পঞ্চগড়ে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের (কাদিয়ানি) ‘সালানা জলসা’কে কেন্দ্র করে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের বাড়িঘর পরিদর্শন করেছেন রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন। গতকাল সোমবার বেলা ১১টার দিকে জেলা শহরের উপকণ্ঠে আহম্মদনগর এলাকায় তিনি ক্ষতিগ্রস্তদের সমবেদনা জানান। তবে সেখান থেকে কিছু দূরে শালশিড়ি এলাকায় গিয়ে তিনি ক্ষতিগ্রস্তদের ‘তোপের মুখে’ পড়েন পঞ্চগড়-২ আসনের এই সংসদ সদস্য।
দুপুর পৌনে ১২টার দিকে শালশিড়ি এলাকার ক্ষতিগ্রস্তদের কয়েকটি বাড়িঘর পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম। তিনি পঞ্চগড় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। এ সময় আহমদিয়া সম্প্রদায়ের লোকজন একত্রে চিৎকার করে রেলমন্ত্রীকে বলতে থাকেন, এই এলাকার (শালশিড়ি) বাড়িঘরে যারা হামলা-অগ্নিসংযোগে নেতৃত্ব দিয়েছেন, তারা এখনো মন্ত্রীর আশপাশেই আছেন। এই হামলাকারীদের গ্রেফতার করে বিচার করা না হলে তারা আত্মহত্যা করতে বাধ্য হবেন।
সদুত্তর না পেয়ে ক্ষতিগ্রস্তরা মন্ত্রীর সামনেই নানা ধরনের সেøাগান দিতে থাকেন এবং হাউমাউ করে কান্নাকাটি শুরু করেন। এতে কিছুটা হট্টগোল শুরু হয়। এ সময় রেলমন্ত্রী তাদের আশ্বস্ত করে বলেন, ঘটনার সঙ্গে যেই জড়িত হোক তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হবে। পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে মন্ত্রী সেখান থেকে চলে যান। পাড়া-মহল্লায় গ্রেফতার আতঙ্ক, আটক ৯০ : আমাদের পঞ্চগড় জেলা সংবাদদাতা জানান, পঞ্চগড়ে কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের সালানা জলসা ঘিরে সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশ,র্যাব ও কাদিয়ানীদের করা মামলায় পাড়া-মহল্লায় গ্রেফতার আতঙ্কে রয়েছেন মানুষ। গতকাল সোমবার দুপুর পর্যন্ত আটক করা হয়েছে ৯০ জন। থানায় আটককৃত শ্যালক ফরিদুল হককে ভাত দিতে এসে আটকের শিকার হয়েছেন দুলাভাই আনিছুর ইসলাম। আটকের পর বিকালে তাদেরকে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়।
পুলিশ জানায়, পঞ্চগড় সদর থানার চারজন উপ-পরিদর্শক একজন র্যাব কর্মকর্তা ও কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের মোহাম্মদ ওসমান আলী নামের এক ব্যক্তি মামলাগুলো দায়ের করেন। ছয়টি মামলায় হাজার হাজার অজ্ঞাত আসামী করা হয়েছে। মামলায় অভিযোগ আনা হয়েছে, সরকারি কাজে বাধা, ককটেল বিস্ফোরক, অন্যায় আক্রমণ, হত্যা, ভাঙচুর লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, জখম, হুকুমদান ও ক্ষতিসাধন।
এর আগে শুক্রবার যোহরের নামাযের পরে কাদিয়ানীদের সালানা জলসা বন্ধ ঘোষণার দাবিতে পঞ্চগড় শের-ই বাংলা পার্ক সংলগ্ন মহাসড়কে বিক্ষোভ করলে পুলিশ বাধা দেয়। এক পর্যায়ে পুলিশের সঙ্গে বিক্ষুব্ধ মুসল্লীদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। বিক্ষুব্ধ মুসল্লিদের দিকে লক্ষ্য করে অসংখ্য রাবার বুলেট, টিয়ারশেল এবং কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে পুলিশ। অপরদিক থেকে মুসল্লিরাও ইট পাটকেল নিক্ষেপ করে। এতে একজন মুসল্লি ও একজন কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের যুবক নিহত হয়েছেন। বিভিন্ন স্থানে অগ্নিসংযোগ ও ভাংচুরের ঘটনাও ঘটেছে। পঞ্চগড় সদর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. দুলাল উদ্দিন বলেন, পৃথক পৃথক মামলায় সোমবার বিকাল পর্যন্ত ৯০ জনকে আটক করে, আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন