্য পদে ৭ হাজার ৮৪৬ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন ১৪৪ প্রার্থী। এদের মধ্যে চেয়ারম্যান পদে ১২ জন, সংরক্ষিত নারী সদস্য পদে ৩২ জন এবং সাধারণ সদস্য পদে ১০০ জন।
চলমান ইউপি নির্বাচনে এরই মধ্যে পাঁচ ধাপের ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে। গত ২১ জুন ও ২০ সেপ্টেম্বর প্রথম ধাপের দুই দফায় ৩৬৯টি এবং ১১ নভেম্বর দ্বিতীয় ধাপে ৮৩৩টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এছাড়াও ২৮ নভেম্বর তৃতীয় ধাপে ১ হাজার ইউপিতে এবং চতুর্থ ধাপে ২৬ ডিসেম্বর ৮৩৬ ইউপিতে ভোটগ্রহণ করা হয়। পঞ্চম ধাপে গত ৫ জানুয়ারি ৭০৮ ইউপিতে ভোট হয়েছে। ৩১ জানুয়ারি ষষ্ঠ ধাপে ২১৮ ইউপিতে ভোটগ্রহণ হবে। সপ্তম ও শেষ ধাপে ১৩৮ ইউপিতে আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি ভোট অনুষ্ঠিত হবে।
আমাদের সংবাদদাতাদের পাঠানো তথ্যমতে, সিলেটের বাহুবলের ৭ ইউনিয়নের ৭৬ কেন্দ্রে উৎসবমুখর পরিবেশে ভোটগ্রহণ হয়েছে। সকালে থেকেই কেন্দ্রে কেন্দ্র ভোটারদের দীর্ঘলাইন ছিল। তবে ইভিএম-এ ভোটগ্রহণের গতি কম থাকায় ভোটার ও প্রার্থীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। অনেকে ভোট না দিয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। এদিকে, ভোটগ্রহণের আগের রাতে মো. আনিছুর রহমান চৌধুরী (কামাল) নামের এক মেম্বার (ইউপি সদস্য) প্রার্থীর মৃত্যু হয়েছে।
এ ছাড়া নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলার ৪ নম্বর নিয়ামতপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ সদস্য প্রার্থী নকুল চন্দ্র দাস মারা গেছেন। ভোটের দিন সকাল সাড়ে ৮টায় ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার পথে তিনি মারা যান।
ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা সংবাদদাতা জানান, ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নৌকার অফিসে হামলা ও ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে বিদ্রোহী প্রার্থীর বিরুদ্ধে। হামলায় আহত হয়েছে নৌকার ছয় কর্মী। নির্বাচনের আগের রাতে এ সংঘাতের সৃষ্টি হয়। এঘটনায় দু’পক্ষই মামলা দায়ের করেছে। জানা যায়, সপ্তম ধাপের ইউপি নির্বাচনকে সামনে রেখে ১নং ঈশ্বরগঞ্জ ইউনিয়নে নৌকা ও বিদ্রোহী প্রার্থী সমর্থকদের মধ্যে দিন দিন উত্তেজনা বাড়ে। প্রতিদিনের মতো নির্বাচনের আগের দিন প্রচার-প্রচারণা করে সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরার পথে খৈরাটি ও আশ্রবপুর গ্রামে অতর্কিতভাবে নৌকা প্রতীকের ওপর বিদ্রোহী প্রার্থী হারিছ উদ্দিনের চশমা প্রতীকের কর্মী-সমর্থকরা হামলা চালায়। ওই সময় নৌকার ৬ জন কর্মী মারাত্মক আহত হয়। হামলায় আহতরা হলেন, জাহাঙ্গীর, সাকিব, শহীদ, জালাল, সোহেল ও রাসেল। একই সময় সঞ্চাপুর ও আশ্রবপুর গ্রামে নৌকা প্রতীকের দু’টি অফিসে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করা হয়। এসময় অফিসের সামনে ৭টি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়। অফিস সংলগ্ন একটি মুদি দোকানে ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়। আশ্রবপুর গ্রামের ফজলুল হক বলেন, আমার বাড়িতে নৌকার অফিস করায় চশমা প্রতীকের হারিছ উদ্দিনের লোকজন নৌকার অফিস ভাঙচুর করে। এসময় পাশে থাকা আমার একটি মুদি দোকান লুট করে। এ ঘটনায় বিদ্রোহী প্রার্থী ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হারিছ উদ্দিনের সাথে কথা বলতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। আওয়ামী লীগ নৌকা মনোনীত প্রার্থী আবু হানিফা বলেন, নির্বাচনে পরাজয়ের আশঙ্কায় বেপরোয়া হয়ে উঠেছে নৌকার বিদ্রোহী সমর্থকরা। নৌকার নির্বাচনী মাঠ ধ্বংসের চেষ্টার অংশ হিসেবে ওই হামলা চালানো হয়েছে। হামলায় আমার ছয় কর্মীকে মারাত্মকভাবে আহত করা হয়েছে ও দু’টি অফিস ভাঙচুর করা হয়। আমি নৌকার কর্মী ও সমর্থকদের শান্ত থাকতে বলেছি। এ বিষয়টি নিয়ে থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
টাঙ্গাইল জেলা সংবাদদাতা জানান, ষষ্ঠ ধাপে টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলার ৫টি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) নির্বাচনে সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। সকাল থেকেই উৎসবমুখর পরিবেশে লাইনে দাঁড়িয়ে ভোটারা ভোট দিয়েছেন। ইউনিয়ন পরিষদে প্রথমবারের মতো এ আসনে ইভিএম পদ্ধতিতে ভোটগ্রহণ এবং দলীয় প্রতীক থাকায় ভোটারদের মধ্যে উৎসবের আমেজ ছিল।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন