ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলায় সরকারিভাবে ধান-চাল সংগ্রহ অভিযানে চাল সংগ্রহ আশাব্যাঞ্জক হলেও মুখ থুবড়ে পড়েছে ধান সংগ্রহ। ফুলপুর খাদ্যগুদামে ধান বিক্রিতে অনিহা দেখাচ্ছে কৃষকরা। সাড়ে ৩ মাসে সরকারি খাদ্যগুদামে লক্ষ্যমাত্রার ১ শতাংশ ধানও সংগ্রহ করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। ফলে চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হলেও ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হওয়া নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। বাড়তি পরিবহন খরচ, সরকারি মূল্যের চেয়ে বাজারে ধানের মূল্য বেশি হওয়া, গুদামে ধান বিক্রি করতে ময়েশ্চারাইজারসহ বিভিন্ন ঝামেলা পোহানোর কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মাত্র ১ মে.টন ধান সংগ্রহ হয়েছে। ৩৯৬ জন কৃষকের মাঝে মাত্র ১ জন কৃষক ধান দিয়েছে বলে জানা যায়।
খাদ্যগুদাম কার্যালয় সূত্রে জানা যায, খাদ্যগুদামে ধান ও চাল কেনার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে সভাপতি ও উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তাকে সদস্য সচিব করে পাঁচ সদস্যের উপজেলা ধান-চাল সংগ্রহ কমিটি করা হয়েছে। ফুলপুরে চলতি মৌসুমে সরকারি লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী সরকারি খাদ্যগুদাম ২ হাজার ৫৬৬ মেঃ টন চাল ও এক হাজার ১৮৮ মেঃ টন ধান কেনার কথা। তার লক্ষে গত ৭ নভেম্বর থেকে সংগ্রহ অভিযান শুরু হয়েছে যা শেষ হবে ২৮ ফেব্রুয়ারি। সরকারি নির্ধারিত মূল্যে প্রতি কেজি ধান ২৭ টাকা এবং চাল ৪০ টাকা দরে কেনা হবে। চলতি মৌসুমে ধান বিক্রি করতে ফুলপুরে অ্যাপের মাধ্যমে ৫৮০ জন কৃষক নিবন্ধন করেন। পরে তাদের মধ্যে আবেদন যাচাই-বাছাই করে ৩৯৬ জন কৃষককে বাছাই করা হয়।
এদিকে কৃষকরা বলছেন, সরকার ২৭ টাকা কেজি দরে ধানের দাম নির্ধারণ করেছে। কিন্তু সরকার নির্ধারিত দামের চাইতে স্থানীয় বাজারে মণ প্রতি এক থেকে দুইশ টাকা ধানের দাম বেশি পাওয়া যাচ্ছে। একইসঙ্গে সরকারি গুদামে ধান দিতে গেলে ১৪ শতাংশ ময়েশ্চারাইজার বা আর্দ্রতা লাগে এবং গুদামে ধান ঢুকাতেও নানা ঝামেলা। তাছাড়া ধান বিক্রি করে টাকা আনতে হয় ব্যাংকের মাধ্যমে। এজন্য ঘুরতে হয়, সময় ব্যয় হয়। অথচ ওই ধান বাজারে দাম বেশি ও ময়েশ্চারাইজার মাপার ঝামেলা নেই। তাই বাজারেই ধান বিক্রি করছেন তারা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নির্ধারিত সময়ে মিলারদের কাছ থেকে চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হওয়ার আশা থাকলেও সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে স্থানীয় বাজারে এক থেকে দুইশ টাকা ধানের দাম বেশি পাওয়ায় সরকারি খাদ্যগুদামে ধান দিচ্ছেন না কৃষকরা। ফলে ধান সংগ্রহ অভিযান মুখ থুবড়ে পড়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জনৈক মিল মালিক বলেন, মিলাররা যেহেতু সরকারের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ। তাই লোকসান হলেও মিলাররা সরকারি গুদামে চাল দিতে বাধ্য। আর কৃষকরা সরকারের কাছে ধান বিক্রিতে বাধ্য না। তাছাড়া গুদামে ধান দিতে নানা ঝক্কি-ঝামেলা পোহাতে হয়। অথচ সরকার-নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বাজারে দাম বেশি। তাই কৃষক ধান বাজারেই বিক্রি করছেন, গুদামে দিচ্ছেন না।
ফুলপুর উপজেলা ধান-চাল ক্রয় কমিটির সদস্য সচিব ও উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ সোহেল রানা বলেন, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে। তবে সরকারি দামের চেয়ে স্থানীয় বাজারে ধানের দাম বেশি থাকায় কৃষকরা গুদামে ধান দিচ্ছেন না। এজন্য ধানের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে না। এ পর্যন্ত ১ মেঃ টন ধান সংগ্রহ হয়েছে।
উল্লেখ্য যে, ফুলপুর উপজেলায় কার্ডধারী কৃষকের সংখ্যা ৬২ হাজার ৭৯২ জন। আমন মৌসুমে উপজেলায় ধান চাষ হয়েছে ২২ হাজার ৩৫০ হেক্টর জমিতে। ওই জমিতে ৯৬ হাজার ২৪২ মেঃ টন ধান উৎপাদিত হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন