যারা রাজনৈতিক দলের লিখিত মতামত বদলে দিতে পারে, তারা নির্বাচনের ফল বদলে দেবে না, তার নিশ্চয়তা কী : গোলাম মোর্তোজা
এবারও কত শত কোটি টাকা লুটপাট হবে সেটা দেখার বিষয় : মাহমুদুর রহমান মান্না
আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য নতুন করে ২ লাখ ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) কেনা, মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের প্রকল্প চ‚ড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এতে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৮ হাজার ৭১১ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। প্রকল্প প্রস্তাব দ্রæত পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হবে। রাজধানীর নির্বাচন কমিশন ভবনে গতকাল কমিশন সভা শেষে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়েছেন। তবে বেশির ভাগ রাজনৈতিক দলের মতামত উপেক্ষা করে নেওয়া ইসির এই সিদ্ধান্ত দেশের চলমান রাজনৈতিক সঙ্কটকে আর প্রকট করবে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। এ ছাড়া এ প্রকল্প গ্রহণের মাধ্যমে ইসি সরকারের ইচ্ছাপূরণে কাজ করছেন বলেও অনেকে মন্তব্য করেছেন। আবার অনেকে এই প্রকল্পের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা লুটপাটের শঙ্কাও প্রকাশ করছেন।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ১৫০ আসনে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট গ্রহণে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) অতি আগ্রহ জনমনে নানান সন্দেহের সৃষ্টি করেছে। একই সাথে ইসির ঘোষিত রোডম্যাপে ইভিএম নিয়ে যে অসত্য তথ্য দেওয়া হয়েছে তাতে এ সংস্থাটির প্রতি রাজনৈতিক দলের আস্থাহীনতা আরও বেড়ে গেছে। সংলাপে অংশ নিয়ে বেশির ভাগ রাজনৈতিক দল ইভিএমের বিপক্ষে মত দিলেও ইসি তাদের ঘোষিত রোডম্যাপে পক্ষে মত দেয়া দলের সংখ্যা বেশি বলে দাবি করেছে। ইসির সঙ্গে জুলাই মাসে সংলাপে অংশ নিয়ে সরাসরি ইভিএমের পক্ষে বলেছিল মাত্র চারটি দল। কিন্তু রোডম্যাপে ইসি ১৭টি দল ইভিএমের পক্ষে বলেছে এমন তথ্য দিয়েছে। এতে করে ইসির প্রতি রাজনৈতিক দল ও সাধারণ মানুষের আস্থাহীনতা আরও বাড়ছে।
এ বিষয়ে সাংবাদিক গোলাম মোর্তোজা বলেন, ‘সঙ্গতভাবেই প্রশ্ন আসে যে, নির্বাচন কমিশন যদি রাজনৈতিক দলের বক্তব্য ও লিখিত মতামত বদলে দিতে পারে, তারা নির্বাচনের ফল বদলে দেবে না, তার নিশ্চয়তা কী? এই আশঙ্কা বা প্রশ্নের স্বচ্ছ উত্তর কি নির্বাচন কমিশনারদের কাছে আছে? যদি না থাকে, তবে কি তাদের পদে বা দায়িত্বে থাকার কোনো নৈতিক অধিকার থাকে?’
ডাকসুর সাবেক ভিপি ও নাগরিক ঐক্যের আহবায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, সরকার ইভিএমে নির্বাচন করতে চায় বলেই ইসিও এখন চাচ্ছে। সরকারের ইচ্ছাপূরণ করাই এই ইসির কাজ। সরকারও ইসিকে খুশি করতে ইভিএম কেনায় প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প উপহার দিচ্ছে। আমাদের দেশেতো প্রকল্প মানেই অবাধ লুটপাট। এর আগেও ইভিএম কেনায় কোটি কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। এবারও কত শত কোটি টাকা লুটপাট হবে সেটাই দেখার বিষয়।
সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার ইনকিলাবকে বলেন, বেশির ভাগ রাজনৈতিক দলের মতামত উপেক্ষা করে ইভিএম কেনার যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে তা সর্বমহলে প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। এমনিতেই অর্থনৈতিক মন্দা চলছে। এ অবস্থায় প্রায় ৯হাজার কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদনের বিষয়টি দেশবাসীকে হতবাক করে। এর মধ্যমে নির্বাচন কমিশন সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়নে কাজ করছে এমনটাই মনে হচ্ছে। ইভিএমে ভোট গ্রহণের সিদ্ধান্তের ফলে রাজনৈতিক সঙ্কট আরও বাড়বে।
ইসির বৈঠকে প্রকল্প অনুমোদনের পর নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, আপনারা জানেন আজ দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে কমিশন সভা ছিল। সর্বোচ্চ ১৫০ আসনে ইভিএমের মাধ্যমে ভোটগ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন। আপনারা এ-ও জানেন, বর্তমানে ৭০টি আসনে ইভিএম ভোটগ্রহণের সক্ষমতা আছে কমিশনের। ফলে ১৫০ আসনে ইভিএমে ভোট হলে আমাদের আরও ইভিএম মেশিন তথা সরঞ্জামাদি লাগবে।
তিনি বলেন, এ লক্ষ্যে একটি প্রকল্প তৈরির জন্য সচিবালয়কে বলা হয়েছিল। সেটা তারা তৈরি করে গত সভায় উপস্থাপন করেছিল। সেখানে আমাদের কিছু প্রশ্ন ছিল। সে প্রশ্নের উত্তরগুলো সঠিকভাবে দিতে পারেনি বলে আমরা তাদের বলেছিলাম এগুলো ঠিক করে নিয়ে আসার জন্য। তথ্যগুলো আজকের সভায় যথাযথভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে সব তথ্য ঠিক আছে বলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
মো.আলমগীর বলেন, এখন আমরা পরিকল্পনা কমিশনে অনুমোদনের জন্য পাঠাবো। এর আগে আরেকটি কাজ হচ্ছে, জনবলের জন্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে একটি সভা করতে হবে।
নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অসীম কুমার দেবনাথ সাংবাদিকদের বলেন, দেড়শ আসনে ইভিএম ব্যবহার করার জন্য ৮ হাজার ৭১১ কোটি ৪৪ লাখ টাকার প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় প্রায় দুই লাখ ইভিএম কেনা হবে। এছাড়া ইভিএম সংরক্ষণ জনবল তৈরি ও প্রশিক্ষণের জন্য এখানে ব্যয় রাখা হয়েছে।
ইভিএম নিয়ে শুরু থেকেই রয়েছে বিতর্ক। এক পক্ষ এ পদ্ধতির ভোটকে সাধুবাদ জানালেও বিএনপি, জাতীয়পার্টিসহ দেশের অন্যান্য অনেক রাজনৈতিক দল শুরু থেকেই এর বিরোধিতা করে আসছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও নির্বাচন কমিশন মনে করে, ইভিএমেও সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব। এক্ষেত্রে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ইভিএম পদ্ধতির ভোটকে মডেল হিসেবেও সামনে তুলে ধরছে ইসি। এরই মধ্যে আগামী জাতীয় নির্বাচনে সারাদেশে অন্তত ১৫০টি আসনে ইভিএমে ভোটগ্রহণের ঘোষণা দিয়েছে কমিশন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন