মোহাম্মদ আবদুল গফুর
গত সপ্তাহে আমরা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় সম্মেলন সম্পর্কে লিখেছি। সে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল সোহরওয়ার্দী উদ্যানে। ঐ একই স্থানে দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল তিন তিনবার অবাধ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠনকারী বিএনপিও একটি জনসভা অনুষ্ঠানের ঘোষণা দিয়েছিল আগামী ৭ নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস পালন উপলক্ষে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ জানিয়ে দিয়েছেন বিএনপিকে এ সভা করতে দেয়া হবে না। দেশের ক্ষমতাসীন দলের কোনো নেতা যখন দেশের একটি প্রধান দলের জনসভা অনুষ্ঠানের বিরুদ্ধে মৌখিক নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করতে পারেন, তখনই স্পষ্ট হয়ে ওঠে দেশে গণতন্ত্রের কী শোচনীয় অবস্থা চলছে।
আজ আমরা যে স্বাধীন বাংলাদেশের গর্বিত নাগরিক সেই বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের পেছনে সুদীর্ঘ কালের গণতান্ত্রিক সংগ্রামের ঐতিহাসিক অবদান ছিল। এ কারণে স্বাধীন বাংলাদেশের যে চারটি রাষ্ট্রীয় মূলনীতি স্থিরীকৃত হয় তার অন্যতম ছিল গণতন্ত্র। স্বাধীন বাংলাদেশের নবযাত্রা-ক্ষণে গণতন্ত্রের সাথে আরও যে তিনটি রাষ্ট্রীয় মূলনীতি সংযোজিত ছিল সেগুলো ছিল জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা। এগুলোর মধ্যে শেষোক্ত তিনটি রাষ্ট্রীয় মূলনীতি বিভিন্ন সরকারের আমলে বিভিন্নভাবে পরিবর্তিত বা সংশোধিত হলেও একটি মাত্র রাষ্ট্রীয় মূলনীতির গায়ে আঁচড় দিতে সাহস পায়নি কোন সরকার জনমতের ভয়ে সেটি গনতন্ত্র। জাতীয়তাবাদ শব্দের আগে কখনও সংযোজিত হয় বাঙালি, আবার কখনও সংযোজিত হয় বাংলাদেশি। সমাজতন্ত্র রূপান্তরিত হয় ‘সমাজতন্ত্র অর্থে সামাজিক সুবিচার’-এ। অন্যদিকে ধর্মনিরপেক্ষতার পরিবর্তে আনা হয় “সর্বশক্তিমান আল্লাহতায়ালায় গভীর আস্থা ও বিশ্বাস।”
দুঃখের বিষয় জনমতের ভয়ে যে রাষ্ট্রীয় মূলনীতি গণতন্ত্রের গায়ে কলমের আঁচড় লাগাতে সাহস পায়নি কোন সরকার, সেই গণতন্ত্রেরই সবচেয়ে দুর্দশা দেখতে হচ্ছে বাংলাদেশের জনগণকে বাস্তব ক্ষেত্রে। বাংলাদেশের চারটি রাষ্ট্রীয় মূলনীতির মধ্যে যেটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সেই গণতন্ত্রের ওপর আঘাত শুরু হয় স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সরকারের আমলেই। গণতন্ত্রের মূল কথা নাগরিকদের স্বাধীন মতামতের প্রতি শ্রদ্ধা। গণতন্ত্রের সেই মূল মর্মবাণীর প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সরকারের আমলেই দেশের সকল রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ ঘোষণা করে একটি মাত্র সরকারি দল রেখে দেশে একদলীয় বাকশালী শাসনব্যবস্থা চালু করা হয়। শুধু তাই নয়, একদলীয় বাকশালী ব্যবস্থাকে ষোলকলায় পূর্ণ করতে দেশের সকল সংবাদপত্র বন্ধ করে দিয়ে চারটি মাত্র সরকারি দৈনিক পত্রিকা চালু রাখা হয়।
এভাবে দেশের মানুষের ভিন্ন মত প্রকাশের নিয়মতান্ত্রিক অধিকার ও সুযোগ জোর করে বন্ধ করে দেয়ার ফলেই পঁচাত্তরের দুঃখজনক ঘটনাবলি অনিবার্য হয়ে উঠেছিল বলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষদের অনেকের ধারণা। যাই হোক বেশ কিছু দুঃখজনক ঘটনাবলির মধ্য দিয়ে দেশে দীর্ঘ আকাক্সিক্ষত বহু দলীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হলেও একপর্যায়ে একটি নির্বাচিত সরকারকে সামরিক ক্যুর মাধ্যমে উৎখাত করে ক্ষমতা দখল করে বসেন তদানীন্তন সেনাপ্রধান জেনারেল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। এ সময় সারা দুনিয়াকে অবাক করে দিয়ে ওই সামরিক ক্যুর প্রতি সমর্থন জানিয়ে বসেন দেশের প্রাচীনতম রাজনৈতিক দলের নেত্রী শেখ হাসিনা। দেশের প্রাচীনতম দল আওয়ামী লীগ নেত্রীর এ অদ্ভুত ভূমিকার পক্ষে মাত্র একটিই যুক্তি ছিল যে, ওই নির্বাচিত সরকারের নেতৃত্বে ছিল আওয়ামী লীগের নিয়মতান্ত্রিক রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপি। এর অর্থ দাঁড়ায় আওয়ামী লীগ নেত্রীর কাছে তাঁর নিয়মতান্ত্রিক রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের নেতৃতাধীন নির্বাচিত সরকারের চেয়ে সামরিক ক্যুর মাধ্যমে ক্ষমতা দখলকারী জেনারেলের শাসন অধিকতর গ্রহণযোগ্য বিবেচিত হয়েছিল। বলাবাহুল্য, এটা তাঁর গণতন্ত্র প্রীতির প্রমাণ বহন করে না।
পাঠক-পাঠিকাদের স্মরণ থাকার কথা, এর পর দেশে জেনারেল এরশাদের স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে বিএনপিসহ বিভিন্ন দলের উদ্যোগে আন্দোলন গড়ে উঠলেও প্রথম দিকে আওয়ামী নেত্রী সেদিকে আন্তরিক আগ্রহ দেখাননি। ফলে রাজনীতি ক্ষেত্রে নবাগতা বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া আপসহীন নেত্রী হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠেন, যার প্রমাণ পাওয়া যায় এরশাদ আমলের শেষ দিকে অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে। ছোট-বড় সকল দলই এ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। নির্বাচন যাতে নিরপেক্ষ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয় যে উদ্দেশ্যে প্রধান দুই দলের ঐকমত্যের ভিত্তিতে প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দিন আহমদের নেতৃত্বাধীন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচন অত্যন্ত সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়। শেখ হাসিনা নিজ ভোটকেন্দ্রে ভোটদানের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপচারিতাকালে একপর্যায়ে বলেন, আমি সব জেলার খবর নিয়েছি। নির্বাচন অত্যন্ত সুষ্ঠু হয়েছে। আপনারা লক্ষ্য রাখবেন, ভোটে হেরে গিয়ে কেউ যেন আবার এর মধ্যে কারচুপি আবিষ্কার না করে। ভোট গণনা শেষে যখন দেখা গেল আওয়ামী লীগ নয়, নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছে বিএনপি, তিনি অবলীলাক্রমে বলে ফেললেন, নির্বাচনে সূক্ষ্ম কারচুপি হয়েছে। এর অর্থ হচ্ছে, কোনো সুষ্ঠু নির্বাচনে ও আওয়ামী লীগ হেরে গেলে ধরে নিতে হবে এতে কারচুপি হয়েছে। দেশের একটি প্রধান রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বের মধ্যে যদি এ ধরনের মনোভাব দীর্ঘদিন বিরাজ করে তবে সে দেশে গণতন্ত্রের সুষ্ঠু বিকাশ হওয়া কিছুতেই সম্ভব নয়।
এরপরের ঘটনাবলি পাঠক-পাঠিকাদের স্মরণ থাকার কথা। এরশাদ আমলের শেষ দিকে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে বেগম খালেদা জিয়া সরকার গঠন করেন এবং আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনা সেই সংসদে হন বিরোধীদলীয় নেত্রী। খালেদা সরকারের মেয়াদ শেষে প্রধানত তৎকালীন সংসদীয বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনার দাবির মুখেই দেশে সকল জাতীয় নির্বাচন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠানের বিধান সংবিধানে গৃহীত হয়। এই বিধানের আলোকে দেশে বেশ কয়েকটি সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় এবং দেশে পালাক্রমে দুই প্রধান দল নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে দেশ চালানোর সুযোগ লাভ করে। এতে প্রমাণিত হয় বাংলাদেশের বিশেষ রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সাধারণ নির্বাচনই গনতন্ত্রের নিরিখে উপযুক্ততম ব্যবস্থা।
দুঃখের বিষয় রাজনৈতিক দল বিশেষের অতিরিক্ত ক্ষমতা ক্ষুধার মাধ্যমে এই সুন্দর ব্যবস্থাকে একপর্যায়ে পচিয়ে ফেলা হয়। দুই প্রধান রাজনৈতিক দলের দ্বন্দ্বের সুযোগে অসাংবিধানিক শক্তি ক্ষমতার অলিন্দে ঢুকে পড়ে সেনাসমর্থিত সরকারের নামে সেনানিয়ন্ত্রিত এক অদ্ভুত সরকার কায়েম করে এবং দেশের প্রধান দুই নেত্রীকে রাজনৈতিক ক্ষেত্র থেকে চিরতরে নির্বাসন দেয়ার লক্ষ্যে সংসদ অঙ্গনের দুটি ভবনে অন্তরীণ করে রেখে তথাকথিত সংস্কারপন্থিদের নেতৃত্বে দুই প্রধান দলে সংস্কার সাধনের অন্য চেষ্টা চালায়। সৌভাগ্যক্রমে দুই প্রধান দলের তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের প্রবল বিরোধিতার মুখে এ সকল পরিকল্পনা ভ-ুল হয়ে যায়। এ পর্যায়ে আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় গেলে অসাংবিধানিক শক্তির সকল অবৈধ কর্মের বৈধতা দান করবেন বলে ঘোষণা দেয়ার পর ঐ অসাংবিধানিক সরকারের অধীনে যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় তাতে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। এরপর আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় তাতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যকার অতীত সমঝোতা মোতাবেক নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিধান লংঘিত হওয়ার অভিযোগে বিএনপি ওই নির্বাচন বয়কট করে। ফলে এ নির্বাচনে সরকারদলীয় নেতাকর্মীরা ইচ্ছামতো ব্যালটপত্রে সিল মেরে ভোটসংখ্যা অস্বাভাবিকভাবে বাড়িয়ে তোলার সুযোগ গ্রহণ করে। অন্যদিকে দেশের সাধারণ মানুষদের কাছে এটি ভোটারবিহীন নির্বাচন বলে পরিচিতি লাভ করে।
দেশের দুই প্রধান দলের একটি নির্বাচন বর্জন করায় ওই নির্বাচন হয়ে পড়ে মূল্যহীন। ফলে অবিলম্বে সকল দলের গ্রহণযোগ্য একটি অবাধ নির্বাচনের দাবিতে যেখানে বিএনপি উচ্চকণ্ঠ, সেখানে আওয়ামী লীগ এই প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনে বিজয়ের সুবাদে ২০১৯ সালের আগে দেশে কোনো নতুন নির্বাচন দেবে না বলে ঘোষণা দিয়েছে। এর পাশাপাশি প্রধান বিরোধী দল বিএনপির নেতাকর্মীদের হামলা-মামলার মাধ্যমে অবরুদ্ধ রেখে পরবর্তী নির্বাচনে যাতে প্রধান বিরোধী দল বিএনপিকে ক্ষমতার বাইরে রেখে পুনরায় আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যেতে পারে সে লক্ষ্যে এমন একটি লোক দেখানো নির্বাচন দেয়ার কথাও আওয়ামী লীগ চিন্তা করছে বলে মনে হচ্ছে। মোট কথা আওয়ামী লীগ এখন একটি অবাধ নির্বাচন দেয়ার কথা কল্পনা করতে ও হয় পায় অথচ এরশাদ আমলের শেষ দিকে প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দিন আহমেদের সরকারের অধীনে দেশের প্রথম নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনে বিজয়ী খালেদা সরকারের আমলে প্রধানত তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনার দাবির মুখেই দেশের সকল জাতীয় নির্বাচন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠানের বিধান সংবিধানে গৃহীত হয়। খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন সরকারের আমলে প্রধানত তদানীন্তন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনার দাবির মুখে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের যে বিধান সংবিধানে গৃহীত হয়, আজ তা আওয়ামী লীগ নেত্রীর কাছে এত বিষবৎ পরিতাজ্য বিবেচিত হচ্ছে, কেন? এর মূলে কি নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সুষ্ঠু অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচনে তার দলের ভরাডুবি হওয়ার আশঙ্কার কারণে?
নইলে যিনি একদা দেশে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবিতে অনড় ছিলেন তিনি আজ কেন তার বিপরীত দাবিতে অনড় হয়ে উঠবেন? তা হলে তিনি কি নিশ্চিত হয়ে উঠেছেন যে, তার পায়ের তলা থেকে মাটি সরে গেছে এবং আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হলে তাতে তাঁর দলের ভরাডুবি নিশ্চিত? এই ভয়েই কি তিনি তার অতীত দাবির ঠিক বিপরীত দাবিতে একটি লোক দেখানো নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা আঁকড়ে থাকতে উন্মত্ত হয়ে উঠেছেন ? যদি তা-ই হয়ে থাকে তাঁর প্রকৃত মনোভাব, তা হলে বলতেই হয়, তিনি গণতন্ত্রে বিশ্বাস করেন না। অথচ তিনি যে দলের নেতৃত্বে আসীন হয়েছেন সেই আওয়ামী লীগের রয়েছে এদেশের গণতান্ত্রিক সংগ্রামের গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা। পাকিস্তান আমলে দেশে প্রথম সরকারবিরোধী যে রাজনৈতিক দলটি জন্মলাভ করে দেশের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে ঐতিহাসিক অবদান রাখে সেই দলটির বর্তমান নেত্রী হয়ে তিনি গণতন্ত্র নিধনে যে ভূমিকা পালন করছেন তা যেমন দুঃখজনক, তেমনি দেশের জন্য দুর্ভাগ্যজনক । এই লজ্জাজনক ও দুঃখজনক অবস্থান থেকে দলের গৌরবোজ্জ্বল গণতান্ত্রিক অবস্থানে তিনি ফিরে আসুনÑ এটাই এখন দেশের জনগণের একান্ত কামনা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন