দিলীপ কুমার আগরওয়ালা
বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্টের ঢাকা সফরের পর বাংলাদেশ সম্পর্কে বিশ্বের বৃহত্তম এই দাতা সংস্থার মনোভাবে ইতিবাচক পরিবর্তনের ছটা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। অর্থ বিভাগে পাঠানো বিশ্বব্যাংকের এক পর্যবেক্ষণপত্রে অর্থনৈতিক ঝুঁকি মোকাবিলায় বাংলাদেশের সক্ষমতার প্রশংসা করা হয়েছে অকৃপণভাবে।
বলা হয়েছে, বন্যা-খরাসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগেও বাংলাদেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে সক্ষম। ২০১০ সালের বিশ্বমন্দায়ও এ দেশের অর্থনীতি খুব একটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে সবচেয়ে সম্ভাবনাময় বলে অভিহিত করা হয়েছে বিশ্বব্যাংকের ওই প্রতিবেদনে। এতে বলা হয়, অভ্যন্তরীণ চাহিদা বৃদ্ধির পাশাপাশি সব ধরনের অভ্যন্তরীণ উৎপাদন ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে রফতানি আয়। প্রবাসী আয়ের গতি সামান্য কমলেও রফতানির বিপরীতে আমদানি কমায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ প্রতিনিয়তই বাড়ছে। যাতে বাংলাদেশের অর্থনীতির ভিত শক্তিশালী হয়ে উঠছে ও আর্থিক ঝুঁকি মোকাবিলার ক্ষমতা বাড়িয়ে দিয়েছে।
স্মর্তব্য, বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশ সফরে এসে বলেছিলেন, ২০৩০ সালের মধ্যে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত করতে বাংলাদেশ যে পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে, তা খুব সম্ভাবনাময়। এ জন্য প্রয়োজন সব ধরনের উন্নয়ন কর্মকা-ের ধারাবাহিকতা। উন্নয়নকে টেকসই করতে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা অর্জন যে অত্যন্ত জরুরি সে বিষয়টিও তিনি তুলে ধরেছিলেন বাংলাদেশের নেতাদের কাছে। বলেছিলেন, এক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হলে উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হতে পারে। ব্যাহত হতে পারে সরকারের নেয়া টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের প্রত্যাশা। বিশ্বব্যাংক সভাপতি বাংলাদেশের মানুষের সৃষ্টিশীলতা এবং কর্মঠ মনোভাবের প্রশংসা করেছিলেন উদারভাবে। বলেছিলেন, উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা, প্রশাসনিক সংস্কার, দুর্নীতি কমিয়ে আনা এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার যে প্রেসক্রিপশন বিশ্বব্যাংকের পক্ষ থেকে দেয়া হয় তা খুবই তাৎপর্যের দাবিদার।
২০১৪ সালে আওয়ামী লীগের টানা দ্বিতীয় বারের মতো সরকার গঠনের মাধ্যমে দেশ যে ব্যাপক রূপান্তরের মধ্য দিয়ে গিয়েছে তার ফলে বাংলাদেশ আজ নিম্নমধ্যম আয়ের দেশের কাতারে নিজেদের অবস্থান তৈরি করে নিয়েছে।
২০১৫ সালে দারিদ্র্য ও বেকারত্ব হ্রাস, বহুমাত্রিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণ, সবার জন্য শিক্ষা নিশ্চিতকরণ, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, বিদ্যুতায়নের আওতা বৃদ্ধি, তথ্য প্রযুক্তির বিস্তৃৃতি প্রভৃতি উন্নয়ন পরিলক্ষিত হয়েছে। একই সাথে সহ¯্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যের অধিকাংশ অর্জনের মাধ্যমে বাংলাদেশ বিশ্বের কাছে আজ একটি উদাহরণ। এই সাফল্য টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য প্রণয়নেও ভূমিকা রেখেছে।
উনয়নের এই অভূতপূর্ব দৃষ্টান্তের মূল স্থপতি বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা। তাঁর প্রণীত ‘ভিশন-২০২১’ই দেশের উন্নয়নের মহাযজ্ঞের মূল নকশা। উন্নয়নের সনাতনী ধারা ভেঙে ২০০৯ সাল থেকে জননেত্রী শেখ হাসিনা দেশকে ২০৪১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। ধারাবাহিক উন্নয়ন কর্মকা-ের কারণে বর্তমানে দেশের অধিকাংশ মানুষ জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সন্তুষ্ট। ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে নিয়েলসেন বাংলাদেশের এক জরিপে ৬৭% মানুষ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে। একই সাথে আওয়ামী লীগের ওপরও পুরোনো আস্থা বজায় রেখেছে। এছাড়াও বৃটিশ কাউন্সিল, একশন এইড-বাংলাদেশ ও ইউনিভার্সিটি অফ লিবারেল আর্টসের সমন্বয়ে পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে দেশের ৭৫ শতাংশ তরুণ মনে করে আগামী পনের বছরে আওয়ামী লীগের হাত ধরে দেশ আরো উন্নতি সাধন করবে।
পরিশেষে বলছি, বিশ্বব্যাংকের প্রেসক্রিপশনের যথার্থতা নিয়ে গ্রহীতা দেশগুলোর মধ্যে প্রশ্ন থাকলেও নিজেদের স্বার্থেই যে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও সুশাসনের বিষয়ে যতœবান হতে হবে সে বিষয়ে কোনো দ্বিধা থাকা উচিত নয়।
ষ লেখক : সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি, পরিচালক, এফবিসিসিআই
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন