নানার আদর্শিক চেতনায় অনুপ্রাণিত হয়ে পড়ালেখার পাশাপাশি মাশরুম চাষে আগ্রহী হয়ে ওঠেন তরুণ যুবক মোহাম্মদ জাহেদ উল্লাহ দস্তগীর জামশেদ। টিভিতে চাষের পদ্ধতি ও পরিচর্যার প্রতিবেদন দেখে সফল উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন জাগে তার মনে। শুরুতেই ফেনী মহিপালের পাঁচগাছিয়া কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের হর্টিকালচার সেন্টার ও ফুলগাজী যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। পরে মা ও ভাইয়ের দেয়া আড়াই লাখ টাকার স্বল্প পুঁজি বিনিয়োগ করে ২০১০ সাল থেকে শুরু করেন মাশরুম চাষের যাত্রা। বাড়ির আঙিনায় গড়ে তুলেছেন মায়ের নামে ‘সাজেদা বহুমূখী এগ্রো ফার্ম’। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি জামশেদকে। একের পর এক আসতে থাকে সফলতা। ফেনী শহর থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে ছাগলনাইয়া উপজেলার শুভপুর ইউনিয়নের বল্লভপুর গ্রামের অবস্থান। সেখানেই অবস্থিত জামশেদের ‘সাজেদা বহুমূখী এগ্রো ফার্ম’ মাশরুম খামার। জামশেদ রাষ্ট্রবিজ্ঞানে মাস্টার্স সম্পন্ন করেছেন। তার পিতা একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। তার নানা ছিলেন একজন কৃষি কর্মকর্তা। জামশেদ জানান, প্রথমে নিজ বাড়িতে দুই বছর মাশরুমের চাষ করেন তিনি। শুরুতেই ফলনও ভালো হয়েছে, অনেক লাভও করেছেন। পরে ফেনী সদর উপজেলার কাজিরবাগে চার বছর চাষ করেন। তখন মাঝপথে বড় লোকসানে পড়তে হয় তাকে। তবে হাল ছাড়েননি, পুনরায় বাড়িতে মাশরুমের চাষ শুরু করেন। তিনি জানান, বর্তমানে শীতকালে ওয়েস্টার ডব্লিউএস, পিও টু মাশরুম জাতের উৎপাদন চলতেছে। মার্চ থেকে পিও টেন, পপ উৎপাদনে যাবে। এবং একই সাথে এপ্রিল মাসে গ্যানোডার্মা লুসিডাম উৎপাদনে যাবে। সামনে ঋষি মাশরুম চাষের ও উৎপাদন কাজ শুরু হবে। ওই চারটি বীজ উৎপাদনের ক্ষেত্রে ১০ লাখের মতো খরচ হয়েছে। বিগত ১১ বছরে তিনি মাশরুম বিক্রি করেছেন প্রায় অর্ধকোটি টাকার মতো।
তিনি আরও জানান, প্রতিদিন তার খামারে ৩০ থেকে ৪০ কেজি মাশরুম পাওয়া যায়। বিক্রি হয় ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকার মাশরুম। মাসে প্রায় ৩ থেকে ৪ লাখ টাকার মাশরুম বিক্রি হয়। প্রতিকেজি মাশরুম কাঁচা পাইকারি ২৫০ টাকা ও খুচরা ৩৫০ টাকা ধরে বিক্রি হয়। শুকনো মাশরুম পাইকারি ২ হাজার টাকা ও খুচরা ৩ হাজার টাকা বিক্রি হয়। গুড়া পাউডার মাশরুম ৩ হাজার টাকা করে বিক্রি হয়। তিনি ফেনী জেলাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা উপজেলার ক্রেতাদের কাছে পরিবহনে মাশরুম বিক্রি করেন। ওইসব জেলায় মাশরুম চাষের উদ্যোক্তা তৈরিতে তিনি কাজ করছেন।
জামশেদ বলেন, জামানত বিহীন স্বল্প সুদে দীর্ঘমেয়াদী ৩০ থেকে ৫০ লাখ টাকার ব্যাংকিং লোন ফেলে আধুনিক ও বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে দৈনিক ২ হাজার প্যাকেট মাশরুমের বীজ ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন ল্যাব স্থাপনের মহাপরিকল্পনা রয়েছে। কৃষিতে বিভিন্ন ক্লাব ও সরকারি মেলাতে অনেকগুলো পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। পুরো ফেনী জেলায় প্রতি মাসে ১০/১৫ জনকে মাশরুমের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। ষড়ঋতু ফাউন্ডেশনের অধিনে এখন ৩০০ জন খামারী ও কৃষি উদ্যোক্তা রয়েছে।
উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা সাইদুল হক জানান,জামশেদ অসাধারণ একজন ছেলে। আমাদের যুব উন্নয়নে থেকে সে মাশরুম চাষের ওপর ৫০টিরও বেশি প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। সে বর্তমানে একজন সফল উদ্যোক্তা। আমি ব্যক্তিগত ভাবে তাকে অনেক সহযোগিতা করেছি ভবিষ্যতেও করবো ইনশাআল্লাহ। ফেনী সদরের সাবেক সহকারী মাশরুম সম্প্রসারণ কর্মকর্তা সালেহ উদ্দিন চৌধুরী বলেন, জামশেদ বর্তমানে একজন শিল্প উদ্যোক্তা। সে একজন সৎ নিষ্ঠ ও কর্মঠ এবং উদিয়মান একজন মেধাবী ছেলে। তার আর্থিক সমস্যার কারনে সে বেশি এগোতে পারছে না। জেলার ধর্ণাট্য ব্যক্তিরা যদি তাকে সহযোগিতায় এগিয়ে আসে তাহলে সে আরো ভালো কিছু করতে পারবে।
ছাগলনাইয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. সাফকাদ রিয়াদ বলেন, মাশরুম খুবই উপকারী ও সুস্বাদু একটি খাবার। মানুষ এর গুণাগুন সম্পর্কে জানেনা। অনেকে ভয় পায়। মাশরুম অল্প সংখ্যক জায়গার মধ্যে চাষ করা যায় এবং অনেক লাভজনক একটি ব্যবসা। দেশে অনেক মানুষ বেকার ও কর্মহীন হয়ে পড়েছে। তাদের এ কাজে সম্পৃক্ত করতে পারলে কর্মসংস্থানের পাশাপাশি আয়ের পথ সৃষ্টি হবে। মাশরুমের কোনো প্রজেক্ট চালু হলে আমরা অবশ্যই ওই প্রজেক্টের আওতায় তাকে সহযোগিতা করবো।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন