অপরিকল্পিত ড্রেজিং করে নদী থেকে বালু উত্তোলনে বার বার নদী ভাঙনের শিকার চাঁদপুর সদর উপজেলা রাজরাজেশ্বর ইউনিয়ন। তাই বালু উত্তোলন বন্ধে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে। গত শুক্রবার ইউনিয়ন পরিষদের সম্মুখে ও ভাঙনকবলিত আছকা বাজার এলাকার নদী তীরে শত শত নারী, পুরুষ ও শিশু এ মানববন্ধন কর্মসূচিতে অংশ নেন।
বেশ কয়েকবার নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্থ কয়েকজন নারী বলেন, ‘নদী ভাঙতে ভাঙতে আমাদের আর ভিটা মাটি নাই। এখন নদী ভাঙে আর এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় সেই নদীর তীরেই ঘর বানাই। গত দশ বছরে রাজরাজেশ্বর ইউনিয়নে নদী বেশি ভাঙছে। যখন থেকে ড্রেজারে বালু ও মাটি কাটা শুরু হইছে তখন থিকা বেশী ভাঙে। নদীতে এখনো ড্রেজার লাহাইয়া বালু কাটছে। আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ কইরা বলি এ বালু কাটা বন্ধ করেন। নইলে রাজরাজেশ্বর আর পাওয়া যাইবো না। আমরা জেলা প্রশাসকের কাছেও বলি যেন ড্রেজার বন্ধ করা হয়। এতবার নদীতে ঘর ভাঙতে ভাঙতে আর ঘর ওডানের টাকা নাই, দেখেন কেমনে পোলা পাইন লইয়া নদীর লগেই আছি।’
ভাঙনের শিকার আবুল হাশেম বলেন, ‘আমি সরকারের কাছে অনুরোধ করছি- আমাদেরকে বাঁচান, রাজরাজেশ্বর ইউনিয়নকে বাঁচান। আমি অন্তত ১০ থেকে ১২ বার নদীর ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত হইছি। নদী এখন বেশি ভাঙে নদীর থিকা বালু ওঠানে। দেখেন রাজরাজেশ্বরের জায়গা কোথায় ছিল এখন কোথায় আছি আমরা। অনেকগুলা ওয়ার্ড নদীতে চইলা গেছে। ড্রেজিং বন্ধ না করলে আর রাজরাজেশ্বর ইউনিয়নকে রক্ষা করা করা যাবে না।’
ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা ইউনুছ পাটওয়ারী বলেন, ‘আমার বাব-দাদার কবরটাও এখন নদীর মধ্যে। নদী বর্ষা আইলে ভাঙে। তয় এখন আর বর্ষা লাগে না, সব সময় ভাঙে, এর কারণ ড্রেজার। প্রতিদিন শত শত ড্রেজার দিয়া নদীর থিকা বালু কাটা হইতাছে। আর এ কারণে নদী বেশি ভাঙছে। এটা বন্ধ না করলে আমরা কোথায় যামু। নদী ভাঙনরে পর অনেকে পাশের জেলা শরীয়তপুরের তারাবুনিয়ায় গিয়া বাড়ি করছে। কয়েকশত পরিবার এখন শরীয়তপুরে থাকে। ড্রেজিং বন্ধ করে রাজরাজেশ্বরের ২৩ হাজার মানুষকে বাঁচান।’
মানববন্ধন কর্মসূচিতে শফিকুর রহমান বলেন, ‘নদী ভাঙতে ভাঙতে আমাদের রাজরাজেশ্বরে কিছুই বাকি নাই। যাও কিছুটা আছে তা হয়তো কয়েক বছরের মধ্যে থাকবে না, এর প্রধান কারণ নদীতে যত্রতত্র বালু কাটা। নদীতে প্রতিদিন শত শত ড্রেজার দিয়ে বালু কাটা হচ্ছে এতে আমাদের রাজরাজেশ্বর ইউনিয়ন চাঁদপুর জেলার মানচিত্র থেকে একদিন হারিয়ে যাবে।’
এ সময় বাদশা প্রধানিয়া, মোসলেম সর্দার, আনসান আলী সর্দার, মানিক সর্দার, নবীর সর্দার, রহিম বেপারী, রানু আক্তার, আসমা, কমলা বেগম, আসমা খাতুন, সাহেরা বেগম, মরিয়ম খাতুনসহ শত শত নারী পুরুষ ও শিশু মানবন্ধন কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে বলতে থাকে ড্রেজার বন্ধ কর রাজরাজেশ্বরকে বাঁচাও, ড্রেজিং বন্ধ করলে নদী ভাঙন বন্ধ হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন