মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

ষাটোর্ধ্ব আব্দুর রশিদ এখন তৃতীয় শ্রেণিতে

প্রকাশের সময় : ৫ নভেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

বোচাগঞ্জ (দিনাজপুর) উপজেলা সংবাদদাতা

মানুষের জীবনে শিক্ষার যে কি প্রয়োজন রয়েছে তা বুঝতে পেরেছেন ৬০ বছরের বৃদ্ধ আব্দুর রশিদ। দিনাজপুরের বোচাগঞ্জ উপজেলার যোশহর শাহপাড়া গ্রামের এই বৃদ্ধ মানুষটি সঠিক সময়ে শিক্ষা গ্রহণ না করায় বিভিন্ন সময় তিনি যে মানুষের কাছে ভীষণভাবে ঠকেছেন তা বুঝতে পেরেই ষাটোর্ধ্ব বছর বয়সে এসে শিক্ষিত হওয়ার জন্য আব্দুর রশিদ যশোহর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে নিয়মিত ক্লাস করছেন। ক্লাস ওয়ান থেকে এখন তিনি তৃতিয় শ্রেণিতে অধ্যয়নরত। ক্লাসের ছোট সহপাঠীদের সাথে বেঞ্চে বসে শিক্ষকদের কাছ থেকে শিক্ষা নিচ্ছেন তিনি। প্রথম প্রথম ক্লাসের শিশু শিক্ষার্থীরা বিষয়টি অন্যভাবে নিলেও এখন বেশ মানিয়ে নিয়েছে। স্কুলের শিশু শিক্ষার্থীরা আব্দুর রশিদকে ক্লাসে পেয়ে বেশ আনন্দিত। তার সাথে মানিয়ে নিতে তাদের কোন সমস্যা হয় না। বোচাগঞ্জ উপজেলার ৫নং ছাতইল ইউনিয়নের যোশহর শাহপাড়া গ্রামের মৃত নেক মোহাম্মদের পুত্র মো. আব্দুর রশিদ (৬০) জানান, ১৫ বছর পূর্বে তার স্ত্রী মারা যায়। সে সময় এলাকার এক ব্যক্তির কাছে তিনি তার ৪০ শতাংশ জমি ফেরত কোয়ালা (জমি ইজারার চুক্তিপত্র) দেন। এক বছর পর টাকা পরিশোধ করে জমি নিতে গেলে উক্ত ব্যক্তি তাকে বলেন, তুমি তো আমাকে জমি লিখে দিয়েছো এখন তো আমি জমি ফেরত দিব কি করে। এ কথা শুনে আব্দুর রশিদ চরম মর্মাহত হন। এবং সে দিনই তিনি সিদ্ধান্ত নেন জীবনে বেঁচে থাকতে হলে শিক্ষার প্রয়োজন রয়েছে। এজন্য তিনি ২ বছর পূর্বে ক্লাস ওয়ানে ভর্তি হন এখন তিনি তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ছেন। তিনি বলেন, অন্ধ ছিলাম আলো দেখতে এসেছি। ঐ স্কুলের প্রধান শিক্ষক অনিল চন্দ্র রায় জানান, প্রথমে তিনি ভর্তি নিতে অনীহা প্রকাশ করলেও এলাকাবাসীর অনুরোধে তাকে স্কুলে ভর্তি করা হয়। বোচাগঞ্জ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোছাঃ আরজুমান্দ বানু জানান, বয়সে বড় হলেও শিক্ষার কোন বয়স নেই। যেহেতু তিনি শিক্ষা গ্রহণ করতে এসেছেন এটা অন্য নিরক্ষর মানুষের কাছে অনুকরণীয় হবে এবং অন্যদের উৎসাহিত করবে পাশাপাশি শিক্ষিত সমাজ গড়ে উঠবে। আব্দুর রশিদ জানান, তিনি স্কুল ক্লাসের পাশাপাশি পার্শ্ববর্তী জংলিপীড় বাজারে একটি কোচিং সেন্টারে নিয়মিত কোচিং ক্লাস করেন। আব্দুর রশিদের এখন একটাই স্বপ্ন তাকে শিক্ষিত হতে হবে ভবিষ্যতে তাকে যেন কেউ আর ঠকাতে না পারে। বর্তমানে আব্দুর রশিদের এক মেয়ে দুই নাতনী ও এক নাতী রয়েছে। বড় নাতনী এইচএসসিতে পড়ালেখা করছে। বৃদ্ধ বয়সে এসেও বাড়ির অন্যান্য কাজের সাথে স্কুলে যাওয়া ও লেখাপড়ায় মনযোগী হওয়া, ছোট শিশুদের সাথে সঙ্গ দেয়ায় তিনি নিজেকে এখনও একজন শিশুই ভাবেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন