শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ধর্ম দর্শন

বিকৃত সংস্কৃতি র‌্যাগ ডে’র ভয়াবহতা ও আমাদের করণীয়

মাওলানা মুহাম্মদ আনিসুর রহমান রিজভি | প্রকাশের সময় : ৩ মার্চ, ২০২২, ১২:১৭ এএম

বর্তমানে আমাদের দেশে বিজাতীয় সংস্কৃতির অনুপ্রবেশ ও আবির্ভাব হয়েছে যা দেশীয় সংস্কৃতি চর্চার ক্ষেত্রে প্রধান অন্তরায় এবং এসব সংস্কৃতি আমাদের তরুণ-তরুণীদেরকে দারুণভাবে প্রভাবিত করেছে। এসব সংস্কৃতি চর্চার মাধ্যমে উঠতি বয়সের তরুণ-তরুণীরা তাদেরকে ইহুদি-খ্রিষ্টানদের সংস্কৃতির চর্চায় অব্যাহত রাখতে সচেষ্ট হচ্ছে ও অপরাধের দিকে পা বাড়াচ্ছে। এসব সংস্কৃতি লালনের মাধ্যমে সহজেই অন্যান্য নির্লজ্জতা ও বেহায়াপনার দিকে ধাবিত হতে উৎসাহিত হবে,নিঃসন্দেহে। র‌্যাগ ডে মূলত পালিত হচ্ছে আমাদের দেশের শিক্ষার সর্বোচ্চ স্থান পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বেপরোয়া ও বিপথগামী তরুণ-তরুণী কর্তৃক তাদের মাস্টার্সের সমাপনী পরীক্ষার দিন বা তারপরের দিনকে নানা ধরনের বেহায়াপনা, উলঙ্গপনা ও গর্হিত অনুষ্ঠান আয়োজনের মধ্য দিয়ে শুরু হয়। এসব দিবসকে কেন্দ্র করে তরুণ-তরুণীরা যা করে বা করছে তা বর্ণনাতীত, অত্যন্ত নিন্দিত ও গর্হিত। এসব নির্লজ্জতা ও বেহায়াপনাকে কোন সুস্থ মস্তিষ্কের অধিকারী ব্যক্তি কখনো মেনে নিতে পারে না। র‌্যাগ ডে’র নাম দিয়ে তারা সেখানে সহপাঠীদের মধ্যে টি-শার্ট বিতরণ, গান-বাজনা, ঢোল-তবলা, রং মাখামাখি, নারী-পুরুষের অবৈধ মেলামেশা, যৌন আচরণ, উদ্ধত চলাফেরা, ইভটিজিং, ব্যভিচারসহ নানা অশ্লীল কর্মকাণ্ড করে থাকে যা ইসলামী শরীয়তের দৃষ্টিতে সম্পূর্ণরুপে হারাম। গত দু-তিন দিন আগে সোশ্যাল মিডিয়াতে যা দেখেছি, তাতে আমিসহ সুশীল সমাজ সকলেই খুবই মর্মাহত। তাইতো, ভারাক্রান্ত হৃদয় নিয়ে লিখতে বসেছি। আর তা হলো, বর্তমানে আমাদের মাধ্যমিক স্তরের স্কুলের উঠতি বয়সী তরুণ-তরুণীরা তাদের স্কুলের শেষ দিনে র‌্যাগ ডে নামের এই বেহায়াপনা ও নির্লজ্জতাকে বেছে নিয়েছে, যা আমাদের জন্য অশনি সংকেত। নিম্নে বিষয়টির আলোকে বিস্তারিত আলোকপাত করার প্রয়াস পাচ্ছি।

“Rag Day”এর শাব্দিক অর্থ:
‘Rag’গোলমাল বা হৈহুল্লোড় আর ‘Day’ শব্দের অর্থ দিন বা দিবস। সুতরাং, “Rag Day” শব্দের অর্থ হৈহুল্লোড়ের দিন বা গোলমাল দিবস। একে ‘টেনা দিন’ও বলা হয়ে থাকে।

A day on which university students do silly things for charity; often the culmination of rag week.

সংজ্ঞাঃ বছরের যে দিনটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের বাৎসরিক হৈহুল্লোড়ের দিন, তাকে টেনা দিন, গোলমাল দিবস বা “Rag Day” বলে।

ব্যাখ্যা: ‘Rag’ শব্দের অর্থ আর স্কুল কলেজের শেষ দিন এক নয়। স্কুল কলেজের শেষ দিন হল সমাপনী। আর র‌্যাগ ডে হলো-ইন্টারনেট ঘেঁটে যতদূর জানা যায়, এটি সম্ভবত গ্রীক কালচার। সপ্তম-অষ্টম শতকে খেলার মাঠে টিম স্পিরিট নিয়ে আসার জন্য র‌্যাগিংয়ের প্রচলন শুরু হয়। র‌্যাগ শব্দটি মূলত ইংরেজি র‌্যাগিং থেকেই এসেছে। আর ইউরোপে প্রচলন ঘটে অষ্টম শতকের মাঝামাঝি। ১৮২৮-১৮৪৫ সালের দিকে র‌্যাগ সপ্তাহের প্রচলন ঘটে আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। বিশেষ করে ছাত্র সংস্থা- পাই, আলফা, বিটা, কাপ্পা এই সপ্তাহটির প্রচলন ঘটাতে বড় ভূমিকা নিয়েছিল।

আমাদের দেশে র‌্যাগ ডে’র প্রচলন:
যদিও এই সংস্কৃতি আমাদের দেশের তথা বাঙালি সংস্কৃতি নয়, তথাপি আমাদের দেশে এই সংস্কৃতি অনুপ্রবেশ করতে মোটেই সময় লাগেনি। এই অপসংস্কৃতি আমাদের দেশে এখন খুব সহজেই সমাজের সকলের কাছে পরিচিত ও জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। তবে আরো মজার ব্যাপার হলো, ইউরোপ-আমেরিকায় এর যাত্রা হলেও বর্তমানে আমাদের এশিয়াতেই এর ব্যবহার সর্বাধিক পরিলক্ষিত হচ্ছে। আমাদের বাংলাদেশ এই গর্হিত কাজকে নিঃসংকোচে ও নির্লজ্জভাবে পালন করে আসছে। অনেকে আবার এটাকে উদযাপন করা সৌভাগ্যের ব্যাপার ও মনে করে থাকে, নাউজুবিল্লাহ।

র‌্যাগ ডে’র ভয়াবহ শাস্তি:
র‌্যাগ ডে’র নাম দিয়ে এভাবে অশ্লীল কাজ ও বেহায়াপনায় মেতে ওঠা ইসলামী শরীয়তের দৃষ্টিতে মারাত্মক অপরাধ যা সম্পূর্ণরূপে হারাম। কোন অবস্থাতেই এসব কাজ কোন মুমিন (মুসলমান) কখনো করতে পারে না; এমন কি এসব কাজের সমর্থন করতে ও পারেন না। এসব অন্যায়, অশ্লীল, বেহায়াপনা ও গর্হিত কাজকে ইসলাম সমর্থন করে না বরং ইসলামের দৃষ্টিতে এটা অত্যন্ত নিন্দনীয়, ঘৃণিত, নিষ্পেষিত, ও মহাপাপ। এসব কাজ থেকে দূরে থাকাই সকলের বাঞ্চনীয়। যারা এসব সংস্কৃতি সাথে মিশে যায় অথবা নিজেদের সংস্কৃতির সাথে এসব সংস্কৃতির মিশ্রণ ঘটায় তারা অপরাধী ও গুনাগার হিসেবে সাব্যস্ত হবে। এটার জন্য তারা জঘন্য পাপী হিসেবে সাব্যস্ত হবে। বিধর্মীদের সংস্কৃতিকে যে লালন করবে সেও ঐ দলের অন্তর্ভুক্ত হবে মর্মে হাদীসে বর্ণিত হয়েছে।
আবু দাউদ শরীফের বর্ণিত হয়েছে,

অনুবাদ: হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু তা›আলা আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, যে ব্যক্তি কোন সম্প্রদায়ের (সংস্কৃতি ও রীতিনীতিতে) সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ সম্পর্ক রাখে, সে ঐ গোত্রের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে। (সুনানু আবু দাউদ: হাদিস নাম্বার: ৪০৩১)

সুতরাং উপযুক্ত হাদিসের আলোকে আমরা বলতে পারি, যারা এই সমস্ত বিকৃত সংস্কৃতির আগ্রাসনের সাথে সম্পর্ক রাখে তারা ইহুদী-খ্রিস্টানদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে এবং জাহান্নামের উপযোগী হবে।

এই সংস্কৃতিগুলো লালন করা জঘন্যতম অপরাধ ও মারাত্মক গুনাহ। এইসব ঘৃণিত ও অশ্লীল কাজ হতে যুবসমাজ তথা আমাদের উঠতি বয়সী তরুণ-তরুণীদেরকে সরাসরি বাধা দেয়ার মাধ্যমে প্রতিহত করতে হবে, তাদেরকে এর কুফল সম্পর্কে খুব ভালোভাবে বোঝাতে হবে। যে কোনভাবেই তাদেরকে কন্ট্রোল করার চষ্টা করতে হবে। অন্যথায় তারা এই সংস্কৃতি ধারণ করে পরবর্তীতে আমাদের যুব সমাজকে বিপথগামী করার চেষ্টা করবে। এসব কুসংস্কার ও অপসংস্কৃতি যারা সাহায্য-সহায়তা করবে তারাও সমান অপরাধী। তাদেরও কঠিন শাস্তির কথা আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামীন কুরআনে কারীমে বর্ণনা করেছেন। যেমন আল্লাহ তা’য়ালা বলেন; অনুবাদ: তোমরা পরস্পর পাপ ও সীমালঙ্ঘনের কাজে একে অপরকে সহযোগিতা করো না এবং আল্লাহকে ভয় করো, নিশ্চয় আল্লাহ কঠিন শাস্তি প্রদানকারী। (সূরা মায়েদা: আয়াত: ০২) (চলবে)

লেখক: সহকারি মাওলানা, চরণদ্বীপ রজভীয়া ইসলামিয়া ফাযিল (ডিগ্রি) মাদরাসা বোয়ালখালী, চট্টগ্রাম।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন