ডা. মাওলানা লোকমান হেকিম
বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ। কৃষি আমাদের প্রাণ। কৃষক আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নের কারিগর। কৃষি খাতে সমৃদ্ধি মানে জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হওয়া। ক্ষুধার বিরুদ্ধে টিকে থাকার লড়াইয়ে জিতে যাওয়া। কৃষি ও কৃষক বাঁচলে বাংলাদেশ বাঁচবে। কৃষিই কৃষ্টি। কৃষিকে ঘিরেই বাঙালি সভ্যতার জাগরণ শুরু। মানুষের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সর্বত্র কৃষির কোনো বিকল্প নেই। উন্নত দেশগুলো আধুনিক প্রযুক্তির কল্যাণে কৃষিতে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটাচ্ছে। কৃষিপ্রধান বাংলাদেশেও কৃষিতে লাগসই প্রযুক্তির ব্যবহার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি) ও বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের হিসাব মতে, বর্তমানে দেশের মোট আবাদি জমির শতকরা ৯০ ভাগ চাষ হয় যান্ত্রিক পদ্ধতিতে। আশির দশক হতে এদেশে কৃষিতে ক্রমান্বয়ে আধুনিকতার ছোঁয়া লাগে। বর্তমানে আমাদের দেশে চাষাবাদে ৩০ প্রকারের আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহৃত হচ্ছে। বিজ্ঞানের কল্যাণে গ্রাম-বাংলার কৃষকের ঐতিহ্যবাহী লাঙ্গল-জোয়াল, মই ও হালের গরুর যুগ এখন শেষের পথে। জমি চাষ, জমিতে নিড়ানি হতে শুরু করে সার দেয়া, কীটনাশক ছিটানো, ধানকাটা, মাড়াই ও শুকানোর কাজ সবই চলে যন্ত্রের মাধ্যমে। ফলে চাষাবাদের খরচ ও সময় কম লাগে, উৎপাদনও আগের তুলনায় বহুগুণ বেড়ে গেছে। বিশ্বে আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি ব্যবহারের র্যাংকিংয়ের প্রথম অবস্থানে রয়েছে বিশ্বের কারখানা খ্যাত চীন। চীনে অসংখ্য আধুনিক কৃষি খামারে প্রায় ৩০০ মিলিয়নের কৃষক কাজ করে। উল্লেখ্য, বাংলাদেশেও অনেক কৃষি যন্ত্রপাতি উৎপাদিত হচ্ছে এবং সেগুলো জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। বাংলাদেশেও ব্রি’র বিজ্ঞানীরা উদ্ভাবনা ও সৃজনশীলতার পরিচয় দিয়েছে। ক্ষুদ্র জমি চাষের জন্য পাওয়ার টিলার, বড় জমি চাষে ট্রাক্টর বা হুইল ট্রাক্টর, বীজ বপন, সার প্রয়োগ ও কীটনাশক ছিটানোর জন্য ব্রডকাস্ট সিডার, নির্দিষ্ট অবস্থানে বীজ বপনের জন্য সিড ড্রিল, গভীরভাবে কঠিন স্তরের মাটি কর্ষণের জন্য সাব সয়লার, ধান/বীজ শুকানোর জন্য ড্রায়ার, ধান, গম, ভুট্রা, শুকানোর জন্য ব্যাচ ড্রায়ার, শস্য কাটার যন্ত্র পাওয়ার রিপার মেশিন, ঝাড়ার যন্ত্র ইউনার কম্বাইন্ড হারভেস্টার প্রভৃতি।
দেশীয় প্রযুক্তি ব্যবহার করে যেসব যন্ত্র পাওয়া যাচ্ছে তা হলো-পাওয়ার টিলার পাওয়ার রিপার, ইউনার, ইউডার (নিড়ানির যন্ত্র), ধান, গম ও ভুট্রা মাড়াই কল ইত্যাদি। এই জন্য সিরাজগঞ্জ, পাবনা, নাটোর, বগুড়া, রংপুর, যশোর, শেরপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সেচপাম্প, ট্রাক্টর ও পাওয়ার টিলারের খুচরা যন্ত্রপাতি তৈরির বেশকিছু কারখানাও গড়ে উঠেছে। পরিসংখ্যান বলছে, দেশে প্রতি বছর গড়ে তিন কোটি টন খাদ্যশস্য উৎপাদিত হয়। উৎপাদন হতে বাজারজাত পর্যন্ত প্রায় ১৪ শতাংশ শস্য বিনষ্ট হয় যার পরিমাণ ৪২ লক্ষ টন। যদি চাষাবাদে আধুনিক প্রযুক্তি পুরোপুরি ব্যবহার সম্ভব হয়, তা হলে এ সমস্যা অচিরেই দূর করা সম্ভব। এদিকে কৃষিকাজে আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহারে ১৭২ কোটি টাকার একটি প্রকল্প নিয়েছে সরকার। এতে দেয়া হবে ৩০ শতাংশ ভর্তুকি। এ ধরনের প্রকল্প সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন। তাই কৃষি যন্ত্রপাতি সুলভ করতে সরকারি বেসরকারিভাবে সর্বাত্মক উদ্যোগ গ্রহণ করা একান্ত প্রয়োজন।
ষ লেখক : চিকিৎসক ও কলামিস্ট
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন