নাটোরের সিংড়া উপজেলার ডাহিয়া ইউনিয়নের সরিষাবাড়ী গ্রামের কৃষক মজিবুর রহমান ও তার পরিবার প্রায় আড়াই বছর ধরে গ্রাম ছাড়া। প্রতিপক্ষের হুমকির মুখে ঘর-বাড়িতে ফিরতে পারছেন না ওই ভূক্তভোগী কৃষক পরিবার। এ ব্যাপারে মামলা করেও প্রতিকার পাননি পরিবারটি।
ভূক্তভোগী পরিবার ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালের জুন মাসে উপজেলার সরিষাবাড়ী গ্রামের কৃষক মজিবুর রহমালের ছেলে মো. সেলিম ও প্রতিবেশী শাহ আলমের মেয়ে সুমাইয়া খাতুন প্রেমের টানে ঘর ছেড়ে পালিয়ে বিয়ে করেন। মেয়ের ভালোবাসাকে মেনে না নিয়ে প্রতিবেশী শাহ আলম প্রভাব খাটিয়ে কৃষক মজিবুর রহমানের দুই ছেলে ও স্ত্রীসহ তার পরিবারের পাঁচ সদস্যের বিরুদ্ধে সিংড়া থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করে। মামলার পর কৃষক মজিবুর রহমানের বাড়ি-ঘরে লুটপাট ও ভাঙচুর করেন প্রতিপক্ষ শাহ আলম। এদিকে ঘটনার প্রায় আড়াই বছরে সেলিম ও সুমাইয়া দম্পতি ঘরে জন্ম নিয়েছে একটি ফুটফুটে ছেলে। কিন্তু প্রতিপক্ষ শাহ আলমের হুমকির মুখে এখনও সেলিম ও সুমাইয়া দম্পতি তার দেড় বছর বয়সী শিশুকে নিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।
সুমাইয়া খাতুন বলেন, আমরা ভালোবেসে বিয়ে করেছি। আমাদের ঘরে একটি ছেলে সন্তান জন্ম নিয়েছে। কিন্তু আমার পিতা শাহ আলমের হুমকির কারণে প্রায় আড়াই বছর পেরিয়ে গেলেও পরিবার নিয়ে গ্রামে ফিরতে পারছি না। মিথ্যা মামলা দিয়ে আমার স্বামী ও শ্বশুড় বাড়ির লোকজনকে হয়রানি করা হচ্ছে। প্রতিবেশী আফছার আলী, রিপন আলী, জয়নাল আবেদীন, আব্দুর রাজ্জাকসহ অনেকেই বলেন, প্রেমের টানে পালিয়ে ছেলে-মেয়ে বিয়ে করেছে। কিন্তু একটি কৃষক পরিবারকে প্রায় আড়াই বছর ধরে গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে। প্রতিপক্ষ প্রভাবশালী হওয়ায় অসহায় ও নিরীহ মানুষের পক্ষ নিতে চায় না বলেও জানান তারা। প্রতিবেশী এক গৃহবধূ বলেন, মজিবরের বাড়ি লুটের সময় তার দু’টি গরু লুট করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এখনও সেই গরু ফেরত পাননি।
কৃষক মজিবর ও তার স্ত্রী শাহিনা খাতুন বলেন, প্রায় আড়াই বছর আগে আমার ছেলে প্রতিবেশী শাহ আলমের মেয়েকে ভালবেসে বিয়ে করায় শাহ আলম বাড়িতে হামলা চালিয়ে লুটপাট করে। ধান ও গরুসহ বাড়িতে যা ছিল সব লুট করে নিয়ে গেছে। এক কাপড়ে গ্রামছাড়া করা হয়েছে।
প্রতিপক্ষ শাহ আলম বলেন, তার মেয়েকে অপহরণের অভিযোগে মামলা করি। লুটপাট ও হুমকির বিষয়টি অস্বীকার বলেন, মামলার কারণে তারা পালিয়ে বেড়াচ্ছে।
ইউপি সদস্য আকবর হোসেন বলেন, ওই গ্রামের একটি ছেলে ও মেয়ে ভালোবেসে বিয়ে করায় একটি পরিবারের সদস্যরা মামলা-হামলার ভয়ে বেশ কিছুদিন ধরে বাড়ি ছাড়া। মেয়ে পক্ষ প্রভাবশালী। তাই বিষয়টির গ্রাম্যভাবে সমাধান করা সম্ভব হয়নি।
ডাহিয়া ইউপির নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান মামুন সিরাজুল মজিদ বলেন, দুই পরিবারের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছে। যদি কেউ গ্রাম ছাড়া হয়ে থাকে তবে বিষয়টি সুরাহার উদ্যোগ নেয়া হবে। সিংড়া থানার ওসি নুর-এ-আলম সিদ্দিকী বলেন, একটি লিখিত অভিযোগ পেয়ে ওই গ্রামে পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। মামলা ও গ্রামের তৃতীয় পক্ষের কথাশুনে ওই কৃষক পরিবার গ্রামে আসেনি বলে তিনি জানিয়েছেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন