ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ফেনীর মহিপাল ফ্লাইওভারের উত্তরে গ্যাস কোম্পানি এলাকায় বিসিক চৌরাস্তাটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। এ ফোরলেন মহাসড়ক দিয়ে প্রতিদিন দেশের হাজার হাজার গাড়ি চলাচল করে। পাশে রয়েছে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) শিল্পনগরী ও কারখানা, স্কুল-কলেজ ও মাদরাসা। মহাসড়ক পারাপারের কোন বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় ঝুঁকি নিয়ে পাড়ি দিতে গিয়ে প্রতিদিনই ঘটছে সড়ক দুর্ঘটনা, ঝরছে তাজা প্রাণ। এ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি দেখার যেন কেউ নেই।
সরেজমিনে পরিদর্শনে দেখা যায়, মহাসড়কের গ্যাস কোম্পানি এলাকায় বিসিক চৌরাস্তা পয়েন্টে পূর্ব-পশ্চিম পাশে যাওয়ার দুটি সংযোগ সড়ক রয়েছে। এ সংযোগ সড়ক দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার গাড়ি নোয়াখালী যাচ্ছে ও আসছে এবং বিসিক শিল্প নগরীর ফ্যাক্টরিগুলোতে শত শত গাড়ি ডুকছে মালামাল লোড করে আবার বেরিয়ে মহাসড়ক হয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় যাচ্ছে। কিন্তু ব্যস্ততম মহাসড়কের এই জনগুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে কোন ধরণের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়নি। দেখা যায়, মহাসড়কের পূর্বপাশে রয়েছে অর্ধশতাধিক শিল্প-কারখানা, পশ্চিম পাশে বাজার ও বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এ অঞ্চলের মানুষজনকে তাদের ব্যক্তিগত প্রয়োজনে এবং জীবিকার তাগিদে প্রতিদিনই পার হতে হয় চারলেনের এই মহাসড়ক। বিশেষ করে শিল্প-কারখানায় কর্মরত হাজারোও শ্রমিক, স্কুলগামী শিক্ষার্থীদের। নিরাপদ পারাপারে ফুটওভার ব্রিজ ও জেব্রা ক্রসিং না থাকায় হেঁটে অনিরাপদ সড়ক পাড়ি দিতে গিয়ে ওইসব শ্রেনি পেশার মানুষজনকে, পড়তে হচ্ছে সড়ক দুর্ঘটনার কবলে।
স্থানীয় লোকজন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, মহাসড়কের ওই অংশে গত এক বছরে ২০০টির বেশি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে ৩০ জনের ওপরে এবং আহত হয়েছে প্রায় ৩/৪শ’ ওপরে মানুষ। অনেক মানুষ সড়ক দুর্ঘটনায় পঙ্গুত্ব জীবন যাপন করছেন। স্থানীয়রা আরও জানান, মহিপাল-নোয়াখালী সড়কে যানজট এড়াতে অসাধু ফল ব্যবসায়ী ও স্থানীয় প্রভাবশালী পরিবহন সংশ্লিষ্টদের বাঁধায় কয়েক বছর ধরে নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর জেলা ও সোনাপুর, হাতিয়া, কোম্পানিগঞ্জ উপজেলার যাত্রীবাহী বাস ও মালবাহী ট্রাক, কাভার্ডভ্যান গাড়িগুলো ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে উঠতে বিকল্পরাস্তা হিসেবে পাঁচগাছিয়া বাজার সংলগ্ন ছোট সড়ক দিয়ে চলাচলা করছে। সেই থেকে বিসিক গ্যাস কোম্পানির চৌরাস্তাটি অত্যন্ত ভয়ঙ্কর একটি জায়গায় পরিণত হয়েছে। ওই সড়কে গাড়ির চাপ বেড়ে যাওয়ায় এখন মানুষজন তেমন একটা চলাচল করে না। অনেক অভিভাবক তাদের সন্তানদেরকে ভয়ে স্কুলে পাঠাতে চায় না। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগামী শিক্ষার্থীরাও এখন আর ওই পথ দিয়ে স্কুলে যেতে সাহস করেনা। তারা বলেন, সড়কে নেই কোন নিরাপত্তা ব্যবস্থা। কিন্তু সড়ক পারাপারের জন্য এখানে বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে ওভারপাস বা আন্ডারপাসের প্রয়োজন রয়েছে বলে তারা জানান।
এ জেড খান স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ ও জেলা শিক্ষক সমিতির সভাপতি ফকির আহাম্মেদ ফয়েজ ইনকিলাবকে বলেন, মহাসড়কের ওই পয়েন্টটি অনেক ঝুঁকিপূর্ণ। ফুট ওভারব্রিজ ও জেব্রাক্রসিং না থাকায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে শিক্ষার্থীরা মহাসড়ক পার হয়ে স্কুলে আসতে হয়। মহাসড়কের পূর্বপাশ থেকে প্রায় ৩শ’ ওপরে ছাত্র-ছাত্রী এ স্কুলে আসা যাওয়া করে। তাদেরকে প্রতিনিয়তই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সড়ক পার হতে হয়। তিনি বলেন, মহাসড়কের দু’পাশে প্রায় ১০/১২টি স্কুল মাদরাসা রয়েছে। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা ৫ হাজারেরও বেশি। এ মহাসড়ক পার হতে গিয়ে আমাদের অনেক ছাত্র-ছাত্রী ও শিক্ষক আহত হয়েছেন। এ বিষয়ে জেলা আইন-শৃঙ্খলা সভায় বার বার আলোচনা হয়েছে। কিন্তু আজও কোন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয় না। তিনি আরও বলেন, সেখানে নিরাপত্তার জন্য ট্রাফিক পুলিশ নিয়োগ দেয়া প্রয়োজন এবং সেই সাথে ট্রাফিক সিগনালের ব্যবস্থা করা দরকার। বিকল্প ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এগিয়ে আসা উচিত।
ফেনী হাইওয়ে থানার ওসি মো. জাকির হোসেন জানান, ব্যস্ততম মহাসড়কের বিসিক চৌরাস্তা পয়েন্টে যাত্রী পারাপারের কোনো ব্যবস্থা নেই। সাধারণ লোকজন অসচেতন অবস্থায় চার লেনের এই মহাসড়ক পাড়ি দিতে গিয়ে প্রায়ই সড়ক দুর্ঘটনার কবলে পড়ছে। তাদের মধ্যে সিংহভাগই কারখানার শ্রমিক, শিক্ষার্থী ও স্থানীয় লোকজন সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন। তিনি বলেন, আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করে যাচ্ছি সেখানে যানবাহনগুলো নিয়ন্ত্রণ করার। কিন্তু সেখানে গাড়ির চাপ বেশি থাকায় যানজট সামাল দেয়া হাইওয়ে পুলিশের জন্য খুবই কষ্টসাধ্য ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। অচিরেই ওইস্থানে জরুরি ভিত্তিতে একটি ওভারপাস বা আন্ডার পাস অথবা ফুটওভার ব্রিজ এবং জ্রেবা ক্রসিং খুবই প্রয়োজন।
ফেনী ক্ষদ্র ও কুটির শিল্প নগরের কর্মকর্তা হালিম উল্লাহ জানান, বিসিক শিল্পনগরীতে ৪৬টি মিল ফ্যাক্টরি আছে। সেখানে প্রায় ৪ হাজারের ওপরে শ্রমিক কাজ করেন। তারা জেলার বিভিন্ন জায়গা থেকে সকালে আসে বিকেলে যায়। মিল ফ্যাক্টরিরর মালিকরা তাদের শ্রমিক কর্মচারীদেরকে নিয়ে চিন্তায় থাকতে হয়। তারাও মহাসড়কের চৌরাস্তা পয়েন্টে মানুষের নিরাপত্তার জন্য বিকল্প ব্যবস্থা করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি জোরলো আহবান জানান।
এ বিষয়ে ফেনী সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী বিনয় কুমার পাল ইনকিলাবকে জানান, সড়ক দুর্ঘটনা এড়াতে এবং জনসাধারণের নির্বিঘ্নে চলাচলের সুবিধার্থে মহাসড়কের লালপোল ক্রসিং এবং বিসিক চৌরাস্তা ক্রসিং নিয়ে সড়ক বিভাগ কাজ করছে। এ দুটি পয়েন্টে ওভারপাস অথবা আন্ডারপাস করা যায় কিনা এর সম্ভাব্যতা খতিয়ে দেখার দেখার জন্য বুয়েটকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে এবং ইতোমধ্যে দুটি টিমও গঠন করা হয়েছে। তারা কয়েকবার মহাসড়কের ওই দুটি পয়েন্ট পরিদর্শন করে গেছেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন