শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

রাজধানীতে তীব্র গ্যাস সঙ্কট

শারীরিক ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত গৃহিণী ও পেশাজীবী নারীরা সরবরাহ কমে যাওয়ায় এই সঙ্কট : প্রকৌশলী মো. হারুনুর রশিদ মোল্লাহ সমস্যা আরো বাড়ার আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের গ্যাস না থাকলে বিল দিতে

মো. জাহিদুল ইসলাম : | প্রকাশের সময় : ২ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ১২:০৩ এএম

সকাল সাতটার আগেই গ্যাস চলে যায়। তাই বাধ্য হয়ে প্রতিদিন ভোর ৪টার দিকে ঘুম নষ্ট করে রান্না করতে হয়। কোনো দিন ৪টার পর ঘুম থেকে উঠলে আর রান্না করা যায় না। বিকেলে লাইনে গ্যাস এলেও চাপ কম থাকায় চুলা মিটমিট করে জ্বলে। তাতে রান্না করা যায় না। গ্যাসের সমস্যার কথা এভাবেই জানাচ্ছিলেন রাজধানীর মিরপুর ১১ নম্বর সেক্টরের গৃহিনী নাদিরা সুলতানা।

শুধু নাদিরাই নন-এমন সঙ্কটের মুখে এখন রাজধানীর অধিকাংশ বাসিন্দা। এতে বাসাবাড়িতে রান্নাবান্নায় চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে গৃহিণীদের। মধ্যরাত ও ভোররাতে রান্না করতে গিয়ে শারীরিক ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত গৃহিণী ও পেশাজীবী নারীরা। ব্যাহত হচ্ছে শিল্প উৎপাদনও। সরেজমিনে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বাধ্য হয়ে অনেকে গ্যাস সংযোগ থাকা সত্ত্বেও সিলিন্ডার গ্যাস ব্যবহার করছে। কেউ কেউ ব্যবহার করছে ইলেকট্রিক চুলা। নিম্নআয়ের মানুষ মাটির চুলা, কাঠ-লাকড়ি ব্যবহার করে রান্না করছে। এতে খরচ বেড়েছে। কারণ লাইনের গ্যাস না পেলেও প্রতি মাসে তাদের ৯৭৫ টাকা বিল গুনতে হচ্ছে। মহাখালীর বাসিন্দা জান্নাত আরা মাস খানেক আগে কেরোসিনের চুলা কিনেয়েছেন। গ্যাস সঙ্কটের কারণে সেই চুলায় রান্নার কাজ চলছে। ভোগান্তির চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, একদিকে কেরোসিনের খরচ, অন্যদিকে গ্যাস না পেলেও মাসে প্রায় হাজার টাকা দিতে হচ্ছে। তিতাস যদি গ্যাস নাই দিতে পারে, তাহলে টাকা নিচ্ছে কেন? সীমিত আয়ের মানুষ আমরা। এমন অনিয়মের কারণে খুবই সমস্যার মধ্যে পড়েছি।

ধানমন্ডির বাসিন্দা রেহানা আক্তার ভোরে উঠে নাস্তা তৈরি করেন। দুপুরের রান্নাও করে নেন এই সময়ে। দুবেলার ভাত রান্না হয় রাইস কুকারে। গ্যাস না থাকায় সকালের চা থেকে শুরু করে টুকটাক রান্নার কাজ চলে রাইস কুকারেই। তিনি বলেন, সকাল সাতটার মধ্যে গ্যাস চলে যায়। বিকেল চারটার পর থেকে আবার পাওয়া যায়। তখন আর সেই গ্যাস কোনো কাজে লাগে না। শীতের দিনে ঠাণ্ডা খাবার খেতে হয়। ইলেকট্রিক কেটলিতে পানি গরম করে, সেই পানি জমিয়ে তাই গোসল করতে হয়। এ কারণে নিয়মিত গোসলও করা হয় না।
তিনি বলেন, গ্যাসের লাইন আছে, গ্যাস থাকে না সারাদিন। ভোরে যায় বিকালে আসে। সিলিন্ডার ব্যবহার করছি। মাসে গ্যাস বাবদ আড়াই হাজার টাকার বেশি খরচ হচ্ছে। কবে গ্যাসের এই সমস্যা শেষ হবে, সেটাও কেউ বলতে পারছে না!

রামপুরার বাসিন্দা তারেক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, মাসজুড়ে গ্যাস থাকে না, তারপরও বিল দিতে হচ্ছে পুরোটাই! প্রতিদিনই গ্যাস থাকছে না দিনের বেশিরভাগ সময়। এরপর বিকালে গ্যাস এলেও জ্বলে মিটমিট করে। সেই গ্যাস দিয়ে রান্না তো হয়ই না, পানিও গরম করাও যায় না। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে এবং বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে গ্যাসের এমন সমস্যার কথা জানা গেছে।

গ্যাস সঙ্কট বিষয়ে তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল, ১২ জানুয়ারি থেকে ২১ জানুয়ারি পর্যন্ত তিতাস অধিভুক্ত এলাকায় গ্যাসের চাপ কম থাকবে। ইতোমধ্যে রাস্তা খুঁড়ে সেন্ট্রাল রোডসহ কয়েকটি এলাকায় গ্যাসলাইন মেরামতও করা হয়েছে। তারপরও তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষের দেওয়া নির্ধারিত সময়ের দশ দিন পার হয়েছে। কিন্তু গ্যাস সরবরাহ সমস্যার সমাধান এখনও হয়নি।
গ্যাসের এই তীব্র সঙ্কট রাজধানীর লালবাগ, আজিমপুর, ধানমন্ডি, সেন্ট্রাল রোড, কাঁঠালবাগান, মিরপুর, আগারগাঁও, শেওড়াপাড়া, রামপুরা, বাড্ডা, খিলগাঁও, বনশ্রী, বাসাবো, মুগদা, মাদারটেক, মহাখালি, রায়েরবাজার, মোহাম্মদপুর ও ইস্কাটন এলাকায় বেশি।

তিতাস গ্যাসের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মো. রবিউল আওয়াল বলেন, এলএনজি আমদানীতে কাজ করা দুটি টার্মিনালের একটিতে সমস্যা দেখা দেওয়ায় সেটা মেরামতের কাজ চলছে। এ কারণে গ্যাস সরবরাহে ঘাটতি দেখা দিয়েছে। তবে, কাজ খুব দ্রুত গতিতে চলছে। মেরামত শেষ হলে আশা করা যায় গ্যাস সঙ্কট কমে আসবে। এই প্রকৌশলী আরো বলেন, যতদূর জানি, মেরামত কাজ শেষ হয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে আরো দুই সপ্তাহ সময় লাগবে। এরপর টার্মিনাল থেকে নিয়মিত গ্যাস সরবরাহ শুরু হলে আশা করছি গ্যাসের সঙ্কট কেটে যাবে।

পেট্রোবাংলা সূত্র জানায়, বর্তমানে দেশে প্রতিদিন তিন হাজার ৮০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস লাগে। বিপরীতে গতকাল সরবরাহ হয়েছে দুই হাজার ৭০১ মিলিয়ন ঘনফুট। ঘাটতি ছিল এক হাজার মিলিয়ন ঘনফুটের বেশি। এ প্রসঙ্গে তিতাস গ্যাস বিতরণ কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী মো. হারুনুর রশিদ মোল্লাহ বলেন, গ্যাস সরবরাহ কমে যাওয়ায় এই সঙ্কট তৈরি হয়েছে। একটি টার্মিনালের মুরিং লাইন ছিঁড়ে যাওয়ায় ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। এটি মেরামতের কাজ চলছে। আশা করছি, ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, দেশি গ্যাস উৎপাদন দিনে দিনে কমে আসছে। ভবিষ্যতে গ্যাস সমস্যা আরো বাড়বে। তবে দেশি গ্যাস উৎপাদন বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে। কূপগুলো নতুন করে ওয়ার্কওভার করে কম্প্রেসর লাগিয়ে গ্যাস উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব। কিন্তু এই ব্যাপারে বড় ধরনের কোনো অগ্রগতি দেখছি না।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন