ফিলিং স্টেশনে ভোগান্তি
রাজধানীর অনেক বাসা বাড়িতে চুলা জ্বলেনি, ফিলিং স্টেশনে ভোগান্তি। তীব্র সংকটের কবল থেকে এখনও মুক্তি মেলেনি দেশের গ্যাস গ্রাহকদের। আবাসিক, সিএনজি থেকে শিল্প সব খানেই গ্যাস সংকটের প্রভাব পড়েছে। বিবিয়ানা হুট করে আংশিক উৎপাদন বন্ধ করায় গত দুদিনের মতো আজও সংকট ছিল। থাকবে আরও বেশ কয়েক দিন। জ্বালানি বিভাগ থেকে শুরু করে পেট্রোবাংলা এমন আভাসই দিচ্ছে। গ্যাস সংকট সহনীয় মাত্রায় নেমে আসবে বলে জানিয়েছে বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়। গতকাল মঙ্গলবার বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছে। গ্যাস সংকট সহনীয় মাত্রায় নেমে আসবে বলে জানিয়েছে বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিবিয়ানাতে ৪৫০ মিলিয়ন ঘনফুটের ঘাটতি সৃষ্টি হয়েছে। এলএনজি দিয়ে সেই ঘাটতি মেটানো সম্ভব ছিল। কিন্তু পেট্রোবাংলার হাতে সেই পরিমাণ সরবরাহ বৃদ্ধির জোগাড় না থাকায় সংকট সমাধানে কিছুই করা সম্ভব হয়নি। কেবল ভোগান্তিই বেড়ে চলেছে। তবে ছয় ক‚পের অর্ধেক উৎপাদনে আসায় হাহাকার কিছুটা কমেছে। রাজধানীর আবাসিক গ্রাহকরা পড়েছেন সবচেয়ে বড় ভোগান্তিতে। সকালের দিকে নিভু নিভু আগুন ছিল, দুপুরের পর তাও নেই। রমজানের প্রথম দিন থেকেই বাইরে থেকে ইফতার কিনে এনে খেতে হচ্ছে। কবে এই যন্ত্রণা থেকে রক্ষা পাবো কে জানে’বলছিলেন রায়ের বাজারের শাখিলা পারভীন একই অভিযোগ মানিকদি, মিরপুরের কিছু এলাকা, বাড্ডা, শাহজাদপুর, নতুনবাজার, রামপুরা, বনশ্রীসহ বেশ কিছু এলাকায়। এছাড়া ঢাকার অন্য এলাকাগুলোতে গ্যাস থাকলেও সেখানে চাপ এত কম যে রান্না করা দায়।
গতকাল মঙ্গলবার সকালে ফিলিং স্টেশনে গিয়ে দেখি সাইনবোর্ড ঝুলানো, গ্যাস নেই, অথচ সারা দিন গাড়ি চালাতে হবে, এরপর কয়েক স্টেশন ঘুরে দুই ঘণ্টা লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে মিরপুর থেকে গ্যাস নিতে পারলাম। এদিকে এমনিতে বিকালের পর তো আর ফিলিং স্টেশন বন্ধ থাকে’ বলছিলেন সিএনজি ড্রাইভার মফিজুল ইসলাম। এই অভিযোগ শুধু তার নয়। সিএনজি মালিকরা বলছেন, চাপ না থাকায় স্টেশন বন্ধ। আর যেখানে চাপ আছে সেখানে এত ভিড় যে গ্রাহককে দুই-তিন ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে।
সিএনজি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ফারহান নুর সাংবাদিকদের বলেন,একটা স্টেশন বানাতে আমাদের প্রচুর বিনিয়োগ করতে হয়, ঋণ করতে হয়। করোনার মহামারিতে এমনিতেই আমাদের অনেক ক্ষতি হয়েছে। এরমধ্যে রমজানের আগেই শুরু হয়েছে গ্যাস রেশনিং। এখন আবার গ্যাসের স্বল্পতায় বিক্রি বন্ধ। সব মিলিয়ে আমাদের অবস্থা খুবই খারাপ। এদিকে গ্রাহকদের ক্ষেত্রেও ভোগান্তি হচ্ছে।
গতকাল সকালে প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ তার ফেসবুক পেজে জানান, বিবিয়ানা গ্যাস ফিল্ড থেকে দৈনিক ১২০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হতো। সমস্যা দেখা দেওয়ায় যা ৮০০ মিলিয়ন ঘনফুটের নিচে নেমে এসেছিল। বর্তমানে ১০১০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে। গতকাল সন্ধ্যা নাগাদ যা ১১০০ মিলিয়ন ঘনফুটে উন্নীত হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
এ ভোগান্তি বিষয়ে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান নাজমুল আহসান সাংবাদিকদের বলেন, মোট চারটি ক‚প উৎপাদনে এসেছে। এর ফলে এখন বিবিয়ানা থেকে ১ হাজার ৮০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস আসছে। রাতের মধ্যে আরও কিছুটা বেড়ে ১ হাজার ১০০ মিলিয়ন হতে পারে। আগামীকালের মধ্যে আরও একটি ক‚প উৎপাদনে আসতে পারে। তবে যে ক‚প দিয়ে প্রথম বালি উঠছিল সেটি মেরামতে কিছুটা সময় লাগতে পারে। তিনি বলেন, রোজার বাড়তি চাহিদা মেটাতে এমনিতে বিদ্যুৎ কেন্দ্র গুলোতে আমরা গ্যাস দিচ্ছি চাহিদা অনুযায়ী। আবাসিকের সমস্যাও কেটে যাবে ১০ এপ্রিলের মধ্যে। কারণ, তখন এলএনজির নতুন কার্গো থেকে গ্যাস সরবরাহ শুরু হয়ে যাবে।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছে। এতে বলা হয়, গতকাল সন্ধ্যায় থেকে গ্যাস সংকট সহনীয় মাত্রায় নেমে আসবে। বিবিয়ানা গ্যাস ফিল্ডের উৎপাদন ২০০ মিলিয়ন ঘনফুট বেড়েছে, সন্ধ্যা নাগাদ আরও ১০০ বাড়তে পারে। গ্যাস ফিল্ডটিতে দৈনিক ১২০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হতো। সমস্যা দেখা দেওয়ায় ৮০০ মিলিয়ন ঘনফুটের নীচে নেমে আসে। যার কারণে সারা দেশে গ্যাস সংকট দেখা দিয়েছে। এই সংকটকালীন সময়ে ধৈর্য্য ধারণ করার জন্য বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় গ্রাহকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন