নির্বাচন কমিশন যাই হোক, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকলে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না, বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, আওয়ামীলীগ যতবার ক্ষমতায় এসেছে জনগণের সাথে বেঈমানী করেছে। শেখ হাসিনা মাথায় হিজাব পড়ে, হাতে তসবি নিয়ে বলেছিল দশ টাকা কেজি চাল খাওয়াবে, ঘরে ঘরে চাকরী দিবে, বিনা পয়সায় সার দিবে। কিন্তু তারা কিছুই দেয়নি। এটাই হচ্ছে আওয়ামীলীগ।
সোমবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে ময়মনসিংহ নগরীর নতুন বাজার দলীয় কার্যালয়ের সামনে মহানগর বিএনপি আয়োজিত বিদ্যুৎ, গ্যাস, চাল, ডাল তেলসহ নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে অনুষ্ঠিত বিশাল বিক্ষোভ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
এ সময় সরকারের উদ্দেশ্যে মির্জা ফখরুল আরও বলেন, এখনো সময় আছে চাল ডাল তেলের দাম কমাও, গ্যাস বিদ্যুৎ পানির দাম কমাও এবং জনগণের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে নিরপেক্ষ সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে পদত্যাগ করুন।
উপস্থিত নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে ফখরুল বলেন, আপনারা যাতে ভোট দিতে না পারেন, সে ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে তাদের মতো সীল মেরে ইভিএম দিয়ে তাদের সরকার গঠন করবে। এটাকে বলা হচ্ছে ‘হাইব্রিড রেফিং’। বিচার ব্যবস্থাকে দলীয়করণ করেছে। সরকার যা হুকুম দেয়, তাই রায় হয়। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মামলাটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। কোনো সত্যতা নাই। দুই কোটি ৩৩ লাখ টাকা এখন সেই ব্যাংকে আছে, এখন তা হয়েছে আট কোটি। একটা পয়সাও সরানো হয়নি। অথচ হাজার হাজার কোটি টাকা সরকারের মন্ত্রী, আমলা ও নেতারা লুট করে নিয়ে যাচ্ছে সেখানে একটি মামলাও হয় না। বর্তমানে ৩৫ লাখ নেতাকর্মীর নামে মামলা হয়েছে। এমন কোনো নেতা নেই যার নামে মামলা নেই। মামলা আর পুলিশের হাত থেকে বাঁচার জন্য অনেকেই পালিয়ে ঢাকায় গিয়ে রিকসা চালায়, ভ্যান চালায়, নৈশপ্রহরীর কাজ করে।
তিনি বলেন, ইলয়াস আলীসহ ৬০০ নেতাকর্মীকে গুম করেছে। অসংখ্য মানুষ হত্যা করেছে। ৩৫ লাখ নেতাকর্মীর নামে মামলা দিয়েছে। অনেক শিশু তাদের পিতাকে দেখেনি। সেই শিশু এখন বড় হয়ে বাবাকে দেখতে চায়। এসব হত্যাকান্ডের জন্য আমেরিকা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। তাদের অর্থবিত্ত বাজেয়াপ্ত করেছে। এটা প্রধানমন্ত্রীর জন্য অপমানজনক। আওয়ামী লীগ এখন জনগণের টাকায় প্রতিমাসে ২০ হাজার ডলার দিয়ে লবিষ্ট নিয়োগ করে নিজেদের পাপ ধোয়ার জন্য। কিন্তু পাপ কোনোদিন ধোয়া যাবে না। ধর্মের কল বাতাসে নড়ে। এদেরকে জবাব দিতে হবে। নির্দেশদাতাসহ যারা এদেরকে হুকুম দিয়েছে এই রক্ত বন্যার জন্য তাদেরকে জনগণের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে।
তিনি বলেন, যে কোনো কথা বলার আগে একটাই কথা, দেশনেত্রীকে মুক্তি দিতে হবে। ৩৫ লাখ লোকের বিরুদ্ধে যেসব মামলা হয়েছে তা প্রত্যাহার করতে হবে। নির্বাচন কমিশনের তালবাহনা দেখিয়ে মুলা ঝুলিয়ে কোনো লাভ হবে না।
মির্জা ফখরুল বলেন, আ’লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকেই আমাদের সাথে প্রতারণা শুরু করেছে। তারা বলেছিল আবার একটা নির্বাচন দিবে, কিন্তু তারা সেই নির্বাচন দেয় নাই। এরশাদ সরকারের পতনের পর সব দলের পরামর্শে প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দিনের নেতৃত্বে তত্ত্বাধায়ক সরকারের অধিনে অনুষ্ঠিত সুষ্ঠু নির্বাচনে বিএনপি ক্ষমতায় আসে। কেই ভাবতে পারেনি বিএনপি ক্ষমতায় আসবে। বিএনপি হলো এদেশের মানুষের দল। পরবর্তীতে আ’লীগ তত্ত্বাধায়ক সরকার ব্যবস্থার জন্য ১৭৩ দিন লাগাতার হরতাল দিয়েছিল, শতশত মানুষ হত্যা করেছিল। গান পাউডার দিয়ে বাস পুড়িয়েছিল। কলকারখানা বন্ধ করে দিয়েছিল। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে খালেদা জিয়ার সরকার তত্ত্বাধায়ক সরকার ব্যবস্থা চালু করলেন। চারটি নির্বাচন হয়ে গেলো সুষ্ঠুভাবে। এরপর দেশের শত্রু বিচারপতি খায়রুল হক একটা রায়ের মাধ্যমে তা বাতিল করলেন আর আ’লীগ সেটা লুফে নিল। এরপরও সংসদীয় কমিটির সামনে শেখ হাসিনা বলেছিল, তত্ত্বাধায়ক সরকার ব্যবস্থা মেনে নিবে। কিন্তু তিনি তা করলেন না, দলীয় সরকারের অধিনে নির্বাচন করলেন। বেইমানী করলেন মানুষের সাথে। আজকে দলীয় সরকারের অধিনে পর পর নির্বচিন করে মানুষের সব আশা-আকাঙ্খা ধুলিৎসাত করে দিয়ে অত্যাচার নির্যাতনের স্টীমরোলার চালিয়েছে।
তিনি বলেন, যারা তাত্ত্বিক আছেন তারা বলেন তত্ত্বাবধায়ক সরকার গনতন্ত্রের সাথে চলে না। তারা ভুল বলেন। গনতন্ত্রই মানুষের আশা-আকাঙ্খা। জনগণের ভোটে যা প্রতিফলিত হবে সেটাই গণতন্ত্র। জনগণ ভোট দিতে চায়। সে জন্যই তত্বাবধায়ক সরকারের অধিনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে হবে। এই নির্বাচন কমিশন দিয়ে কোনো মতে ভোট দিয়ে আবার ক্ষমতায় চলে যাবা সেটা আর এবার হবে না। ‘বারবার ঘুঘু তুমি খেয়ে যাও ধান, এইবার ঘুঘু তোমার বধিব পরাণ।’ এবার মানুষ তাদের সমস্ত চক্রান্ত নস্যাৎ করে দিয়ে দেশনেত্রীকে মুক্ত করবে এবং নিরপেক্ষ নির্বাচনের মধ্যদিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করবে। এখনো সময় আছে চাল, ডাল, তেলের দাম কমাও, গ্যাস বিদ্যু পানির দাম কমাও এবং জনগণের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে পদতাগ করুন এবং নিরপেক্ষ তত্বাবধায়ক সরকার গঠন করে সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করুন।
এ সময় তিনি দলীয় দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, এমনি এমনি এসব হবে না। এ জন্য আন্দোলন করতে হবে। দেশের মানুষকে নিয়ে রাস্তায় নামতে হবে।
সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিএনপি সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, বর্তমান সরকার মিথ্যাবাদী। জনগণকে দশটাকা কেজি চাল খাওয়ানোর কথা বলে ৭০ টাকা কেজি চাল খাওয়াচ্ছে। সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট শাহ ওয়ারেস আলী মামুন, সরকার নিজেদের মতো নির্বাচন কমিশন গঠন করে অবৈধভাবে ক্ষমতায় যেতে চায়।
মহানগর বিএনপির আহবায়ক অধ্যাপক শফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে যুগ্ম-আহবায়ক আবু ওয়াহাব আকন্দ ও অধ্যাপক শেখ আমজাদ আলীর যৌথ সঞ্চালনায় সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন বিএনপি সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট শাহ ওয়ারেস আলী মামুন ও শরীফুল আলম, সাবেক এমপি মাহমুদুল হক রুবেল, শাহ শহীদ সারোয়ার, শাহ নূরুল কবীর শাহীন, কেন্দ্রীয় যুবদলের সভাপতি সাইফুল আলম মিলন, কেন্দ্রীয় কৃষকদলের সভাপতি হাসান জাকির তুহিন, ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ডা. মাহবুবুর রহমান লিটন, সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক জাকির হোসেন বাবলু, আলমগীর মাহমুদ, উত্তর জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মোতাহার হোসেন তালুকদার, মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যাপক শেখ আমজাদ আলী ও কাজী রানা প্রমুখ। এসময় দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক ফখরউদ্দিন আহমেদ বাচ্চু, আখতারুজ্জামান বাচ্চু, আকতারুল আলম ফারুক, এড. ফাত্তাহ খান, মহানগর যুগ্ম আহবায়ক এ কে এম মাহবুবুল আলম, এড. এমএ হান্নান খান, লিটন আকন্দ, শামীম আজাদসহ দক্ষিণ ও উত্তর জেলা এবং মহানগর বিএনপি, যুবদল, স্বেচ্চাসেবকদল, শ্রমিকদল ও মহিলাদলের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের এই সমাবেশকে সফল করার জন্য বিশাল বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে সমাবেশে যোগদান করেছেন উত্তর জেলা যুবদল। এতে নেতৃত্ব দেন সংগঠনের সভাপতি শামসুল হক শামসু ও সাধারন সম্পাদক রবিউল করিম বিপ্লব।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন