বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

হিমাগার না থাকায় করা যাচ্ছে না সংরক্ষণ : জমিতেই পচে নষ্ট হচ্ছে হাজার হাজার মণ টমেটো

প্রকাশের সময় : ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

মো. হায়দার আলী, গোদাগাড়ী (রাজশাহী) থেকে : রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে প্রতি বছর শেষ মৌসুমে দাম না পাওয়ায় কৃষক জমি থেকে শ্রমিক দিয়ে টমেটো উঠাচ্ছে না, ফলে জমিতে পচে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে বিপুল পরিমাণ টমেটো। গত ১০ বছর ধরে গোদাগাড়ী উপজেলাসহ পৌরসভা এলাকায় হাইব্রিড জাতের টমেটো চাষ বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। গত বছরের তুলনায় এ বছর বেশি পরিমাণ জমিতে টমেটো চাষ করা হচ্ছে। গোদাগাড়ীর কৃষকেরা টমেটো চাষের জন্য আগাম জাতের পারিজা ধান চাষ করেছিল। কিন্তু অনাবৃষ্টি ও বিদ্যুৎ ঘাটতিজনিত কারণে সেচের অভাবে ধানের ফলন ভাল হয়নি। ধানের ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় উৎপাদন খরচও উঠেনি। ক্ষতি পুষিয়ে নিতে কৃষক অধিক পরিমাণ জামিতে টমেটো চাষ করেছে। অন্যান্য ফসলের চেয়ে টমেটো চাষ অধিক লাভজনক হওয়ায় টমেটো চাষে কৃষকদের আগ্রহ বৃদ্ধি পেয়েছে। সরকারি ১টি বিশ্বস্ত সূত্র মতে জানা গেছে, গোদাগাড়ী উপজেলার আয়াতন ১৮৪ দশমিক ৮৭ বর্গমাইল। আবাদি জমির পরিমাণ ৩৫ লাখ ৭শ’ হেক্টর, ব্লকের সংখ্যা ২৭টি, মৌজার সংখ্যা ৩৯৪ টি, লোক সংখ্যা ২লাখ ৯৭ হাজার (প্রায়)। গত বছর গোদাগাড়ীতে টমেটো চাষ হয়েছিল ৪ হাজার ৪০ হেক্টর জমিতে। এ বছর সাড়ে ৪ হাজার হেক্টর জমিতে টমেটো চাষ হয়েছে। এবার যে সব জাতের টমেটো চাষ করা হচ্ছে তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে বঙ্গবীর, নায়েক, সবল, সুরক্ষা, জয়, পোষারুপি, হাইটোম, হাইব্রিড ও দেশী জাত। এখানে মৌসুমের শুরুতে প্রতি মণ টমেটো ১৫শ’ টাকা থেকে ২হাজার টাকা, মাঝামাঝি সময়ে ৭শ’ থেকে ৯শ’ টাকা, শেষ সময়ে ২শ’ থেকে ৩শ’ টাকা মণ দরে বিক্রি হয়েছে। বিক্রিত টমেটো বস্তা, ঝুড়ি, কাটুনে করে ট্রাকে বোঝায় করে পাবনা, বগুড়া, নাটোর, মানিকগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ, ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু মৌসুমের শেষে ক্রেতারা টমেটো ক্রয় করতে চাচ্ছেন না বলে বর্তমানে প্রতি মণ টমেটো বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকা থেকে ১৫০ টাকায়। এ উপজেলার কোন প্রকার হিমাগার না থাকায় হাজার হাজার মণ টমেটো সংরক্ষণের অভাবে পচে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। গোদাগাড়ী মহিলা ডিগ্রী কলেজ, গোদাগাড়ী পৌর পার্কে সোনাদীঘি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ও হেলিপেড মাঠে কয়েক হাজার মণ টমেটো কৃষক এবং ব্যবসায়ীরা ফেলে রেখেছেন। সেগুলো পচে গেছে। ফলে পরিবেশের উপর বিরূপ প্রভাব দেখা দিয়েছে। শিক্ষক-শিক্ষকা, ছাত্র-ছাত্রী, অভিভাবকদের নাকে রুমাল দিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। নাম প্রকাশ না করা শর্তে একজন এমবিবিএস ডাক্তার এ প্রতিবেদককে জানান, এসব কীটনাশক ব্যবহার করা টমেটো খেয়ে লিভার সিরোসিস, ক্যন্সার, জন্ডিস, ক্রনিক, ডিসেন্ট্রিসহ নানা জটিল রোগ হতে পারে। নায়ক, সবল জাতটি যে সব কৃষক চাষ করেছে তারা ব্যপক হারে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তার উৎপাদন খরচ তো দূরের কথা অনেক জমিতে গাছ লাগানোর কিছুদিন পর মরে গেছে। গোদাগাড়ী পৌর এলাকার কৃষক মো. আলাউদ্দিন এ প্রতিবেদককে জানান, গত বছর ২ বিঘা জমিতে টমেটো চাষ করে ৪০ হাজার টাকার টমেটো বিক্রি করেছিলাম। এবার আড়াই বিঘা জমিতে নায়ক জাতের টমেটো চাষ করেছিলাম। নি¤œমানের বীজের কারণে উৎপাদন খরচ উঠেনি। গোদাগাড়ী উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মোসদার হোসেন সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, গোদাগাড়ীর মাটি ও আবহাওয়া টমেটো চাষের জন্য খুব উপযোগী। অন্যান্য ফসলের চেয়ে টমেটো চাষ বেশ লাভজনক হওয়ায় এখানে টমেটো চাষে বিপ্লব ঘটেছে। কিন্তু প্রতি বছর সংরক্ষণের অভাবে হাজার হাজার মণ টমেটো পচে নষ্ট হয়ে যায় এবং মৌসুমের শেষে, দাম কম থাকায় শ্রমিক দিয়ে টমেটো তুলে পোষায় না বলে কৃষক জমি থেকে টমেটো তুলতে চায় না। ফলে হাজার হাজার মণ টমেটো জমিতে পচে নষ্ট হয়ে যায়। সংরক্ষণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করা হলে কৃষক আরও বেশি লাভবান হবে ইনসাআল্লাহ।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন