শক্রবার ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ কার্তিক ১৪৩১, ০৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অভ্যন্তরীণ

ইলিশ রক্ষায় মেঘনায় অপরিকল্পিত ড্রেজিং বন্ধে চিঠি

স্টাফ রিপোর্টার, চাঁদপুর থেকে | প্রকাশের সময় : ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ১২:০৫ এএম

ইলিশ সম্পদ রক্ষা এবং আবাসস্থল নিরাপদ করতে চাঁদপুরে মেঘনা নদী থেকে ড্রেজার দিয়ে অপরিকল্পিত বালু উত্তোলন বন্ধ করতে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট (নদী কেন্দ্র)। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইনস্টিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. হারুনর রশিদ এ চিঠি দেন চাঁদপুর জেলা প্রশাসককে। মেঘনা নদীতে অপরিকল্পিত বালু উত্তোলনের কারণে ইলিশসহ নানা প্রজাতির মাছের খাদ্যের উৎস নষ্ট ও জীববৈচিত্র্য মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, চাঁদপুর মেঘনা নদীতে ড্রেজারের মাধ্যমে গত কয়েক বছর ধরে অপরিকল্পিতভাবে যত্রতত্র বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। কিছু ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান ডুবোচর খননের নামে সরকারি বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে এ কাজটি দীর্ঘ দিন করে যাচ্ছে। ফলে ইলিশের বৃহত্তম বিচরণ ক্ষেত্র ও অভয়াশ্রম (মতলবের ষাটনল হতে লক্ষ্মীপুর জেলার চর আলেকজান্ডার) নষ্টসহ নদীর জীববৈচিত্র্য মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের গবেষণায় দেখা গেছে, মেঘনা নদীতে অনিয়ন্ত্রিত বালু উত্তোলনের ফলে প্রধান প্রজনন মৌসুমে চাঁদপুর অংশে ইলিশের প্রজনন ও বিচরণ সাম্প্রতিক সময়ে মারাত্মকভাবে হ্রাস পেয়েছে।
চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়, গবেষণার ফলাফলে দেখা যায় অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলনের কারণে শত শত ড্রেজারের প্রপেলারের আঘাত, নির্গত পোড়া মবিল ও তেলের কারণে মাছের প্রধান প্রাকৃতিক খাদ্য নদীর প্লাংটন আশঙ্কাজনক হারে কমে গেছে। এছাড়া বালু উত্তোলনে নদী দূষণসহ নদীগর্ভের গঠন প্রক্রিয়া পাল্টে যাওয়ার ফলে বাসস্থানের বাস্তুতন্ত্রও নষ্ট হচ্ছে। জলজ উদ্ভিদ ও প্রাণিকূলের এ ধরনের পরিবর্তনের ফলে তাদের আবাসস্থল যেমন ধ্বংস হচ্ছে, তেমনি ইলিশসহ অন্যান্য মাছের খাদ্যের উৎস নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ফলে মাছের বিচরণ ও প্রজনন পাল্টে যাওয়াসহ ইলিশের উৎপাদন মেঘনা নদীতে ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে। এ অবস্থায় জাতীয় মাছ ইলিশকে রক্ষা এবং আবাসস্থল নিরাপদ করতে প্রধান প্রজনন ও বিচরণ মৌসুমে মেঘনা নদীতে বালু উত্তোলন পুরোপুরি বন্ধ করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।
মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক প্রধান মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও ইলিশ গবেষক ড. আনিসুর রহমান বলেন, চাঁদপুরে ড্রেজারের (খননযন্ত্র) মাধ্যমে অপরিকল্পিত বালু উত্তোলন অব্যাহত রয়েছে। এ কারণে নদীতে তৈরি হচ্ছে নাব্যতা-সংকট। নষ্ট হচ্ছে ইলিশের খাদ্য ও স্বাভাবিক চলাচল। ফলে সমুদ্র থেকে ইলিশ মিঠাপানিতে এসে প্রজনন মৌসুমে ডিম ছাড়তে পারছে না। তিনি বলেন, নদীতে কিছু অঞ্চল রয়েছে, যেখানে ইলিশ চলাচল করে। অক্টোবরে ডিম ছাড়ে, মার্চ-এপ্রিলে বিচরণ করে, বড় হয়। তাদের চলাচলকে নিরাপদ করে দিতে হবে। তাই সবার আগে নদীতে অপরিকল্পিত বালু উত্তোলন বন্ধ করতে হবে। তা হলে ইলিশ বাঁচবে; রক্ষা পাবে দেশের মৎস্যসম্পদ।
এ বিষয়ে চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ বলেন, জাটকা ও ইলিশের স্বার্থে আমরা টাস্কফোর্স কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আপাতত দুই মাস বালু উত্তোলন বন্ধ থাকবে। যেহেতু চাঁদপুর ইলিশের অভয়ারন্য, তাই এই প্রজনন ও বিচরণ ক্ষেত্রটি যেন অভয়ারণ্য হিসেবেই থাকে, সেজন্য ড্রেজিং বন্ধের বিষয়ে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে খুব দ্রুত চিঠি পাঠাবো। একই সঙ্গে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়, নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় এবং কেবিনেট ডিভিশনকেও চিঠি লিখবো।
উল্লেখ্য, চাঁদপুর নদী অঞ্চল থেকে গত কয়েক বছর ধরেই অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলনে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ইলিশ সম্পদসহ নদীর জীববৈচিত্র্য।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন