মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

উপ সম্পাদকীয়

নির্বাচনের প্রস্তুতি : প্রশ্নাতীত নির্বাচন অনুষ্ঠানে রাজনৈতিক ঐকমত্য জরুরি

প্রকাশের সময় : ৫ নভেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

মুনশী আবদুল মাননান
আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনে দলের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী নির্বাচনের জন্য দলীয় নেতা-কর্মীদের প্রস্তুত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তাদের জনসম্পৃক্ততা বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন। ঘরে ঘরে গিয়ে সরকারের উন্নয়ন কর্মকা-ের কথা প্রচার করে মানুষের মন জয় করার তাগিদ দিয়েছেন। এও জানিয়ে দিয়েছেন, আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে নিয়ে কোনো প্রশ্ন উঠুক, এটা তিনি চাইবেন না। সম্মেলনে তিনি যে বক্তব্য দিয়েছেন, তার একটি বড় অংশ জুড়ে ছিল উন্নয়নে সরকারের বিভিন্ন পরিকল্পনা, কার্যক্রম ও সাফল্যের বিবরণ। রূপকল্প-২০৪১ নামে স্বপ্নের কিছু কথা সেখানে বর্ণিত হয়েছে। আবার তিনি বিএনপিকে ক্ষমতায় আসতে দেয়া হবে না এবং ভবিষ্যতে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আসতেই হবে, এমন কথাও বলেছেন।
প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্য থেকে তিনটি বিষয় খুবই স্পষ্টভাবে প্রতিভাত হয়েছে। এক. আওয়ামী লীগ দলীয়ভাবে নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করে দিতে চাইছে। এই প্রস্তুতির অংশ হিসেবে দলটি জনসম্পৃক্ততা বাড়ানোর ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে। দীর্ঘ ক্ষমতাকালে দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে জনগণের যে দূরত্ব তৈরি হয়েছে, তা ঘোচাতে চাইছে। এক্ষেত্রে প্রধান হাতিয়ার হিসেবে ‘উন্নয়ন-সাফল্য’কে কাজে লাগাতে চাইছে। দুই. দলটি ২০১৪ সালের নির্বাচনের মতো প্রশ্নবিদ্ধ কোনো নির্বাচন আগামীতে চাইছে না। ওই নির্বাচন যে প্রশ্নবিদ্ধ ছিল, সেটা এই বক্তব্যের মধ্য দিয়ে স্বীকার করে নেয়া হয়েছে। বিশ্লেষকদের অনেকের মতে, প্রধানমন্ত্রী সম্মেলনে যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা কার্যত আওয়ামী লীগের আগামী নির্বাচনের অঘোষিত ইশতেহার। তিন. তিনি বিএনপিকে ক্ষমতায় আসতে না দেয়া ও ফের আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আসতেই হবে বলে যে ‘প্রতিজ্ঞা’ ব্যক্ত করেছেন, তাকে কেউ কেউ বর্তমান উন্নয়ন ধারা অব্যাহত রাখার জন্য অপরিহার্য বলে অভিমত দিলেও অনেকেই মনে করেন, এ ধরনের চিন্তা, মনোভাব ও দৃষ্টিভঙ্গি গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও সংস্কৃতির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। গণতন্ত্রে ক্ষমতার মালিক জনগণ। তারা নির্বাচনের মাধ্যমে কাকে ক্ষমতায় আনবে, সেটা সম্পূর্ণই তাদের এখতিয়ার। যে কোনো দল ক্ষমতায় আসার আশা ব্যক্ত করতে পারে, চেষ্টা করতে পারে এবং সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু কোনো দলের এমন কথা বলা সমীচীন নয় যে, অমুক দলকে ক্ষমতায় আসতে দেয়া হবে না, আমাকেই ক্ষমতায় আসতে হবে। এমন কথা যখন বলা হয় তখন ‘জনগণের সার্বভৌমত্ব’ বা ‘জনগণের রায়ই ক্ষমতার নিয়ামক’ এ ধরনের কথা মূল্যমান হারায়।
সাংবিধানিক বিধি মোতাবেক একাদশ সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা ২০১৯ সালের জানুয়ারির মধ্যে। এ হিসাবে এখনো দুই বছরের বেশি সময় রয়েছে। তারপরও নির্বাচনের প্রস্তুতি রাজনৈতিক দলগুলো শুরু করতে পারে। দেখেশুনে মনে হচ্ছে, সে প্রস্তুতি তারা এর মধ্যেই শুরু করে দিয়েছে। আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনে নির্বাচনকেই অন্যতম প্রধান ইস্যু হিসেবে সামনে আনা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীসহ নেতৃবৃন্দের বক্তৃতা, প্রচার-প্রচারণা, সাজসজ্জা ইত্যাদিতে সেটা বিশেষভাবে দৃশ্যগ্রাহ্য হয়েছে। প্রসঙ্গত উল্লেখ করা দরকার, আওয়ামী লীগ জাতীয় সম্মেলনের কয়েক মাস আগে থেকেই নির্বাচনের প্রস্তুতি গ্রহণের ওপর গুরুত্ব আরোপ করে আসছিল। এমপিদের নিজ নিজ এলাকায় গিয়ে উন্নয়নমূলক কার্যক্রম দ্রুত সম্পন্ন করার এবং জনগণের সঙ্গে যোগাযোগ বৃদ্ধি করার তাগিদ দিয়ে আসছিল। জাতীয় সম্মেলনে সেটা অনেকটা ঘোষণায় রূপ দেয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগের নির্বাচন-প্রস্তুতির তোড়জোড় দেখে সংসদে বিরোধী দল, যাকে অনেকেই ‘গৃহপালিত বিরোধী দল’ বলে অভিহিত করে, সেই জাতীয় পার্টি তো ঘোষণা দিয়ে ১ অক্টোবর নির্বাচনের প্রচারণায় নেমে পড়েছে। সর্বমহলে দেশের প্রধান বিরোধী দল হিসেবে বিবেচিত বিএনপি অবশ্য নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে এখনো প্রকাশ্যে কিছু বলেনি। তবে সেও নাকি তলে তলে প্রস্তুতি চালিয়ে যাচ্ছে। প্রার্থী মনোনয়ন, নির্বাচনী ইশতেহার প্রণয়ন, দলকে সুসংহতকরণ ইত্যাদির কাজ করে যাচ্ছে।
নির্বাচন নিয়ে সব দলের মধ্যেই যে সাজ সাজ রব লক্ষ্য করা যাচ্ছে, তাতে পর্যবেক্ষকদের মধ্যে নির্বাচন নির্ধারিত সময়ের আগেই হয়ে যাবে কিনা সে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। নির্বাচন যথাসময়েই অনুষ্ঠিত হবে, এটা স্বাভাবিক। তবে আগেও হতে পারে। এতে কোনো বাধা নেই। এটা সর্বাংশে নির্ভর করে সরকারের ওপর। এখানে সরকারের ইচ্ছাটাই প্রধান। সরকার অবশ্য এমন কথা বলেনি যে, আগাম নির্বাচন হবে। ক্ষমতাসীন দল হিসেবে আওয়ামী লীগ এ ব্যাপারে নিশ্চুপ; কোনো কথা বলেনি। তবে প্রধানমন্ত্রীসহ নেতা-নেত্রীরা শুরু থেকেই বলে আসছেন, নির্বাচন নির্ধারিত সময়েই হবে, সংবিধান অনুযায়ী হবে, আগে হবে না। আওয়ামী লীগের নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ২০১৯ সালে অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিতে নেতা-কর্মীদের নির্দেশনা দিয়েছেন।
আওয়ামী লীগ ২০১৯ সলের নির্বাচনের প্রস্তুতি গ্রহণের কথাই প্রকাশ্যে বলছে। অনেকের ধারণা, সুবিধাজনক মনে করলে সরকার নির্বাচন এগিয়ে আনতে পারে। সে সম্ভাবনা এড়িয়ে যাওয়া যায় না। এখন রাজনৈতিকভাবে আওয়ামী লীগ খুবই সুবিধাজনক অবস্থায় রয়েছে। সরকারও রয়েছে এ যাবতকালের মধ্যে সবচেয়ে ভালো অবস্থায়। ক্ষমতাসীন দল-মহলের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপি রয়েছে বিশৃঙ্খল অবস্থায়। তার নেতাকর্মীদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ রয়েছে জেলে। অন্যদিকে সব নেতাকর্মীর বিরুদ্ধেই এত মামলা রয়েছে, যাতে কোর্টে দৌড়াদৌড়ি করতেই তাদের অধিকাংশ সময় পার করতে হচ্ছে। গ্রেফতারের আশঙ্কা তো আছেই। মামলা, গ্রেফতার, জামিন আবার মামলা, গ্রেফতার, জামিনÑ এই খেলাই চলছে। এ ছাড়া দলটি বড় ধরনের কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচিও নিতে পারছে না। সমাবেশ, প্রতিবাদ, বিক্ষোভ মিছিল এমন কি মানববন্ধন পর্যন্ত করতে পারছে না আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অনুমতির অভাব বা বাধার কারণে। বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটের অন্যান্য শরিকের অবস্থাও একই রকম। দ্বিতীয় বড় শরিক বলে পরিচিত জামায়াতে ইসলামী অনেকটাই অঘোষিত নিষিদ্ধ দলে পরিণত হয়েছে। অন্যদিকে জাতীয় পার্টির অবস্থাও শোচনীয়। সরকার বা সরকারি দলের কাছে তার পাত্তা নেই। বিরোধী দল হিসেবেও তার গণ্যতা নেই। না ঘরকা না ঘাটকা অবস্থা। নেতাকর্মীরা হতাশ; জনগণের ন্যূনতম আস্থাও তার প্রতি নেই। এমতাবস্থায় নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগ ফাঁকা মাঠে গোল দিয়ে জয়মাল্য গলায় তুলতে পারবে। সম্ভাবনার এই দিকটি বিবেচনায় নিয়ে সরকার আগাম নির্বাচন দিলেও দিয়ে দিতে পারে। সম্ভবত তেমন একটা লক্ষ্য নিয়েই আওয়ামী লীগ নির্বাচন-প্রস্তুতি শুরু করেছে। প্রস্তুতি ও অন্যান্য দিক অনুকূল হলে আগাম নির্বাচন। না হলে নির্ধারিত সময়েই নির্বাচন। এমন লক্ষ্যেই সে কাজ করছে। এতে যখনই নির্বাচন হোক, আওয়ামী লীগ এগিয়ে থাকতে পারবে। এসব দিক আঁচ করেই মনে হয়, বিএনপিসহ অন্যান্য দলও অপ্রকাশ্যে-প্রকাশ্যে নির্বাচন-প্রস্তুতিতে নেমে পড়েছে। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ প্রসঙ্গে জানিয়েছেন, বিএনপি নির্বাচনপন্থি দল। নির্বাচনের সব রকম প্রস্তুতিই তার আছে।
নির্বাচন আগাম হোক বা নির্ধারিত সময়েই হোক, তার আগে দু’টি বিষয়ে রাজনৈতিক ঐকমত্য-ভিত্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে, যদি প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন এড়াতে হয়। প্রথমত, একটি দক্ষ, যোগ্য, স্বাধীন, নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠনের সিদ্ধান্ত আসতে হবে। দ্বিতীয়ত, নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে গ্রহণযোগ্য সিদ্ধান্তে উপনীত হতে হবে। বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ আগামী ফেব্রুয়ারিতে শেষ হয়ে যাবে। তার আগেই নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে। বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মতো নির্বাচন কমিশন দিয়ে যে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং অংশগ্রহণমূলক, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব নয় তা প্রমাণিত। কাজেই, এমন একটি নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে, যে নির্বাচন কমিশন সব কিছুর ঊর্ধ্বে উঠে কাক্সিক্ষত নির্বাচন উপহার দিতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা একমত, নির্বাচন কমিশন গঠনের যে পদ্ধতি বিদ্যমান রয়েছে, তার অসম্পূর্ণতা এ ক্ষেত্রে প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সংবিধানে বলা আছে, বাংলাদেশে একটি নির্বাচন কমিশন থাকবে এবং এ বিষয়ে প্রণীত আইনের বিষয়াবলী সাপেক্ষে রাষ্ট্রপতি প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারকে নিয়োগ দান করবেন। অথচ বিস্ময়কর বাস্তবতা হলো, এত বছরেও নির্বাচন কমিশন সংক্রান্ত কোনো আইন প্রণীত হয়নি। সংবিধান বর্ণিত আইন প্রণীত না হওয়ার কারণে যে দল যখন ক্ষমতায় থাকে, সেই দলের অনুগত ব্যক্তিদের নিয়েই নির্বাচন কমিশন গঠিত হয় এবং এ নিয়ে শুরুতেই নির্বাচন কমিশন বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর অনাস্থা ও সমালোচনার সম্মুখীন হয়। কার্যক্ষেত্রেও দেখা গেছে, দলীয় সরকারের মনোনীত-নিয়োগকৃত নির্বাচন কমিশন অনেক ক্ষেত্রেই ক্ষমতাসীন দলের পক্ষে ভূমিকা পালন করে। রাষ্ট্রপতি প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারকে নিয়োগ করেন বটে; তবে সেই নিয়োগটি হয় প্রধানমন্ত্রীর মনোনয়ন বা সুপারিশের ভিত্তিতে। সংবিধানের বিধান এটাই। এ ব্যাপারে ভিন্ন কিছু করার এখতিয়ার রাষ্ট্রপতির নেই। যদি এ সংক্রান্ত আইনটি হতো তাহলে সে আইনেই নিয়োগ পদ্ধতিও বর্ণিত হতো, যাতে প্রশ্ন উঠতো না। ২০১২ সালে অনুসন্ধান কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে রাষ্ট্রপতি প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ করেন। বাস্তবে দেখা যায়, যাদের নিয়োগ দেয়া হয় তারা সবাই সরকারের মনোনীত ও পছন্দের ব্যক্তি। অনুসন্ধান কমিটিও সরকারই গঠন করে। অনুসন্ধান কমিটির মনোনীত ব্যক্তিরাও হন কার্যত সরকারের মনোনীত ব্যক্তি। বর্তমান নির্বাচন কমিশন কতটা দলকানা সেটা এ যাবত প্রতিটি নির্বাচনেই প্রত্যক্ষ করা গেছে। এর আগের কোনো নির্বাচন কমিশন এতটা দালানুগত ছিল না। তাই বিদ্যমান প্রক্রিয়ায় নির্বাচন কমিশন গঠিত হলে সে নির্বাচন কমিশন জাতীয় আকাক্সক্ষার নির্বাচন উপহার দিতে পারবে না। একটি সৎ, দক্ষ, যোগ্য, নিরপেক্ষ, শক্তিশালী ও স্বাধীন নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হলে উপযুক্ত আইন প্রণয়ন করতে হবে অথবা এমন পদ্ধতি বের করতে হবে যাতে সে নির্বাচন কমিশন সব দল-মহলের কাছে গ্রহণযোগ্যতা লাভ করে। সব দলের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষ সর্বদলগ্রাহ্য ব্যক্তিদের নিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠন করা যেতে পারে। এছাড়া বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিশেষ করে দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোতে কীভাবে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়, সেটাও পর্যবেক্ষণ ও অনুসরণ করা যেতে পারে। ভারত বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে পরিচিত। সেখানেও রাষ্ট্রপতি প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্য কমিশনারদের নিয়োগ দান করেন। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন মন্ত্রিপরিষদ সম্মিলিতভাবে যে সুপারিশ করে তার ভিত্তিতে রাষ্ট্রপতি প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ অন্যান্য কমিশনারকে নিয়োগ দান করেন। দীর্ঘ ঐতিহ্যের কারণে ভারতে নির্বাচন কমিশন একটি শক্তিশালী প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। বলা হয়, নির্বাচন কমিশনের স্বাধীন ও বলিষ্ঠ ভূমিকার কারণে ভারতে গণতন্ত্রের ভিত এত মজবুত হয়েছে। এও বলা হয়, নির্বাচন কমিশন কার্যত নির্বাচনকালীন সরকারের ভূমিকা পালন করে। পাকিস্তানে প্রধানমন্ত্রী জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেতার সঙ্গে আলোচনা করে তিনটি নামের প্রস্তাব সংসদীয় কমিটির কাছে পাঠান। ওই তিনজনের যে কোনো একজনকে সংসদীয় কমিটি প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসাবে নিয়োগ দেয়ার সুপারিশ করে। তাকেই রাষ্ট্রপতি নিয়োগ দান করেন। শ্রীলংকার স্পিকারের নেতৃত্বাধীন সাংবিধানিক কাউন্সিলের সুপারিশ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ করেন। নেপালে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন সাংবিধানিক কাউন্সিলের পরামর্শ মোতাবেক রাষ্ট্রপতি প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারকে নিয়োগ প্রদান করেন। এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ করা দরকার, এ সব দেশে নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে, নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়ে কোনো দল-মহলের পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ বা সমালোচনা শোনা যায় না।
নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে আমাদের দেশে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বড় রকমের বিতর্ক আছে। এই বিতর্কের সুবাদেই ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিএনপিসহ বিভিন্ন দল অংশ নেয়নি। সংশোধিত সংবিধান অনুযায়ী, ক্ষমতাসীন সরকারই নির্বাচনকালীন সরকার হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে। বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলো এটা মানতে নারাজ। তাদের দাবি, নির্বাচনকালে এমন একটি সরকার থাকবে যা বৈশিষ্ট্যগতভাবে হবে দলনিরপেক্ষ। এই বিতর্কটা এখনও আছে। আওয়ামী লীগের কথা, সংবিধান অনুযায়ী বর্তমান সরকারের অধীনেই আগামী নির্বাচন হবে। অন্যদিকে বিএনপিসহ বিরোধীদলগুলোর কথা, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে না। কারণ, তাতে নির্বাচন নিরপেক্ষ বা পক্ষপাতমুক্ত হবে না। আগামী নির্বাচনের আগেই এই বিতর্কের একটি গ্রহণযোগ্য ফয়সালা হতে হবে। সেজন্য এখনই রাজনৈতিক সংলাপ শুরু করা যেতে পারে। আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে এ বিতর্কের অবসান ঘটিয়ে একটা গ্রহণযোগ্য মীমাংসায় আসা মোটেই অসম্ভব নয়। প্রধানমন্ত্রী কোনো প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন চান না, সেটা তার বক্তব্য থেকেই স্পষ্ট। এমতাবস্থায়, সরকার বিশেষত প্রধানমন্ত্রীকেই এগিয়ে আসতে হবে। প্রশ্নহীন নির্বাচন নিশ্চিত করতে এবং শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতার পরিবর্তনকে একটি ঐতিহ্য বা সংস্কৃতিতে পরিণত করতে সম্মিলিত রাজনৈতিক সদিচ্ছার কোনো বিকল্প নেই।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন