চাঞ্চল্যকর মেজর (অব.) সিনহা হত্যা মামলায় মৃত্যুদÐাদেশ মাথায় নিয়ে টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কারাগারের কনডেম সেলে এখন বড় অসহায়। তার কুকর্মের সহযোগী এবং শত কোটি টাকার চাঁদাবাজির ভাগীদার কাউকে পাশে না পেয়ে প্রদীপ চরম ক্ষুব্ধ ও হতাশ বলে জানা গেছে। গত ৩১ জানুয়ারি কক্সবাজার জেলা ও দায়েরা জজ মুহাম্মদ ইসমাঈল চাঞ্চল্যকর এই মামলার রায় ঘোষণা করেন। এতে ১৫ আসামির মধ্যে প্রদীপ ও লিয়াকতকে মৃত্যুদÐের আদেশ দেয়া হয়। রায়ে ৬ আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদÐ এবং অপর ৭ জনকে খালাস দেয়া হয়। এই দুর্দিনে সুবিধা ভোগীরা কেউই পাশে নেই প্রদীপের।
প্রদীপ কুমার দাশ টেকনাফে ওসি থাকার সময় গুম, খুন, নারী ধর্ষণ, মাদক ব্যাবসা ও বন্দুক যুদ্ধের নামে কুখ্যাত ক্রসফায়ার এবং শত কোটি টাকার লুটপাটসহ কোনো অপকর্ম নেই যা করেনি সে। এসময় বন্দুক যুদ্ধের নাটক সাজিয়ে ক্রসফায়ারে খুন করেছে ২০৪ জন নিরীহ মানুষ। তখন তার অপকর্মের সহযোগী ছিল সাবেক পরিদর্শক লিয়াকত আলী, স্থানীয় বড় বড় রাজনৈতিক নেতা ও তার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। তারা প্রদীপের কাছ থেকে সুবিধা নিয়ে তার অপকর্মের সমর্থন দিয়েছিল কিছু চাটুকার মিডিয়া। প্রদীপের ক্ষমতার দাপটে তখন কেউ মুখ খোলতে সাহস পায়নি।
সর্বশেষ ২০২০ সালের ৩১ জুলাই সেনাবাহিনীর মেজর (অব.) সিনহা মুহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলায় ফেঁসে যায় প্রদীপ-লিয়াকত। মেজর সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়ার করা এই মামলায় প্রদীপ লিয়াকতের মৃত্যু দন্ডাদেশ দিয়েছে আদালত। এই মামলায় প্রদীপ লিয়াকতসহ ১৫ আসামি গ্রেফতারের পর টেকনাফের নির্যাতিতদের পক্ষ থেকে তাদের বিরুদ্ধে আরো ১৭টি মামলা হয়েছে বিভিন্ন অভিযোগে।
মেজর (অব.) সিনহা হত্যা মামলার রায় ঘোষণার আগে থেকেই নির্যাতিতরা খুনি প্রদীপ লিয়াকতের ফাঁসির দাবি করে আসছিল। এমনকি রায় ঘোষণার দিনও আদালত চত্তরে হাজার হাজার নির্যাতিত মানুষ তাদের ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন করে। মেজর সিনহা হত্যা মামলার ঐতিহাসিক রায় বাদী পক্ষ, হাজারো নির্যাতিত পরিবারসহ দেশের মানুষের কাছে ভ্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়েছে। এখন দাবি উঠেছে এই রায় দ্রæত কার্যকর করার। পাশাপাশি নির্যাতিতদের পক্ষ থেকে অন্য ১৭টি মামলা, ওসি প্রদীপের আশ্রয় প্রশ্রয়দাতা ও তার কাছ থেকে সুবিধা ভোগীদের বিষয়ে সুষ্ঠু তদন্তের দাবি উঠেছে।
ওসি প্রদীপের আইনজীবী ওসমান সরওয়ার শাহীন জানান, প্রদীপ রায়ের বিরুদ্ধে অবশ্যই উচ্চ আদালতে আপিল করবেন। এজন্য আদালত থেকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নেয়া হচ্ছে।
এদিকে মেজর (অব.) সিনহা হত্যা মামলায় বেকসুর খালাস পাওয়া পুলিশের ৭ সদস্য ফিরে পাচ্ছেন তাদের চাকরি। এমন কি সাময়িক বরখাস্ত হয়ে কারাভোগের ১৮ মাসের বেতনও পাবেন তারা। এর জন্য আদালতের রায়ের কপিসহ তাদের সংশ্লিষ্ট মাধ্যমে আবেদন করতে হবে পুলিশ সদর দফতরে। পুলিশ কর্মকর্তা জানান, পুলিশের বিধি মতে এসব সদস্য পদোন্নতিসহ অন্যান্য সুবিধাও পেতে পারেন। কক্সবাজারের সিনিয়র আইনজীবী আবদুল মান্নান জানান, ফৌজদারী কার্যবিধি (সিআরপিসি) মতে খালাস পাওয়া ব্যক্তি চাকুরি ফেরত এবং বরখাস্ত থাকাকালিন বেতন দেয়ার বিধানও রয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন