এম এস এমরান কাদেরী, বোয়ালখালী (চট্টগ্রাম) থেকে
চোখের সামনে এখনো ভেসে উঠে এক সময়ের বোয়ালখালীর সেই সারি সারি সুপারি বাগান, জোৎস্না মাখানো গ্রাম, মমতায় জড়ানো মাটির তৈরি সেই ঘরগুলোর কথা। বোয়ালখালীর ঐতিহ্যবাহী মাটির ঘরগুলো এখন তেমন একটা চোখে না পড়লেও এদিক ওদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা সুপারি গাছের সারি সারি বাগানগুলো এখনো কিছুটা অবশিষ্ট থেকে ঐতিহ্যের জানান দিয়ে যাচ্ছে এই বলে যে, এক সময় বেশ কিছু বড় বড় সুপারি বাগানে সমৃদ্ধ ছিল এখানকার গ্রামগুলো। তবে বাড়তি জনসংখ্যার জন্য ঘর বাড়ি তৈরি ও বাজারে যথাযথ দাম না পাওয়াসহ অন্যান্য আরো অনেক কারণে এসব সুপারি বাগানগুলোর সেই জৌলুস এখন আর তেমন একটা নেই। এক সময় এখানকার প্রতিটা গ্রামের প্রতিটা বাড়িতে সুপারির আবাদ হতো। বছরের এই সময়টাতে এলাকার পরিবারগুলো বাজারে সুপারি কেনা-বেচা করে সংসার সহ অন্যান্য খরচ মেটাত। এ সময় গ্রামের প্রায় প্রতিটা মানুষ এর সাথে সংশ্লিষ্টতা ছিল। কেউ বাগান করে, কেউ মজুরি খেটে, কেউ বেচা-কেনা করে আয় উপার্জন করত। এখানকার প্রতিটা বিয়ে শাদী, মেজবান, পানছল্লা সহ ছোট খাট নানা অনুষ্ঠান এমনকি বাড়িতে কোন মেহমান আসলে পান-সুপারির আপ্যায়ন ছাড়া কল্পনাই করা যেতনা। তাই এসময় পান-সুপারিকে ভালবাসা ও বিয়ে-শাদীর ও প্রতীক হিসেবে অনেকের মধ্যে আলাদা কদর ছিল। এ সময় এখানকার ছোট-বড় অনেকের মুখে মুখে ফিরত-“পানের হুয়ারে সুয়ারি দিলা- বন্ধু তুঁই আর মন কারিলা/যদি সুন্দর একখান মুখ পাইতাম-মজা গড়ি পানর খিলি তারে বানাই খাবাইতাম/পান খাইয়া ঠোঁট লাল করিলাম-বন্ধুর ভাগ্য হইলনা।-ইত্যাদি জনপ্রিয় আঞ্চলিক গানগুলো। এখন সেই গানও নেই, সুপারির বাগানও নেই- পথে ঘাটে এখন আর তেমন একটা চোখে পড়ে না সুপারি বেচা-কেনার দৃশ্যও। বলা চলে এতে মানুষের মনও নেই। তবে কধুরখীল, চরণদ্বীপ ও গোমদ-ী এলাকায় বড় বড় বেশ কিছু সুপারি বাগান এখনও দৃষ্টি কারলেও ফলন তেমন একটা নেই। এ ব্যাপারে মওলানা আবু তৈয়ব নামের এখানকার বাগানের এক মালিক জানান- একেত মাটির উর্বরাশক্তি কমে যাওয়া, এর উপর কাঠবিড়ালীর উৎপাতে আশানুরূপ ফল পাওয়া যায় না। এতে আগ্রহও কমে যাচ্ছে অনেকের। কাঠ বিড়ালির উৎপাত বন্ধ করতে পারলে এ কাজে আরো নতুন নতুন উদ্যোক্তা ও আবাদকারী এগিয়ে আসতো। আর এতে করে বোয়ালখালীর এ সুপারি এখানকার চাহিদা মিটিয়ে বাহিরের উপজেলায়ও রপ্তানির সুযোগ হতো। কর্ম সংস্থান সৃষ্টির সাথে সাথে বেড়ে যেত এখানকার মানুষের আর্থিক সচ্ছলতা। পূর্ব গোমদ-ী এলাকার মো. আবদুল করিম নামের এক ব্যক্তি জানান, সুপারি আবাদে ও কাঠ বিড়ালীর উৎপাত বন্ধ করতে প্রশাসনের কাছে অনেকবার সহযোগীতার আহ্বান করেছি। কিন্তু কোন ফল পাওয়া যায়নি। তাই এতে দিনকে দিন আগ্রহ হারাচ্ছে এখানকার অনেকেই। অভিজ্ঞ মহলের ধারণা সরকার কিংবা স্থানীয় প্রশাসন যদি ঐতিহ্যবাহী এসব সুপারি বাগানগুলো রক্ষায় একটু দৃষ্টি দেয় তাহলে আমাদের গ্রামীণ সংস্কৃতির বড় আঁধার ও অর্থকরি এ ফসলটিকে বাঁচিয়ে রাখা যেত বছরকে বছর ধরে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন