দ্রত এগিয়ে চলছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতুর নির্মাণকাজ। এরই মধ্যে প্রায় ৩৮ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। এটি হবে দেশের দীর্ঘতম রেলসেতু। যথাসময়ে কাজ শেষ করা গেলে এ সেতু দিয়ে রেল চলাচল শুরু হবে ২০২৪ সালে। তখন উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের যাতায়াত এবং পণ্য পরিবহনে আরও গতি আসবে।
সরেজমিনে দেখা যায়, বঙ্গবন্ধু সেতুর ৩০০ মিটার উজানে নির্মিত হচ্ছে দেশের মেগা প্রকল্পের মধ্যে অন্যতম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু। সিরাজগঞ্জ ও টাঙ্গাইলে নদীর দুই প্রান্তে দুটি ভাগে দেশি, বিদেশি প্রকৌশলী আর কর্মীদের অক্লান্ত পরিশ্রমে চলছে এ সেতুর নির্মাণ কাজ। বড় বড় ক্রেনের সাহায্যে সেতুর প্রথম পর্যায়ের পাইলিং-এর কাজ চলছে এখন। ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটার দীর্ঘ ডুয়েল গেজ ডাবল ট্র্যাকের এ সেতুটি নির্মিত হবে মোট ৫০টি পিয়ারের উপর। এটি হবে দেশের দীর্ঘতম রেলসেতু।
বাংলাদেশ রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, রাজধানীর সঙ্গে উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন এনেছে বঙ্গবন্ধু সেতু। যমুনা নদীর ওপর স্থাপিত বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে এসব অঞ্চলের যানবাহন চলাচল করে। যার এক পাশে এক লাইনের একটি রেললাইন রয়েছে। এটি দিয়ে ঘণ্টায় মাত্র ২০ কিলোমিটার গতিতে রেল চলে। এতে সেতুর দুই পাশে অন্য রেল অপেক্ষা করতে হয়। এ কারণে বাংলাদেশ রেলওয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু নির্মাণ করছে। এটি টাঙ্গাইল ও সিরাজগঞ্জকে যুক্ত করবে। এছাড়া একাধিক লোকোমোটিভ বা ইঞ্জিন দিয়ে রেল চালানো যাবে। রেলসেতুর পিয়ার হবে কংক্রিটের। উপরের সুপার স্ট্রাকচার হবে স্টিলের। পিয়ারের কাজ শেষ হলেই বিদেশ থেকে সুপার স্ট্রাক্চার এনে বসিয়ে দেয়া হবে। স্টিল অবকাঠামোর এই সেতুতে ডাবল লাইন থাকবে। রেল চলতে পারবে সর্বোচ্চ ১২০ কিলোমিটার গতিতে। নির্মাণ শেষ হলে এটিই হবে দেশের দীর্ঘতম রেল সেতুর তকমা। এর ওপর দিয়ে যে কোনো ওজনের মালবাহী ও যাত্রীবাহী ট্রেনও চলতে পারবে।
গত নভেম্বরে এই সেতুর নির্মাণকাজের অগ্রগতি প্রতিবেদন তৈরি করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। এই প্রতিবেদনে বলা হয়, রেলসেতুর ৫০টি পিয়ারের মধ্যে ১১টি পিয়ারের কাজ শেষ হয়েছে। অন্য পিয়ারের গাইড ফ্রেমের কাজ চলছে। ক্রেনের সাহায্যে হ্যামার দিয়ে বসানো হচ্ছে পাইলিং পাইপ। গত ১৪ ডিসেম্বর সেতুর ৪৮ নম্বর এবং ১৭ ডিসেম্বর ৪৬ নম্বর পিয়ারের টপ সøাব কনসারটিংয়ের কাজ শেষ হয়েছে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু নির্মাণ প্রকল্প সূত্র জানায়, ২০১৬ সালের ৬ ডিসেম্বর এই প্রকল্পের অনুমোদন দেয় একনেক সভা। তখন এর ব্যয় ধরা হয়েছিল ৯ হাজার ৭৩৪ কোটি টাকা। কিন্তু নানা কারণে তখন সেতু নির্মাণে জটিলতা তৈরি হয়। পরে গত বছরের ৩ ফেব্রæয়ারি প্রথম সংশোধিত প্রকল্প একনেক সভায় অনুমোদিত হয়। অনুমোদিত প্রকল্প ব্যয় ধরা হয় ১৬ হাজার ৭৮০ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। এর মধ্যে ১২ হাজার কোটি টাকার বেশি জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন বা জাইকার কাছ থেকে ঋণ হিসেবে পাবে বাংলাদেশ। বাকি অর্থ দেবে বাংলাদেশ সরকার।
২০২০ সালের ২৯ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রকল্পের নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। রেলসেতুটির কাজ শেষ করার সময়সীমা ২০২৪ সালের আগস্ট মাসে নির্ধারণ করা হয়। দ্রæত চলমান এই প্রকল্পের ব্যয় ও সময়সীমা বাড়ানো লাগবে না। অনুমোদিত ব্যয় ও সময়ের মধ্যেই প্রকল্পের কাজ শেষ হবে বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের।
এছাড়া সেতুর দুই পাশে দশমিক ৫ কিলোমিটার ভায়াডাক্ট, ৭ দশমিক ৬৬৭ কিলোমিটার রেলওয়ে অ্যাপ্রোচ এমব্যাংকমেন্ট এবং লুপ ও সাইডিংসহ মোট ৩০ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণ করা হবে। বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব ও বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম স্টেশন ভবন আধুনিকের পাশাপাশি ইয়ার্ড রিমডেলিং করা হবে। সেতুর এই দুই পাশের স্টেশনের সিগন্যাল ও টেলিকমিউনিকেশন ব্যবস্থা করা হবে উন্নত। সেতু এলাকায় নির্মিত হবে রেলওয়ে সেতু জাদুঘর।
এ প্রসঙ্গে সিরাজগঞ্জ চেম্বার অব কমার্সের প্রেসিডেন্ট আবু ইউসুফ সূর্য বলেন, রেল সেতুর মাধ্যমে যাত্রী সেবার মান বাড়ার পাশাপাশি ব্যবসা বাণিজ্যেরও প্রসার ঘটবে।
প্রকল্প পরিচালক আল ফাত্তাহ মো. মাসউদুর রহমান বলেন, এখন পর্যন্ত রেল সেতুর কাজের অগ্রগতি ৩৮ শতাংশ। আর নিদিষ্ট সময়ের মধ্যেই রেল সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হবে বলে জানিয়েছেন রেলমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন। আশা করি, ২০২৪ সালের আগস্ট মাসে প্রকল্পের কাজ শেষ হবে। এই সেতুতে দুটি লাইন থাকবে। সেতু পার হওয়ার জন্য কোনো রেলকে অপেক্ষা করতে হবে না।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন