আগামী অর্থবছরের বাজেটে সংবাদপত্র শিল্পে করপোরেট কর কমানোর আশ্বাস দিয়েছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম। সংবাদপত্র শিল্প মালিকদের সংগঠন নিউজ পেপার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-নোয়াব ও টেলিভিশন মালিকদের সংগঠন অ্যাটকোর সঙ্গে গতকাল রোববার বিকেলে প্রাক-বাজেট আলোচনায় এ আশ্বাস দেন তিনি।
আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটকে সামনে রেখে গতকাল থেকে খাতভিত্তিক প্রাক-বাজেট আলোচনা শুরু করেছে এনবিআর। প্রথম দিনে গণমাধ্যম মালিকদের সঙ্গে কথা বলেন এনবিআর চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, রাজস্ব আদায় বৃদ্ধিতে গণমাধ্যম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এছাড়া করের আওতা বাড়াতেও অবদান রাখছে। কাজেই সংবাদপত্র শিল্পকে সহায়তা করতে আমাদের কোনো সমস্যা নেই।
নোয়াব ও অ্যাটকোর দেয়া দাবিগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে আগামী বাজেটে এর প্রতিফলনের আশ্বাস এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, সবকিছু নিয়ম-কানুনের মধ্য দিয়ে চলে। আমরা সব খাতকে নিয়ম-শৃঙ্খলার মধ্যে আনার চেষ্টা করছি। কর প্রশাসনে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে অটোমেশন কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে। সহজ করা হয়েছে নিয়ম-কানুন। আশা করছি করদাতারা শিগগিরই এসব উদ্যোগের সুফল পাবেন।
নোয়াব সভাপতি এ. কে. আজাদ সংবাদপত্র শিল্পের বর্তমান পরিস্থিতি তুলে ধরেন এবং এই শিল্পের সুরক্ষায় আসন্ন বাজেটে বিভিন্ন প্রস্তাব দেন। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, বর্তমানে সংবাদপত্র শিল্পে করপোরেট কর ৩০ শতাংশ। কোনো প্রতিষ্ঠানের পক্ষে এত বেশি কর দিয়ে টিকে থাকা সম্ভব নয়। এ শিল্পে করপোরেট কর কমিয়ে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করেন তিনি।
জবাবে এনবিআর চেয়ারম্যান জানান, বিষয়টি তিনি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখবেন, যাতে আগামী বাজেটে এর প্রতিফলন দেখা যায়।
ডেইলি স্টার সম্পাদক ও নোয়াবের নির্বাহী সদস্য মাহফুজ আনাম বলেন, সরকার হাজার হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা দিয়েছে। অথচ সংবাদপত্র শিল্পের জন্য এক টাকাও দেয়নি। কোভিড-পরবর্তী সময়ে দেশের সংবাদপত্র শিল্প ভয়াবহ সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। সংবাদপত্র শিল্পকে সেবামূলক হিসেবে বিবেচনা করে আগামী বাজেটে বিশেষ ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান তিনি। রয়টার্সসহ বিদেশি সংবাদ সংস্থাগুলোর কাছ থেকে সেবা নেয়ার ক্ষেত্রে বর্তমানে কর দিতে হয়। এই সেবাকে করমুক্ত করার প্রস্তাব করেন বণিক বার্তার সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ। নোয়াবের অন্যান্য দাবির মধ্যে রয়েছে-আমদানি পর্যায়ে নিউজপ্রিন্টের ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহার, বিজ্ঞাপন বিলের ওপর আরোপিত উৎসে কর ও অগ্রিম আয়কর প্রত্যাহার এবং বাড়িভাড়া ৭০ শতাংশ পর্যন্ত করমুক্ত করা।
অ্যাসোসিয়েশন অব টেলিভিশন চ্যানেল অনার্স বা অ্যাটকোর সিনিয়র সহ-সভাপতি ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া প্রধানত ব্যক্তি খাতের বিজ্ঞাপনের ওপর নির্ভরশীল। বর্তমানে বিজ্ঞাপন বিলে যে উৎসে কর কাটা হয় তা পরিশোধ করতে হয় চ্যানেলগুলোকে। এতে করে অনেক চ্যানেল আর্থিক চাপে রয়েছে। বিজ্ঞাপন বিলের উৎসে কর যাতে বিজ্ঞাপনদাতারাই পরিশোধ করে সেজন্য আগামী বাজেটে ব্যবস্থা রাখার অনুরোধ করেন তিনি।
মন্তব্য করুন