সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ০৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১১ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

পা দিয়ে লিখেই এইচএসসি পাস

আব্দুর রাজ্জাক বাবু, বেলকুচি (সিরাজগঞ্জ) থেকে | প্রকাশের সময় : ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ১২:০৩ এএম

জন্মগতভাবেই তার দুই হাত ও একটি পা নেই। তবে এ প্রতিবন্ধকতা তার চলার পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি। এক পা দিয়েই লিখে এবার এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন তিনি।
প্রতিবন্ধী ফজলু সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলার ধুকুরিয়াবেড়া ইউনিয়নের চরগোপালপুর গ্রামের সাহেব আলীর ছেলে। বাড়ি থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার হেঁটে গিয়ে মিটুয়ানী উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন। তাকে স্কুলে নিয়ে যেতেন ছোট বোন আসমা। ওই স্কুল থেকে এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৩.৫৬ পেয়ে পাস করেন ফজলু। বেলকুচির দৌলতপুর ডিগ্রি কলেজ থেকে এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় ২.৭৫ পেয়ে পাস করেন।
এ বিষয়ে ফজলু জানান, অনেক কষ্টে এক পা দিয়ে লাফিয়ে স্কুলে গিয়েছি। বই-খাতা-কলম আমার বোন আসমা নিয়ে যেত। তবে সে না গেলে আমার স্কুলে যাওয়া হতো না। এই রেজাল্ট করতে পেরে আমি খুশি। সবার সহযোগিতায় আমি আরও এগিয়ে যেতে চাই।
ফজলুর বাবা সাহেব আলী বলেন, দিনমজুরি করে কোনো রকম সংসার চালাই। এর মধ্যে সন্তানদের পড়াশোনার খরচ জোগাবো কীভাবে। টাকার অভাবে কোনোদিন প্রাইভেট পড়াতে পারিনি, বইও কিনে দিতে পারিনি। ফজলুর নামে একটি প্রতিবন্ধী ভাতা কার্ড আছে। তা দিয়েই ওর লেখাপড়ার খরচ চলে। তিনি আরও বলেন, ২০১৭ সালে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুকের মাধ্যমে ৭৬ হাজার টাকা সংগ্রহ করে দিয়েছিলেন মামুন বিশ্বাস। সেই টাকা দিয়েই পড়াশোনা করছে আমার ছেলে। এই টাকাটা না হলে হয়তো আমার ছেলে পড়তেই পারতো না।
ফজলুর মা সারা খাতুন বলেন, ২০০০ সালে ফজলু বিকলাঙ্গ অবস্থায় জন্ম নেয়। ছোট মেয়ে আসমা ফজলুকে লেখাপড়ায় সাহায্য করে। কিছু কিছু কাজ নিজেই করতে পারে। কিছু কাজে তাকে সাহায্য করতে হয়। আমার ছেলের এই রেজাল্টে সত্যি অনেক খুশি।
দৌলতপুর ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মাসুদ রানা জানান, ফজলু লেখাপড়ায় দারুন আগ্রহ, স্মরণশক্তি প্রখর। তার ফলাফলে আমরা খুশি। ফজলু সামনে এগিয়ে যাবে এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
এ বিষয়ে সমাজকর্মী মামুন বিশ্বাসকে বলেন, ফজলুর রহমানের পড়াশোনার প্রবল ইচ্ছা দেখে এসএসসিতে ফেসবুকের মাধ্যমে ৭৬ হাজার টাকা অনুদান তুলে দিয়েছি। এ টাকা দিয়েই তার এতদিন লেখাপড়া চলছে। তার পড়াশোনার ইচ্ছা রয়েছে। সাহায্য-সহযোগিতা পেলে সে ভালো রেজাল্ট করতে পারবে। পাশাপাশি একটা সরকারি চাকরি পেলে জীবন পাল্টে যাবে ফজলুর।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন