বুধবার, ২২ মে ২০২৪, ০৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৩ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

বাঁধ নিয়েই উপকূলবাসীর শঙ্কা

আবদুল ওয়াজেদ কচি, সাতক্ষীরা থেকে | প্রকাশের সময় : ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ১২:০৫ এএম

প্রায় দশ মাস অতিক্রান্ত হলেও অদ্যাবধি সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপকূল রক্ষা বাঁধের ৫নং পোল্ডারের সংস্কার কাজ শেষ হয়নি। একাধিকবার মেয়াদ বৃদ্ধি সত্ত্বেও পুনঃনির্ধারিত সময় অনুযায়ী আগামী মার্চ মাসের মধ্যে কাজ সম্পন্নের বিষয়েও রয়েছে অস্পষ্টতা।
এদিকে, বৃহত্তর প্রকল্পের ১৫নং পোল্ডারভুক্ত গাবুরা অংশে বাঁধের পুনরাকৃতি কাজের দরপত্র আহবানের প্রক্রিয়াও শুরু হয়নি। আর কয়েক মাস পরই শুরু হবে বৃষ্টি-বর্ষা। তাই শ্যামনগর উপকূলবাসীর মনে ক্রমেই দানা বাধছে বাঁধ ভাঙনের শঙ্কা।
জানা যায়, চলমান সংস্কার কাজের অংশ হিসেবে বাঁধে মাটি ফেলার পর নদীর অংশে জিওব্যাগ ডাম্পিংসহ প্লেসিং হলেও অনেক জায়গাতে আবার গতিপথের কারণে নদীর চর দেবে গেছে। বাঁধ হতে একশ’ ফুট দূরত্ব বজায় রেখে চিংড়িঘের পরিচালনা সংক্রান্ত সরকারি নির্দেশনার নূন্যতম কোন বাস্তবায়ন নেই। উপরোন্ত ভাঙনপ্রবণ এসব অংশের পাশর্^বর্তী নদী থেকে প্রতিদিন অবৈধভাবে কোটি কোটি ঘনফুট বালু উত্তোলন করা হচ্ছে ব্যবসায়িক কারণে। এমতাবস্থায় দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সবচেয়ে দুর্যোগপ্রবণ অঞ্চল হিসেবে পরিচিত শ্যামনগরের উপকূলবর্তী অংশে বসবাসরতদের মধ্যে বাঁধ নিয়ে আতংক দিন দিন বাড়ছে।
যদিও পানি উন্নয়ন বোর্ড সংশ্লিষ্টদের দাবি, বর্ষা মৌসুমের আগেই ৫ নম্বর পোল্ডারের কাজ সম্পন্ন হবে। এছাড়া ১৫নং পোল্ডারের টেন্ডার কার্যক্রম চলতি বছরের মার্চ মাস নাগাদ শুরু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, শ্যামনগর উপজেলাকে ঘিরে থাকা ৫নং পোল্ডারের দুর্গাবাটি, ভামিয়া, পোড়াকাটলা, দাতিনাখালী, পানখালীসহ পরানপুর অংশে বাঁধের সিংহভাগ কাজ শেষ হয়েছে। মাটি দেয়ার পর জিওব্যাগ ডাম্পিংসহ প্লেসিং-এর কাজও অনেক দূর এগিয়ে গেলেও এসব অংশে সেøাব তৈরিসহ কিছু নির্দিষ্ট স্থানে জিওব্যাগ প্লেসিংয়ের কাজ অবশিষ্ট রয়েছে।
এছাড়া মুন্সিগঞ্জের কদমতলা এবং নূরনগর ও কৈখালীর নৈকাটি এলাকায় উপকূল রক্ষা বাঁধের জীর্ণ অবস্থা আরও প্রকট হয়ে উঠেছে। কদমতলা অংশে কাজের দায়িত্বে থাকা ঠিকাদারের গড়িমসিতে সেখানে কাজের কোন অগ্রগতি নেই বলে দাবি স্থানীয়দের। একইভাবে কার্যাদেশ অনুযায়ী কাজ না করায় নৈকাটি অংশের প্রায় ২২০ মিটারেরও বেশি বাঁধ ভাঙনের মুখে থাকায় ভীতিকর অবস্থার তৈরি হয়েছে স্থানীয়দের মধ্যে। নৈকাটি ও নিদয়া গ্রামের হাবিবুল্লাহ ও আজমত আলীসহ স্থানীয়রা জানায়, মাঝে-মধ্যে ঠিকাদারের লোকজন এসে ভাঙন এলাকা দেখে যায়। তবে কার্যাদেশ অনুযায়ী তারা কাজ না করার কারণে সামনের বর্ষা মৌসুমকে ঘিরে তারা চরম উদ্বেগের মধ্যে পড়েছে। জিওব্যাগ ডাম্পিং ও প্লেসিংসহ সেখানে মাটি ফেলে বাঁধ উঁচু এমনকি ভাঙন রোধে নদীর বাইরের অংশে পর্যাপ্ত জিওব্যাগ ডাম্পিং না করার অভিযোগও করেন তারা। প্রভাষক স্বপন মন্ডলসহ কয়েকজন গ্রামবাসীর অভিযোগ, কদমতলা অংশের বাঁধ গত কয়েক বছর ধরে অব্যাহতভাবে ভাঙছে। দীর্ঘদিন পর কাজ শুরু হলেও ঠিকাদারের গড়িমসির কারণে দুর্যোগ মৌসুমের আগেও সেখানকার কাজ শেষ হওয়ার কোন লক্ষণ নেই।
এদিকে, ৫নং পোল্ডারের সিংহভাগ কাজ সম্পন্ন হওয়া সত্ত্বেও সেখানকার কয়েকটি অংশে লোকজনের মধ্যে নুতন করে ভাঙন আতংক ভর করেছে। উঁচু করে টেকসইভাবে বাঁধ নির্মাণ সত্ত্বেও পাশের নদী থেকে এক শ্রেণীর অসাধু বালু ব্যবসায়ী ড্রেজার মেশিনের সহায়তায় বুম পদ্ধতিতে বালু উত্তোলন অব্যাহত রাখায় তারা আতংকিত বলে দাবি করেন। ইতোমধ্যে নুতনভাবে সংস্কারকৃত আরও কয়েকটি অংশে বাঁধের পাশ হতে সরকারি নির্দেশনা মেনে একশ’ ফুট দূরত্ব রক্ষা ছাড়াই পুনরায় চিংড়িঘের শুরু করার কারণে ভামিয়া ও পোড়াকাটলা এলাকার মানুষ ভাঙন আতংকে থাকার কথা জানিয়েছে।
নীলকান্ত রপ্তানসহ স্থানীয়রা দাবি করেন, সরকার বাঁধের পাশে এক ফুট জায়গা রেখে চিংড়িঘের গড়ে তোলার নির্দেশনা দিলেও কেউ তা মানছে না। অধিকাংশ জায়গাতে বাঁধকে চিংড়িঘেরের আউট ড্রেন হিসেবে ব্যবহারের কারণে সংস্কার সত্ত্বেও দ্রুত সময়ের মধ্যে তারা এসব এলাকার বাঁধ আবার ঝুঁকিপূর্ণ পর্যায়ে পৌঁছানোর শঙ্কা করছে।
এ প্রসঙ্গে পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে সুন্দরবন সংলগ্ন গাবুরাকে ঘিরে থাকা ২৯.৫০০ মিটার বাঁধ পুনারাকৃতি দিয়ে নুতনভাবে নির্মাণের জন্য টেন্ডার আহবানের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সরকারি অর্থায়নে ১ হাজার ২০ কোটি টাকা ব্যয়ে নুতনভাবে টেকসই প্রযুক্তিতে ঐ বাঁধ নির্মাণ কাজ জুন মাসের শেষের দিকে শুরু হতে পারে। তবে জাইকার অর্থায়নে আগেই শুরু হওয়া গাবুরার ডুমুরিয়া, চকবারা ও কালিবাড়ী ও খোলপেটুয়া অংশের বাঁধের কাজ সত্তর ভাগ সম্পন্ন হয়েছে বলে তাদের দাবি।
পাউবো শ্যামনগর উপ-বিভাগীয় কার্যালয়ের সেকশন অফিসার মাসুদ রানা জানান, জাইকার অর্থায়নে চলমান কাজ শতকরা ৮০ ভাগ শেষ হয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় সরাসরি জাইকার প্রতিনিধি একোয়া কনসালটেন্ট এর সাথে মিলে পাউবোর’র বাঁধে কাজ করছে। অপরিকল্পিত পাইপ অপসারণসহ সরকারি নির্দেশনা মেনে একশ’ ফুট দূরত্ব বজায় রেখে চিংড়িঘের পরিচালনা করলে বাঁধের স্থায়িত্ব অনেকগুন বৃদ্ধি পেত বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন