জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় আইন-১৯৭৩ অনুসারে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক পর্ষদসমূহ হচ্ছে সিন্ডিকেট, সিনেট, ডিন, একাডেমিক কাউন্সিল ও অর্থ কমিটি। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়টির এসব পর্ষদের প্রত্যেকটিতে নির্বাচিত সদস্যদের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে। গতকাল শনিবার বিশ্ববিদ্যালয়টির জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরাম প্রকাশিত বিবৃতিতে এসব তথ্য জানা যায়। বিবৃতিতে সংগঠনটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক গত শুক্রবার স্বাক্ষর করেন।
বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, ‹২০১৬ সালের জুলাই মাসে মেয়াদ শেষ হয় সিনেট হতে সিন্ডিকেট সদস্যদের মেয়াদ। এরপর ২০১৮ সালের মে মাসে ডীন, একই বছরের জুনে সিন্ডিকেট, শিক্ষা পর্ষদ, অর্থ কমিটি এবং অক্টোবর মাসে সিনেটে শিক্ষক প্রতিনিধিদের মেয়াদ শেষ হয়। এছাড়া ২০২১ সালের জানুয়ারি মাসে মেয়াদ শেষ হয় ২৫ জন রেজিস্ট্রার গ্রাজুয়েট সিনেটরের।
এতে দাবি করা হয়, ‹১৯৭৩ এর অধ্যাদেশকে সমুন্নত রাখা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিশেষ করে ভিসির আইনগত দায়িত্ব ও নৈতিক কর্তব্য। বর্তমান ক্ষমতাসীন ভিসিকে সে দায়িত্ব পালনের বাধ্যবাধকতা বারবার স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো নিয়ম-নীতিরই তোয়াক্কা করছে না। দীর্ঘদিন ধরে সিনেট, সিন্ডিকেট, শিক্ষা পর্ষদ, ডীন ইত্যাদি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদের মেয়াদোত্তীর্ণ হলেও বিধি মোতাবেক নির্বাচন অনুষ্ঠানের কোনো চেষ্টা তিনি করেননি। বিবৃতিতে অভিযোগ করা হয়, ভিসির দ্বিতীয় মেয়াদ আগামী ২ মার্চ শেষ হবে। এ অবস্থায় আইন অনুযায়ী প্যানেল নির্বাচন না করে অনৈতিকভাবে ও ছলচাতুরী করে পদ আঁকড়ে থাকার দূরভিসন্ধিমূলক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত আছেন উপাচার্য।’ বিবৃতিতে ভিসির প্রফেসর ফারজানা ইসলামের বিরুদ্ধে নির্বিচারে শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগের অভিযোগ তোলা হয়। এতে বলা হয়, ‹গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে সুসংহত না করলেও মেয়াদের শেষ দিকে এসে নির্বিচারে শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ দিয়ে যাচ্ছেন ভিসি। বিশ্ববিদ্যালয় আইনের প্রতি অনির্বাচিত ভিসির এই অবজ্ঞার ভিন্ন কোনো যৌক্তিক ব্যাখ্যা আমরা এখন পর্যন্ত পাইনি। এমতাবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সুষ্ঠু শিক্ষা-গবেষণা ও গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে অনতিবিলম্বে মেয়াদোত্তীর্ণ সকল পর্ষদের নির্বাচন সম্পন্ন করার জোর দাবি জানাচ্ছি।›
বিবৃতির বিষয়ে জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের নেতৃবৃন্দ বলেন, ‹মহামারি পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয় খোলা হলেও বর্তমান ভিসি এখনো বাংলো থেকে অফিস করেন। এতে রেজিস্ট্রার ভবনে ফাইলের স্তুপ পড়ে আছে। প্রশাসনিক জটিলতা তৈরি হয়েছে। এরপরেও তিনি আবারও উপাচার্য থাকতে চায়। যার কারণে ভিসি প্যানেল নির্বাচনে উদাসীন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। অথচ তার মেয়াদ শেষ হতে বাকি আছে মাত্র ১৮ দিন।
তারা বলেন, ‹গত ২৪ নভেম্বর ২০২১ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন, সিন্ডিকেট, শিক্ষা পরিষদ ও অর্থ কমিটির নির্বচান অনুষ্ঠিত হয় যেখানে প্রায় ১০০০ ভোটার উপস্থিতি ছিলেন। এমনকি গত ১৩ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০ অনুষদের ডিন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশাসনের উদাসীনতার কারণে নির্বাচন হচ্ছে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের গণতান্ত্রিক পরিবেশের অচলাবস্থা নিয়ে দর্শন বিভাগের প্রফেসর রায়হান রাইন বলেন, ‘করোনা প্রকোপের মধ্যে শিক্ষক সমিতির নির্বাচন হয়ে গেল, অন্যান্য নির্বাচনগুলো হতে বাধা নেই।
প্রশাসনের গাফিলতির কারণে এগুলো দীর্ঘদিন ধরে ফেলে রাখা হয়। তবে খুবই দ্রুত এসব নির্বাচন হয়ে যাওয়া উচিত। করোনার প্রকোপ এখন অনেকটা কমে আসছে ফলে নির্বাচনের আয়োজন করা কোন সমস্যা না।’
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন