গোপালগঞ্জ সংবাদদাতা
গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় পুলিশের মামলায় গ্রেফতার এড়াতে ভেন্নাবাড়ি গ্রামের শতাধিক পরিবারের লোকজন গ্রামছাড়া। তারা কেউ রাতে বাড়িতে ঘুমাতে পারছেন না। পুলিশের দায়ের করা মামলায় নারী-পুরুষ সবাইকে আসামী করা হয়েছে। এ অবস্থা থেকে বাঁচতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ চেয়েছে গ্রামবাসী। গত ১৪ আগস্ট ভোরে কোটালীপাড়ার শেখ হাসিনা আদর্শ কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী সুপ্রিয়া গাইনের ঝুলন্ত লাশ ভেন্নাবাড়ি গ্রামের নিজ বাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয়। অশোক বলভব নামে এক যুবকের সঙ্গে সুপ্রিয়া গাইনের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। অভিযোগ ওঠে প্রেমের টানাপোড়েন নিয়ে অশোক ও তার লোকজন মিলে সুপ্রিয়াকে ধর্ষণ করে হত্যা করে গাছে লাশ ঝুলিয়ে রাখে। এ ঘটনায় ওই ছাত্রীর মা নয়ন গাইন ৬ জনকে আসামি করে কোটালীপাড়া থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। পুলিশ মামরাল এজাহারভুক্ত ৩ জনকে গ্রেফতার করে জেলে পাঠায়। সুপ্রিয়া হত্যাকারীদের বিচার শাস্তির দাবিতে তার সহপাঠীরা কলেজ ক্যাম্পাসে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করে। পোষ্ট মর্টেম রিপোর্টে সুপ্রিয়ার মৃত্যু হত্যাকা- নয়। গলায় ফাঁস নিয়ে আত্মহত্যার কথা উল্লেখ করা হয়। এতে আদালতে আপত্তি জানায় ওই কলেজছাত্রীর মা। পুনঃ ময়নাতদন্তের আবেদন করেন। আদালত লাশ উত্তোলন করে পুনরায় ময়নাতদন্তের নির্দেশ দেয়। আদালতের নির্দেশে গত ২৬ অক্টোবর কোটালীপাড়ার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কাজী তামজীদ আহম্মেদ ও কোটালীপাড়া থানার ওসি তদন্ত মো. মোস্তাফিজুর রহমান লাশ উত্তোলন করতে যান। লাশ উত্তোলনের সময় ওই কলেজ ছাত্রীর মৃত্যু নিয়ে ওসি তদন্তের অশ্রাব্য মন্তব্যে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন কলেজছাত্রী সুপ্রিয়ার আত্মীয়-স্বজন ও এলাকাবাসী। তারা ওই পুলিশ কর্মকর্তাকে নাজেহাল করেন। পরে পুলিশ কর্মকর্তা থানায় ফিরে এসে ৪২ জনের নাম উল্লেখসহ আরো অজ্ঞাত ৭০/৭৫ জন গ্রামবাসীকে আসামী করে মামলা দায়ের করেন। তাকে মারধর করে সরকারি কাজে বাধা দেয়া হয়েছে বলে মমলার বিবরনে তিনি উল্লেখ করেন। ভেন্নাবাড়ি গ্রামের সন্তোষ ঢালী, উমা রানী গাইন, নিতুন গাইন, রমানাথ গাইন, পদ্মবালা রায় জানান, এ মামলায় স্কুল শিক্ষক, শিক্ষার্থী, নারী-পুরুষ সবাইকে আসামী করা হয়েছে। পুলিশ এ মমলায় ৭০/৭৫ জনকে অজ্ঞাত আসামী করেছে। তাই যে কোন ব্যক্তিকে আটক করে মামলার আসামি করতে পারে। এ ভয়ে গ্রাম থেকে নারী-পুরুষ পালিয়েছে। অনেকে গ্রেফতার এড়াতে বাড়ি-ঘরে তালা লাগিয়ে অন্যত্র চলে গেছেন। গ্রামে এখন প্রান চাঞ্চল্য নেই। সবার মধ্যেই গ্রেফতার আতঙ্ক বিরাজ করছে। এ অবস্থা থেকে আমরা মুক্তি চাই। কোটালীপাড়া উপজেলার কান্দি ইউপি চেয়ারম্যান উত্তম কুমার বাড়ৈ বলেছেন, যারা পুলিশের উপর হামলা করেছে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হোক। এ মামলাকে কেন্দ্র করে আপরাধী-নিরপরাধী সবাই অতংকের মধ্যে রয়েছে। নিরপরাধীদের হয়রানী না করার জন্য তিনি দাবি জানান। কোটালীপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কামরুল মামলা দায়েরের কথা স্বীকার করে বলেন, এ ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত ছিলেন না, তদন্ত করে তাদেরকে অভিযোগ থেকে বাদ দেয়া হবে। নিরীহ ও শান্তিপ্রিয় মানুষকে হয়রানী করা হবো না।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন