কামরজ্জামান টুটুল, হাজীগঞ্জ (চাঁদপুর) থেকে
চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে বালু মহালের বালু পড়ে নাব্য কমছে ডাকাতিয়া নদীর। হাজীগঞ্জ বাজার এলাকার ডাকাতিয়া নদীর উত্তর অংশের অধিকাংশ স্থানে আবর্জনা ফেলানোর কারণে পানি ও পরিবেশ দূষণ হচ্ছে প্রতিনিয়ত। আর ময়লা ফেলে ও অল্প অল্প ভরাট করে কৌশলে দখল করা হচ্ছে ডাকাতিয়া নদীকে। এতকিছুর পরে নদী সংশ্লিষ্ট সরকারি দফতরগুলো ও পরিবেশ রক্ষা কমিটি কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে বলে প্রাথমিকভাবে কারো নজরে পড়েছে জানেননি নদী পাড়ের মানুষগুলো। আবার সওজের জমি দখল করে বেশ কয়েকটি বালু মহাল ব্যবসা করছে বলে সওজ অফিস সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে। জানা যায়, চাঁদপুর শহরস্থ বড় স্টেশন এলাকার মেঘনা-ডাকাতিয়ার মিলনস্থল থেকে শুরু হয়ে চাঁদপুর সদর উপজেলা, হাজীগঞ্জ উপজেলা-শাহরাস্তি হয়ে কুমিল্লার লাকসামের দিকে চলে গেছে ডাকাতিয়া নদী। ডাকাতিয়া প্রশস্ত কম হলে ও এর বিস্তৃতি সুবিশাল এলাকাজুড়ে। বিশেষ করে বৃহত্তর নোয়াখালী (চাঁদপুর-লক্ষ্মীপুর-কুমিল্লা-ব্রাহ্মণ বাড়িয়ার) এলাকার বর্ষা মৌসুমের পুরো পানি ডাকাতিয়া ও গোমতী নদী ধরে মেঘনা হয়ে বঙ্গোপসাগরে নামে। আবার সেচ মৌসুমে ডাকাতিয়ার পানিকে কাজে লাগিয়ে মেঘনা পূর্ব পাড়ে সুদূর কমিল্লা জেলার কিছু এলাকা পর্যন্ত ইরি-বোরো চাষ করা হয়। আর এ জন্য এ অঞ্চলের মানুষের কাছে ডাকাতিয়া নদীর গুরুত্ব অনেক বেশি। তাই এ অঞ্চলের মানুষের জীবন-জীবিকাকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে ডাকাতিয়া নদীকে দূষণমুক্তসহ নাব্য ও দখল উচ্ছেদের বিকল্প নেই বলে মনে করেন স্থানীয়রা। সরজমিনে দেখা যায়, ডাকাতিয়া নদীর হাজীগঞ্জ বাজার এলাকার প্রায় ২ কিলোমিটার অংশ বেশ অত্যাচার সহ্য করতে হয় এই নদীকে। বিশেষ করে বালু মহালের বালু নামানোর কাজে প্রতিদিন প্রায় শতাধিক বালুবাহী ট্রলারের আনাগোনা, পাথরবাহী ট্রলারের আনাগোনা, বালি নামানের সময় বালু পড়ে পড়ে নদীর নাব্য কমে যাওয়া, নদী সরু হয়ে যাওয়া, মুরগির ময়লা, বিভিন্ন বাসা-বাড়ির ময়লা, কসাইখানার ময়লাসহ ড্রেনের পানি নিষ্কাশনসহ বিভিন্ন আবর্জনা ফেলে ডাকাতিয়াকে মেরে ফেলা হচ্ছে। অথচ পৌর কসাইখানার পাশে পৌরসভার ডাস্টবিন থাকার পরেও অজ্ঞাত কোনো কারণে নদীতে ময়লা ফেলা হচ্ছে। সরজমিনে আরো দেখা যায়, বাজারস্থ তরকারি পট্টির শেষমাথা, পৌর কসাইখানার পাশের অংশসহ বেশ কয়েকটি স্থানে ময়লা ফেলার ফলে ময়লার স্তূপ জমে জমি নদীর বেশ কয়েকটি স্থান অনেকখানি ভরাট হয়ে গেছে। এর পরেই সময়-সুযোগ মতো ভরাট অংশটুকু পাশের জমির মালিক দখলে নিয়ে নিবেন আর এভাবেই কৌশলে অল্প অল্প করে ভরাট আর দখল হয়ে যাচ্ছে ডাকাতিয়া নদীর হাজীগঞ্জ বাজারের দক্ষিণ অংশটুকু। কৌশলে ডাকাতিয়া নদী দখলের এই মহোৎসব চলেছে বেশ কয়েক বছর ধরে। সওজ হাজীগঞ্জ অফিস (উপ-সহকারী প্রকৌশলীর কার্যালয়) সেকশন অফিসার (এস ও )আবদুল্লা আল মামুন এ বিষয়ে ইনকিলাবকে জানান, নদীর পাড়ের বালু মহালগুলোর সম্পত্তি আমাদের আর এগুলো থেকে ট্যাক্স আদায় করছে পৌরসভা। তবে সওজের স্থানে থাকা অবৈধ বালু মহালগুলোতে উচ্ছেদের জন্য ইতোমধ্যে উপরে চিঠি দেয়া হয়েছে ও মামলা দায়ের করা হয়েছে। হাজীগঞ্জ বাজার এলাকার নদীতে অবৈধ দখলদার রয়েছে এমন কথা স্বীকার করে আবদুল্লা আল মামুন আরো বলেন, উচ্ছেদের জন্য অনেক কাজ চূড়ান্ত করা হয়েছে। নদীর ড্রেজিং ও দূষণ রোধে কাজ করে বিআইডব্লিউটিএ। বিআইডব্লিউটিএ (চাঁদপুর) উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান মুঠোফোনে জানান, ডাকাতিয়া নদীর হাজীগঞ্জের এই অংশটুকুর এ অবস্থা আগে আমি জানতাম না। তবে এ বিষয়ে জেলার আইনশৃঙ্খলা সভায় আমরা তুলব ও জেলা প্রশাসক স্যারের সার্বিক সহযোগিতা নিয়ে কাজে নামব।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন