ঘূর্র্ণিঝড় জওয়াদের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত জমিতে চাষ বিলম্বিত হওয়ায় চাষিরা আলুর ফলন ও ন্যায্য মূল্য নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় রয়েছেন। আগামী এক মাস শীত না থাকলে আলুর ফলন কম হবে। মাঘের শেষের এ বৃষ্টিতে জমিতে পানি না জমলে ভালো ফলন হবার সম্বাবনা রয়েছে। ঘূর্র্ণিঝড় জওয়াদের প্রভাবে জেলায় প্রায় ২০ হাজার হেক্টর জমির আবাদী আলুবীজ নষ্ট হয়ে যায়। কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত জমিতে নতুনভাবে চাষ দিয়ে আলু বীজ রোপন করে। গত কয়েক বছরে অব্যাহত লোকসানে প্রান্তিক কৃষক দিশেহারে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি আলু মৌসুমে জেলায় ৩৭ হাজার ৯শ’ হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়। এর মধ্যে মুন্সীগঞ্জ সদরে ৯ হাজার ৮০৫ হেক্টর, টঙ্গীবাড়িতে ৯ হাজার ৯শ’ হেক্টর, শ্রীনগরে ২ হাজার ২শ’ ৬০ হেক্টর, সিরাজদিখানে ৯ হাজার ৩শ’ ৬০ হেক্টর, লৌহজেং ৪ হাজার ১শ’ ১০ হেক্টর এবং গজারিয়ায় ২ হাজার ৪শ’ ৬৫ হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে সরকারি হিসেবে ১১ লক্ষ ৫৮ হাজার মেট্রিক টন। প্রকৃত উৎপাদন হবে প্রায় সাড়ে ১৩ লক্ষ মেট্রিক টন। আলু আবাদের শুরুতে ঘূর্র্ণিঝড় জওয়াদের প্রভাবে অতিবৃষ্টিতে জমিতে পানি জমে। এতে জেলায় প্রায় ২০ হাজার হেক্টর জমির রোপন করা আলুবীজ নষ্ট হয়ে যায়। কৃষক ঐ সব জমিতে নতুনভাবে চাষ দিয়ে আলুবীজ রোপন করে।
সিরাজদিখান উপজেলার লতুব্দি গ্রামের কৃষক আব্দুল সাত্তার শেখ বলেন, বৃষ্টিতে আমার পাঁচকানি জমির আলু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নতুনভাবে চাষ করতে লোকশান গুনতে হয়েছে প্রায় ৮ লাখ টাকা। নতুনভাবে চাষ করায় গাছ এখনো ছোট। প্রায় দেড় মাস পর আলু উত্তোলন করতে পারবো। ঠান্ডা থাকলে ফলন ভালো হবে। গত বছরের লোকশান পোষাতে এ বছর আটকানি জমিতে আলু চাষ করেছি। ন্যায্যমূল্য না পেলে পথে বসতে হবে। আলদি গ্রামের জিয়াউর রহমান জানান, ক্ষতিগ্রস্ত জমিতে আলু চাষ করতে প্রায় ২০ দিন দেরি হয়। আগামী এক মাস শীত না থাকলে ফলন ভালো হবে না। সময় মতো আলু উঠাতে না পারলে ন্যায্য মূল্য পাওয়া নিয়েও শঙ্কা রয়েছে। গত কয়েক বছর অব্যাহত লোকসানে পরে প্রান্তিক কৃষক পুজি শেষ করেছে। এবছরও ন্যায্যমূল্য না পেলে আগামী মৌসুমে আলু চাষ কমে যাবে।
চন্দনধুল গ্রামের কৃষক ছাদেক আলী জানান, সাতকানি জমিতে নতুনভাবে আলু চাষ করতে ৮ লাখ টাকা লোকসান গুনতে হয়েছে। ফলন ভালো না হলে এবং ন্যায্য মূল্য পাওয়া না গেলে আর্থিক চরম সংকটে পরতে হবে। প্রতি বছর লাভের আশায় আলু চাষ করি, কিন্তু গত ৭/৮ বছরে প্রায় কোটি টাকা লোকসান গুনতে হয়েছে। আলু ব্যবসায়ী পলাশ বেপারী জানান, আগামী এক থেকে দেড়মাস পর যে সব আলু উঠবে সে সবের বাজার মূল্য কম থাকবে। কৃষকদেরকে ঐ সব আলু হিমাগারে রাখতে হবে। প্রান্তিক কৃষক টাকার জন্য জমিতেই আলু বিক্রি করে দিবে। এতে তারা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আগামী আলু মৌসুমে এর প্রভাব পরবে। অনেকে আলু চাষ ছেড়ে দিবে। এদিকে উত্তরাঞ্চলে ফলন ভালো হওয়ায় বাজার মূল্য এখন কম। বর্তমানে পাইকারী মূল্য কেজি প্রতি ৮/১০ টাকা। আগামী একমাসে আলুর মূল্য আরো কমে যাবে। মাঘের শেষের এ বৃষ্টি অধিক ফলনের আশার আলো দেখাচ্ছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে উপ পরিচালক মো. খুরশীদ আলম জানান, জেলায় প্রাকৃতিক দুর্যোগে ১১ হাজার ৬শ’ হেক্টর আবাদী আলুর জমি নষ্ট হয়। কৃষক নতুনভাবে ক্ষতিগ্রস্ত জমিতে অলু আবাদ করে। কুয়াশা কম থাকায় গাছে রোগ বালাই লাগেনি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন