শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সম্পাদকীয়

ফুটপাথ দখলমুক্ত করার প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ দ্রুত কার্যকর করতে হবে

| প্রকাশের সময় : ৮ মার্চ, ২০২২, ১২:০৬ এএম

ফুটপাথ কার? বলা বাহুল্য, পথচারীর। পথচারীর চলাচলের সুবিধার জন্যই ফুটপাথ নির্মাণ করা হয়েছে। অথচ, রাজধানীর এমন কোনো ফুটপাথ নেই, যা দখল হয়ে যায়নি। কোনো ফুটপাথই উন্মুক্ত নয়, যাতে পথচারীরা নির্বাধে, সহজে চলাচল করতে পারে। ফুটপাথ দখল করে নিয়েছে হকার ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। কাপড়-জামা, জুতা-স্যান্ডেল, মসলাপাতি তরকারি থেকে শুরু করে এমন কোনো জিনিস নেই, যা ফুটপাথে নেই বা পাওয়া যায় না। ফুটপাথ দখল করে বিভিন্ন পণ্যের পসরা সাজানো এবং বিক্রী করার কোনো বৈধ এখতিয়ার কারো নেই। হকার ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা অন্যায়ভাবে বিধি অমান্য করে ফুটপাথে ব্যবসা করছে। তাদের প্রশ্রয় ও সহযোগিতা দিচ্ছে সিটি করপোরেশন, ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী কর্তৃপক্ষের এক শ্রেণীর সদস্য। হকার ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ফুটপাত দখল করে ব্যবসা করার সুযোগ দানের বিনিময়ে বিপুল অংকর চাঁদা আদায় করা হয়। এই চাঁদার অর্থ ভাগ-বণ্টন হয় সিটি করপোরেশন, রাজনৈতিক নেতাকর্মী ও পুলিশের লোকদের মধ্যে। বস্তুত ফুটপাথ দখলকারী হকার ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের পেছনে এইসব শক্তিশালী পৃষ্ঠপোষক ও সহযোগী থাকার কারণে কখনোই ফুটপাথ দখলমুক্ত হয় না। মাঝে-মধ্যে দখলমুক্ত করার জন্য অভিযান চালানো হয় বটে, তবে তা লোক দেখানো। ফটোসেশনের পর অভিযানের আর খবর থাকে না। ফের ফুটপাত হকার ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের কবজায় চলে যায়। এই উচ্ছেদ অভিযানের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বিস্তর অর্থব্যয় হয় এবং উচ্ছেদ টেকসই না হওয়ার সুবাদে সে অর্থের অপচয় ঘটে। দেখেশুনে মনে হয়, কারো যেন কিছু করার নেই। প্রশ্ন হলো, এভাবেই কি চলতে থাকবে? অবশ্যই না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফুটপাথ দখলমুক্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন। সংশ্লিষ্টদের উদ্দেশে বলেছেন, ফুটপাথ দখলমুক্ত রাখতে এবং পথচারীদের চলাচলের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। অন্য একটি বিষয়ও তিনি নজরে এনেছেন। প্লানিংয়ে ত্রুটির কথা বলেছেন। এ সম্পর্কে তাঁর বক্তব্য : আমাদের যারা ইঞ্জিনিয়ার বা আর্কিটেক্ট, যখন তারা কোনো প্লান করবেন অন্তত ফুটপাথটা যেন মানুষের হাঁটার যোগ্য থাকে এবং সেটা যেন দখল না হয়ে যায় সেদিকে দৃষ্টি দিয়েই করতে হবে। আমাদের প্লান করার সময়ই এই ‘সর্বনাশটা’ করা হয়ে যায়।

রাজধানীর ফুটপাথের একটা উল্লেখযোগ্য অংশই নির্মাণ ত্রুটি কিংবা ভুল প্লানিংয়ের কারণে কাজে আসে না। ফুটপাথ তো এমন হতে হবে, যাতে মানুষ স্বচ্ছন্দে ব্যবহার করতে পারে। দেখা যায়, ফুটপাথ কোথাও উঁচু, কোথাও নিচু, কোথাও বা ফুটপাথের মাঝে খোলা জায়গা। আবার দেখা যায়, কোথাও ফুটপাথের প্রস্ত বেশি, কোথাও তা এত সংকীর্ণ যে, দু’জন মানুষও পাশাপাশি পার হতে পারে না। এমনও দেখা যায়, কোনো ফুটপাথ পথচারীরা ব্যবহারই করে না। ওইসব ফুটপাথ ময়লা-আবর্জনার ভাগাড় হিসেবে ব্যবহৃত হয়। মানুষ চলাচল করে রাস্তার পাশদিয়ে, ঝুঁকি নিয়ে। কখনো কখনো একারণে দুর্ঘটনাও ঘটে থাকে। ফুটপাথ কেবল হকার ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরাই নয়, অন্যরাও দখল ও ব্যবহার করে। দোকানের বর্ধিতাংশ হিসেবে ফুটপাথ ব্যবহৃত হয়। ফুটপাথের অংশ বিশেষ বা পুরোটা জুড়ে থাকে দোকানের মাল-সামান। মানুষ পা ফেলার জায়গাও পায় না। কখনো কখনো নির্মাণাধীন বাড়ির বড়-সিমেন্ট-বালি পড়ে থাকে ফুটপাথে। বিভিন্ন সেবাসংস্থার রাস্তা কাটকাটির পর মাটি-কাদা-ইট ইত্যাদিরও জায়গা হয় ফুটপাথ। কোথাও কোথাও রাস্তার একাংশ এবং ফুটপাথ গাড়ি পার্কিংয়ের স্থান হিসেবে ব্যবহৃত হয়। অবৈধ পার্কিংয়ের কারণে রাস্তা সংকীর্ণ হয়ে পড়ায় যান চলাচল ব্যহত হয় এবং যানজটের সৃষ্টি হয়। ঢাকার রাস্তায় যানজটের কোনো ঠিক-ঠিকানা নেই। কখনো কখনো ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানবাহন যানজটে আটকা থাকে। যানজটের কারণে প্রতিদিন শত শত কোটি টাকার ক্ষতি হয়। অসংখ্য কর্মঘণ্টা নষ্ট হয়। মানুষের দুর্ভোগ বিড়ম্বনার তো কথাই নেই। ঢাকা এখন বসবাসের উপযোগী শহর নয়। ময়লা-আবর্জনা, যানজট, পরিবেশের ভয়াবহ দূষণ ইত্যাদি কারণে প্রতিবর্ছ বিশ্বের বসবাসের অযোগ্য শহরের তালিকার শীর্ষে নাম থাকছে ঢাকার। রাজধানী শহর হিসেবেই নয়, দেশের বৃহত্তম ও জনবহুল শহর হিসেবে ঢাকাকে বসবাসের উপযোগী, নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত করার বিকল্প নেই। এইসব লক্ষ্য নিয়ে সরকার কাজ করছে বলে দাবি, তবে সাফল্য তেমন একটা দৃশ্যগ্রাহ্য নয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ঢাকা শহরকে সীমিত শক্তি নিয়েই যতদূর সম্ভব আধুনিকায়ন করা, সবুজায়ন করা ও বসবাসের উপযোগী করার আমরা চেষ্টা করছি। সরকারের এই চেষ্টার সঙ্গে ঢাকা শহরের দায়িত্বশীল সকল সেবাসংস্থা এবং সিটি করপোরেশনসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানকে হাত মেলাতে হবে, সংযুক্ত হতে হবে। যার যার দায়িত্ব সচারুরূপে সম্পাদন করতে হবে। তাহলেই প্রত্যাশিত ঢাকা গড়ে উঠবে। বলার অপেক্ষা রাখেনা, ঢাকাকে চলমান ও গতিশীল রাখতে হবে। মানুষের চলাচল বা যাতায়াত নির্বিঘ্ন ও মসৃণ করতে হবে। এ জন্য ফুটপাথ সম্পূর্ণ দখলমুক্ত করতে হবে। রাস্তার সব বাধা ও প্রতিবন্ধকতা অপসারণ করতে হবে। যেসব কারণে ফুটপাত বা রাস্তা দখল করে অবৈধ ব্যবসা ও কারবার চলছে তা দূর করতে হবে। সিটি করপোরেশন, জনপ্রতিনিধি এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী কর্তৃপক্ষ একাট্টা হয়ে কাজ করলে খুব দ্রুততম সময়ে ফুটপাথ দখলমুক্ত করাসহ রাস্তা নির্বাধ করা সম্ভব হতে পারে। যেহেতু ফুটপাথ হকার ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের দখলে থাকার প্রধান কারণ চাঁদাবাজি, সুতরাং তা পুরোপুরি বন্ধ করতে হবে। এ জন্য সিটি করপোরেশন, ক্ষমতাসীন দল এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী কর্তৃপক্ষকে দায়িত্ব নিতে হবে। আমরা আশা করবো, প্রধানমন্ত্রীর ফুটপাথ দখলমুক্ত করার গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশটি দ্রুত ও যথাযথভাবে কার্যকর করা হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
jack ali ৮ মার্চ, ২০২২, ১১:৫৬ এএম says : 0
মানুষ কি হাওয়া খেয়ে বেঁচে থাকবে ওদেরকে উৎখাত করলে ওরা কিভাবে খাবে তাদের তো একটা ব্যবস্থা করতে হবে
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন