শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

খেলাধুলা

একই দিনের ভিন্ন অর্থ সালাহ-মানের

স্পোর্টস ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ১২:০৬ এএম

প্রিমিয়ার লিগে লিভারপুলের তিন দশকের শিরোপা খরা দ‚র করার নায়কদের একজন তিনি। দলটির হয়ে জিতেছেন চ্যাম্পিয়ন্স লিগও। তবে দেশের হয়ে ছিল না কোনো অর্জন। আফ্রিকান নেশন্স কাপ জয়ের মধ্য দিয়ে অবশেষে সেই শূন্যতা ঘুচল। সাদিও মানের কাছের দিনটি তাই জীবনের সেরা। আর এই সাফল্য? বললেন, নিশ্চিতভাবেই তার ক্যারিয়ারের সেরা অর্জন।
ক্যামেরুনের ওলেম্বে স্টেডিয়ামে রোববার রাতে সেনেগাল ও মিশরের মধ্যকার ফাইনালটি নির্ধারিত সময়ের পর অতিরিক্ত ৩০ মিনিটও গোলশূন্য থাকলে গড়ায় টাইব্রেকারে। সেখানে ৪-২ গোলে জিতে প্রথমবারের মতো প্রতিযোগিতাটির শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করে মানের দল। নিজের অনুভ‚তি জানাতে গিয়ে মানে বলেন, ক্লাব পর্যায়ে জেতা সব অর্জনের চেয়ে প্রাপ্তির তালিকায় এটিই তার কাছে সবচেয়ে এগিয়ে থাকবে। দেশকে শ্রেষ্ঠত্বের আসনে বসাতে পেরে উচ্ছ¡সিত তিনি, ‘এটা আমার জীবনের সেরা দিন এবং আমার ক্যারিয়ারের সেরা ট্রফি। আমি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ও আরও কয়েকটি ট্রফি জিতেছি। কিন্তু এটি (আফ্রিকান নেশন্স কাপ) আমার কাছে বিশেষ কিছু। এটি আমার জন্য আরও গুরুত্বপ‚র্ণ। নিজের জন্য, আমার দেশের মানুষের জন্য এবং আমার পরিবারের সবার জন্য আমি খুশি।’
ম্যাচের শুরুটা যদিও সুখকর ছিল না মানের ও সেনেগালের। সপ্তম মিনিটে পেনাল্টি থেকে দলকে এগিয়ে দেওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু মিশর গোলরক্ষক আবু গাবাল ঠেকিয়ে দেন তার বুলেট গতির স্পট কিক। ম্যাচ টাইব্রেকারে গড়ালে মানের সামনে সুযোগ আসে প্রথম ভুল শোধরানোর। এবার আর তাকে আটকাতে পারেননি আবু গাবাল। মানের নেওয়া শেষ শটেই নিশ্চিত হয় ২০০২ ও ২০১৯ আসরের রানার্সআপ সেনেগালের শিরোপা জয়। তিনটি গোল করে ও সতীর্থদের দিয়ে দুটি করিয়ে সেনেগালকে ফাইনালে তোলায় সবচেয়ে বড় ভ‚মিকা মানের। আর শেষে টাইব্রেকারে ওই শিরোপা জয়ী শট। টুর্নামেন্ট সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কারও পেয়েছেন তারকা এই ফরোয়ার্ড।
ফাইনালের মতো স্নায়ুচাপের মঞ্চে শুরুতেই পেনাল্টি মিস করায় একজন খেলোয়াড়ের ভেঙে পড়ার উদাহরণ আছে ঢের। মানের জন্যও তা কম ধাক্কা ছিল না। তবে যেভাবে তিনি ঘুরে দাঁড়িয়েছেন তা অসাধারণের চেয়েও বেশি কিছু। সতীর্থদের এ জন্য ধন্যবাদ দিতে ভুল করেননি তিনি, ‘প্রথম পেনাল্টি মিস করার ঘটনাটা আমার জন্য ছিল বড় ধাক্কা। আমার সতীর্থরা তখন আমার কাছে এসে বলেছিল, “সাদিও আমরা একসঙ্গে জিতি এবং একসঙ্গে হারি। আমরা তোমাকে জানি। তুমি আমাদের জন্য অনেক করেছো-এগিয়ে যাও।” তাদের কথাগুলো আমাকে শক্তি জুগিয়েছিল। আমার মনে হয়, টাইব্রেকারে আমার শটের সময় ওটাই পার্থক্য গড়ে দিয়েছিল... এই ট্রফি পুরো সেনেগাল দলের, সবাই এটার যোগ্য।’
মানে যেখানে দিনটি ভুলে যেত চাইবেন না জীবনেও, ঠিক এই দিনটি দুঃস্বপ্নেও যেন না আসে- তেমনই চাওয়া এই ম্যাচ খেলা আরেক জনের- মোহাম্মদ সালাহ। আফ্রিকান ফুটবলে তার দেশ মিসর বরাবরই শক্তিশালী, দেশটি সাতবারের আফকন চ্যাম্পিয়ন হলেও টুর্নামেন্টটি সালাহর জন্য আক্ষেপ হয়েই আছে। লিভারপুল তারকা যে একবারও এই শিরোপা জয়ের স্বাদ পাননি। এবার সে আক্ষেপ ঘোচানোর সুযোগ পেলেও ফাইনালে হেরে বসেছেন ক্লাব-সতীর্থ সাদিও মানের সেনেগালের কাছে। তীরে এসে তরি ডুবেছে মিসরের। দেশের হয়ে শিরোপা জেতার আশার সমাধি হয়েছে টাইব্রেকার-ভাগ্যে। স্বাভাবিকভাবেই মন খারাপ সালাহর। তবে মন খারাপের ব্যূহ থেকে তাড়াতাড়ি বেরিয়ে আসার জন্য ফুটবলকেই আশ্রয় মানছেন এই ফরোয়ার্ড।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম টাইমস জানিয়েছে, আগামীকাল রাতে হতে যাওয়া লিভারপুল-লেস্টার ম্যাচেই মাঠে নেমে যেতে চান লিভারপুলের এই তারকা। নিতে চান না বাড়তি বিশ্রাম। অথচ মিসরের হয়ে ১১ দিনের মধ্যে ৪৮০ মিনিট মাঠে থাকার পর তারই বিশ্রাম নিতে চাওয়ার কথা সবচেয়ে বেশি। কিন্তু সালাহ ও পথে যাচ্ছেন না। গতকালই দলের সঙ্গে অনুশীলনে যোগ দিয়েছেন তিনি।
তবে সালাহ চাইলেই তো আর হবে না, লিভারপুলের কোচ ইয়ুর্গেন ক্লপকেও চাইতে হবে। ক্লপ যদি দেখেন, ১১ দিনে ৪৮০ মিনিট ফুটবল খেলার পরেও সালাহ লেস্টারের বিপক্ষে নামার মতো ফিট আছেন, তবেই লিভারপুলের একাদশে দেখা যাবে সালাহকে। নয়তো গত এক মাসের মতো মানে ও সালাহকে ছাড়াই মাঠে নামবে লিভারপুল। কেননা, শিরোপা নিয়ে গতকালই সেনেগালে ফিরেছেন মানেরা। আফকনজয়ী এই তারকা সতীর্থদের নিয়ে দেশটির রাজধানী ডাকারে দেখা করেছেন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে। বিমানবন্দরে থেকে প্রেসিডেন্টভবন পর্যন্ত গোটা পথই ছিল লোকে লোকারণ্য। এমনটি হবে জেনেই কি-না এদিন রাষ্ট্রীয় ছুটিই ঘোষণা করে দিয়েছেন তিনি!

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন