শুক্রবার, ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১, ০১ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

ইটভাটার গ্রাসে ফসলি জমি

আবুল হাসান সোহেল, মাদারীপুর থেকে | প্রকাশের সময় : ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ১২:০৭ এএম

এবার পরিবেশ অধিদপ্তরের কাছে স্বয়ং ইটভাটা শিল্প মালিক সমিতি অবৈধ ইটভাটায় কাঠপোড়ানোর কারণে ব্যবস্থার নেয়ার দাবি জানিয়েছে। তারপরও কতিপয় ইটভাটার মালিক অবৈধভাবে ভাটায় কাঠ পুড়াছে। গত ১৩ জানুয়ারি পরিবেশ অধিদপ্তর ফরিদপুর অঞ্চলের উপ-পরিচালক বরাবর মাদারীপুর ইটভাটা শিল্প মালিক সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক স্বাক্ষরিত একটি লিখিত অভিযোগ দেয়ার পর প্রায় ১ মাস অতিবাহিত হলেও ইটভাটায় কাঠ পোড়ানো বন্ধ হয়নি।
এদিকে মাদারীপুরে বিভিন্নস্থানে অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে শতাধিক ইটভাটা। অধিকাংশ ইটভাটাই কৃষি জমি দখল করে গড়ে উঠছে। পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। বিরূপ প্রভাব পড়ছে পরিবেশে। ভাটার আগ্রাসনে দিন দিন কমে যাচ্ছে চার ফসলি জমি। ফলে দিন দিন ফসল উৎপাদন কমছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা করছে না ইটভাটার মালিক। ইটভাটায় কাঠ পুড়ানোর কারণে বিলীন হচ্ছে নানা প্রজাতির বৃক্ষ। আর কৃষি জমির উর্বর মাটি সংগ্রহ চলছে অবাধে। পরিবেশ হুমকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে কতিপয় ইটভাটা মালিকরা।
এবিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে শুরু করে জেলা প্রশাসন একেবারেই নিবর দর্শকের ভূমিকা পালন করছে। মাদারীপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মোয়াজ্জেম হোসেন জানান, মাদারীপুর জেলার মোট এক লাখ ১২ হাজার ৫৭০ হেক্টর জমির মধ্যে ৮০ হাজার হেক্টর জমি কৃষিজমি হিসেবে চিহ্নিত। ‘কৃষি ও কৃষিজমি নষ্টের অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে ইটভাটা। এ ছাড়া ভাটার দূষণ ও বিরূপ প্রভাবে আশপাশের জমির ফসলহানি হচ্ছে। তাই কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি ফসলি জমি নষ্ট হয় এমন স্থানে যেন ইটভাটার লাইসেন্স দেয়া না হয়।’
মাদারীপুর জেলায় বৈধ-অবৈধ ইটভাটার তথ্য চেয়ে মাদারীপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে তথ্য অধিকার আইনে দরখস্ত করা হলেও তারা তথ্য দেয়নি। তবে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মাদারীপুর জেলায় শতাধিক ইটভাটা রয়েছে। এসব ভাটার অধিকাংশই অবৈধ। আর এসব ভাটার বেশির ভাগই স্থাপন করা হচ্ছে ফসলি জমি বা এর পাশ ঘেঁষে।
ইট প্রস্তুত ও ভাটা নিয়ন্ত্রণ আইনে বলা আছে কৃষিজমিতে কোনো ইটভাটা স্থাপন করা যাবে না। শুধু তাই নয়, ওই আইনে বলা হয়েছে ফসলি জমির এক কিলোমিটারের মধ্যেও কোনো ইটভাটা করা যাবে না। তা ছাড়া বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ অবৈধ ভাটা মালিকরা লংঘন করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
এ দিকে ইট প্রস্তুতে ফসলি জমির উর্বর মাটি কেটে ইটভাটায় নেয়ার অভিযোগ করে সদর উপজেলার পাঁচখোলা গ্রামের আনোয়ার হোসেন জানান, সম্প্রতি স্থানীয় ইটভাটা মালিকরা জোরপূর্বক তাদের জমি থেকে মাটি কেটে নেয়ায় ক্ষতির সম্মুখিন হয়েছে।
মাদারীপুর ইটভাটা শিল্প মালিক সমিতির সভাপতি হাফিজুর রহমান যাচ্চু খান ও সাধারণ সম্পদক মিলন চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের অধিকাংশ বৈধভাটাতেই এখন আর কাঠ পোড়ানো হয় না। তবে হেমায়েত কাজীর ভাটা, রহিম খান আল আমিন হাওলাদার আ. রব আকন, সোবাহান ফকির জিয়া মাল, ইমান খান, মান্নান খান, রুস্তম খান, শাহিন বেপারী, আমির হোসেন, এনামুল হকের অবৈধ ভাটায় নিয়মিত কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। বিষয়টি ফরিদপুর পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালকের কাছে ও মাদারীপর জেলা প্রশাসককে লিখিতভাবে জানালে তিনি এসব ভাটায় কাঠ পোড়ানো বন্ধের নির্দেশ দেয়। কিন্তু নির্দেশ বাস্তবায়িত হয়নি। এখন এসব ভাটায় দেদারছে জলছে কাঠ। তবে উল্লিখিত অবৈধ ইটভাটার কোন মালিক সাংবাদিকদের সাথে এ ব্যাপারে কথা বলতে রাজী হয়নি।
এ দিকে মাদারীপুর জেলা প্রশাসক ড. রহিমা খাতুন বলেন, কোন ভাটায় ইট পোড়াতে কাঠ পোড়ানো যাবেনা। ‘কোন কৃষি জমি নষ্ট করে ইটভাটা করা যাবে না। আইনগতভাবে এটা নিষিদ্ধ। অবৈধ ইটভাটা থাকলে সেগুলো বন্ধ করে দেয়া হবে। মোবাইলকোর্টের মাধ্যমে চালানো হবে অভিযান।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন