টাঙ্গাইলের বাসাইলে ঝিনাই নদী থেকে বাংলা ড্রেজার দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের উৎসব চলছে। রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় প্রভাবশালী একটি চক্র দিনের পর দিন এসব কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তাদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে অভিযোগ করেও কোন কাজ হচ্ছে না বলে ভুক্তভোগীরা জানান।
বাসাইল পৌর এলাকার বালিনা নদীর ঘাট এবং তার দুশ’ গজ উত্তরে দু’টি বাংলা ড্রেজার বসিয়েছে স্থানীয় প্রভাবশালী বালু ব্যবসায়ীরা। কাঞ্চনপুর ছনকাপাড়া থেকে কোদালিয়াপাড়া হয়ে আদাজান পর্যন্ত নতুন রাস্তা নির্মাণের জন্যও ব্যবহার করা হচ্ছে ড্রেজার। কাঞ্চনপুর পশ্চিমপাড়া (মাজমের দও) ঝিনাই নদী থেকে দীর্ঘদিন ধরে বাংলা ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করছে প্রভাবশালী অপর একটি চক্র। এতে করে নদীতীরবর্তী এলাকার বসতবাড়ি, কবরস্থান, আবাদি জমি, কাঁচা-পাকা সড়কসহ বিভিন্ন স্থাপনা ইতোমধ্যে নদীগর্ভে চলে গেছে। বাকি স্থাপনাগুলো হুমকির মধ্যে রয়েছে। বাংলা ড্রেজার দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের উৎসব দ্রুত বন্ধ করতে না পারলে সামনের বর্ষায় প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সর্বস্ব নদী গর্ভে বিলিন হবার আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী। এলাকাবাসীর অভিযোগ, পশ্চিমপাড়া (মাজমের দও) ঝিনাই নদীর বাঁকে কিছুটা ভাঙন সৃষ্টি হয়েছে। ভাঙন কবলিত স্থানে বাংলা ড্রেজার বসানোয় অল্প দিনের মধ্যেই পুরো এলাকায় ব্যাপক ভাঙনের কারণে ওই এলাকার বসতবাড়ি, আবাদী জমি নদী গর্ভে চলে যায়। সম্প্রতি ডিডিআইআরডব্লিউএসপি প্রকল্পের আওতায় ১ কোটি ২৫ লাখ ৩২ হাজার ৪৬২ টাকা ব্যয়ে ‘আদাজান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে কোদালিয়াপাড়া সড়ক প্রশস্ত ও শক্তিশালী করণ’ নতুন রাস্তার কাজ শুরু হয়। মেসার্স তাপস ট্রেডার্স ১১শ’ মিটার এই রাস্তায় ১৪ লাখ ২৩ হাজার টাকা প্রাক্কলন ব্যয়ে তিনশ’ পনেরো মিটার প্যালাসাইটিং, ১৩ লাখ ৪৭ হাজার ৪৫২ টাকার প্রাক্কলন ব্যয়ে সাইড বাই সাইড মাটির কাজ করালেও রাস্তার বক্সে তিনি বাংলা ড্রেজার দিয়ে মাটি ভরাট করছেন। রাস্তায় বালু ফেলার নাম করে এই বাংলা ড্রেজার বসানোর অভিযোগ উঠেছে উপজেলা ছাত্রলীগের একাধিক নেতার বিরুদ্ধে। আর তাদের মদদ দেয়ার অভিযোগ উঠেছে উপজেলা আ.লীগের এক নেতার। দিনের বেলা রাস্তায় বালু ফেলা হলেও রাতে বেলা ভরাট করা হচ্ছে ব্যক্তি মালিকানার বাড়ি। গেল কয়েক সপ্তাহে রাতের আঁধারে কোদালিয়াপাড়ার আশরাফ হোসেন, শাহজাহান মিয়া, মিজানুর রহমান, মামুনের ভিটেবাড়ি এবং পুকুর ভরাট করা হয়েছে। নালা ভরাট করা হয়েছে আরো কয়েকজনের। অভিযোগ উঠেছে, ছনকাপাড়া, কোদালিয়াপাড়ার অসংখ্য বাড়িতে মাটি ভরাটের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছে এই ভূমিদস্যুরা। রাস্তার কাজে মাটি ভরাটের জন্য এই প্রকল্পে যথাযথ নিয়মে সরকারি অর্থ বরাদ্দ দেয়া থাকলেও অবৈধ বাংলা ড্রেজার দিয়ে বালু ফেলা হবে কেন এমন প্রশ্ন রেখে স্থানীয় কৃষক ছানোয়ার হোসেন বলেন, এলাকাবাসী সংঘবদ্ধ হয়ে ড্রেজার ভাঙতে গেলে ভূমিদস্যুরা রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে নানা ধরনের হুমকি দেয়। আবু সাইদ বলেন, একটি সরকারি রাস্তা করতে গিয়ে আরেকটি রাস্তা নদীগর্ভে ফেলার ব্যবস্থা করছে তারা। আমরা জেলা প্রশাসক, উপজেলা সহকারী কমিশনারের দপ্তরসহ (ভূমি) বিভিন্ন স্থানে আবেদন করেছি। কিন্তু কোন কাজ হচ্ছে না।
বালিনা নদীর ঘাট এলাকায় দু’টি ড্রেজার বসিয়েছে বাসাইল পৌরসভার ৫ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সাইফুল ইসলামের আত্মীয় বালু ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলাম ও দুলাল।
এ বিষয়ে ড্রেজার মালিক জাকির হোসেন বলেন, রাস্তার ঠিকাদার আমাকে রাস্তায় মাটি ফেলার কন্ট্রাক দিয়েছে। আপনার সাথে সাক্ষাতে কথা বলবো।
রাস্তার ঠিকাদার মেসার্স তাপস ট্রেডার্সের প্রতিনিধি ফরিদ আহমেদ বলেন, উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম আহবায়ক নাহিদ হোসেন মীম রাস্তার কাজ এনেছে, আপনি ওনার বক্তব্য নেন।
উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম আহবায়ক নাহিদ হোসেন মীমের সাথে যোগাযোগ করা হলে মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
উপজেলা প্রকৌশলী মো. আব্দুল জলিল বলেন, সাইড বাই সাইড মাটির কাজ ধরা আছে। বালু ফেলার জন্য অর্থও বরাদ্দে ধরা আছে। ড্রেজার ব্যবহার করে বালি ফেললে এ দায়ভার ঠিকাদারকেই নিতে হবে। আমরা ড্রেজার ব্যাবহারের বিপক্ষে।
এ বিষয়ে বাসাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাহিদা পারভীন বলেন, ড্রেজার বন্ধে নিয়মিত অভিযান চলছে। স্পটে গিয়ে ড্রেজার পেলেই আমরা ব্যাবস্থা নিচ্ছি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন